নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই শুরু যা এখনও চলছে। বাংলায় (Bengal) পা রাখছেন একের পর এক কেন্দ্রীয় বাহিনী (Central Delegate Team)। হিসাব বলছে ২০২১ সালের মে মাস থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বাংলায় এসেছে কেন্দ্রের ২০টি প্রতিনিধি দল। প্রতিটি দলই কার্যত কেন্দ্রীয় প্রকল্পের রূপায়ণ খতিয়ে দেখতে এসেছিল না হয় বাংলার বুকে বিজেপি কর্মীদের অবস্থা খতিয়ে দেখতে এসেছিল। এবার তো একসঙ্গে ১২টি কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হচ্ছে বাংলায় ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে। আর সেই সিদ্ধান্তে কার্যত দুই হাত তুলে উৎফুল্ল হয়ে নাচছেন বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। কিন্তু এবার বঙ্গ বিজেপির অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, এই একের পর এক প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে আখেরে কেন্দ্রের কী লাভ হচ্ছে আর বঙ্গ বিজেপির (Bengal BJP) বা কী লাভ হচ্ছে? সেই তো একের পর এক নির্বাচনে তৃণমূলের বাজিমাত আর বিজেপির জামানত জব্দ। গেরুয়া শিবিরের থেকেও ভাল ফল করছে বামেরা। তাহলে এই সব কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের আগমনে অক্সিজেন কারা পাচ্ছে? বিজেপি না তৃণমূল?
আরও পড়ুন স্বল্প সঞ্চয়ে স্বল্প মেয়াদী প্রকল্প আনছেন মোদি
বাংলায় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের এই ঘন ঘন আগমন কার্যত শুরুই হয়েছে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরে পরেই। সেই সময় মে মাসে দুটি প্রতিনিধি দল এসেছিল বাংলায়। একটি আসে ভোট পরবর্তী সংঘর্ষের ঘটনা খতিয়ে দেখতে এবং অন্য দলটি আসে জাতীয় তফশিল কমিশনের তরফে রাজ্যের দলিত নিগ্রহের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে। তার পরের মাসেই অর্থাৎ জুন মাসে বাংলায় আসে ৩টি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধি দল, জাতীয় তফশিলি উপজাতি কমিশনের প্রতিনিধি দল ও জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের দ্বিতীয় প্রতিনিধি দলটি। পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলায় আসে দুটি দল। একটি এসেছিল ১০০দিনের কাজের প্রকল্প খতিয়ে দেখতে এবং একটি আসে আবাস যোজনার কাজ খতিয়ে দেখতে। মার্চে বকটুই গ্রামে কেন্দ্র সরকার একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হয় সেখানকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে। এপ্রিলে হাঁসখালি ধর্ষণকাণ্ডের জেরে আসে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধি দল। জুলাই মাসে আবার প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনার কাজ খতিয়ে দেখতে বাংলার ১৫টি জেলায় ১৫টি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে পাঠিয়েছিল মোদি সরকার। এখনও পর্যন্ত সেটাই সব থেকে বড় অভিযান হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে বাংলার মাটিতে।
আরও পড়ুন ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই প্রাথমিক টেটের ফল
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলায় একটি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল এসেছিল বিজেপির নবান্ন অভিযানের দিন পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে। আবার ওই মাসেই টিটাগড়ে একটি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল আসে স্থানীয় এক স্কুলে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা খতিয়ে দেখতে। সেই প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিল জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন। আর এবার তো চলতি মাসে গঙ্গাসাগরে আগত তীর্থযাত্রীদের মতো কাতারে কাতারে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল এসেই চলেছে বাংলার বুকে। ইতিমধ্যেই এই মাসে বাংলার ১০টি জেলায় এসে ঘুরে গিয়েছেন আবাস যোজনার কাজ খতিয়ে দেখতে আসা ৫টি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প খতিয়ে দেখতে আসা একটি দল, রেশন দোকান পরিদর্শনে আসা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের একটি দল, মিড ডে মিল খতিয়ে দেখার একটি দল এবং প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনার কাজ খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রের ২টি প্রতিনিধি দল। চলতি মাসেই আবার বাংলায় পা রাখছেন ১২টি কেন্দ্রীয় দল যারা রাজ্যের ১২টি জেলায় গিয়ে খতিয়ে দেখবেন ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প নিয়ে তোলা দুর্নীতির অভিযোগগুলো সত্যি কিনা।
আরও পড়ুন বীরনগর-তাহেরপুর মিশিয়ে নয়া পুরসভার সম্ভাবনা নদিয়ায়
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এত সব কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে আখেরে বাংলার মানুষের কী লাভ হচ্ছে আর বঙ্গ বিজেপিরই বা লী লাভ হচ্ছে? কার্যত এই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরেই। সূত্রে জানা গিয়েছে এই প্রশ্নে কার্যত আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গিয়েছে দল। যারা এই কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর পক্ষে তাঁদের দাবি, এতে রাজ্যের ওপর চাপ বজায় রাখা যাবে, রাজ্য রাজনীতিতে এগিয়ে থাকা যাবে, মানুষের মনে আস্থা জাগানো যাবে, দলের নিচুতলার নেতা থেকে কর্মীরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য উৎসাহ পাবে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে পাল্টা প্রশ্নও উঠেছে। যদি এত লাভই হয় তাহলে তার প্রতিফলন ভোটের বাক্সে কেন দেখা যাচ্ছে না? দলের অফিস খোলার লোক মিলছে না কেন? বুথ কমিটি গড়া যাচ্ছে না কেন? বুথে বুথে ৩০জন দলীয় কর্মীর সন্ধানও মিলছে না কেন? আসলে বঙ্গ বিজেপির নেতাদের একাংশ স্বীকারও করছেন একের পর এক কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পাঠানোই হচ্ছে বঙ্গ বিজেপির নেতাদের মান বাঁচানোর জন্য। সেই কারণেই প্রতিনিধি দল ঘুরে গিয়ে কী রিপোর্ট দিচ্ছে সেটা নিয়ে আর কোনও আগ্রহ থাকছে না খোদ কেন্দ্রীয় সরকারেরই। তাই বাংলার বুকেও তার কোনও প্রতিফলন ঘটতেও দেখা যাচ্ছে না। আগামী দিনেও দেখা যাবে না।