নিজস্ব প্রতিনিধি: নজীরবিহীন ঘটনা ঘটল বাংলার(Bengal) বিধানসভায়। আইনপ্রণয়নের কক্ষে ঝরল রক্ত। আর সেই ঘটনার জেরে সাসপেন্ড হলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সহ ৫জন বিজেপির বিধায়ক। একই সঙ্গে ঘটনার জেরে আহত হয়েছেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান বিধায়ক অসিত মজুমদার। তাঁর নাকের হাড় ভেঙে গিয়েছে। শুভেন্দু সহ বিজেপির ওই ৫ বিধায়ককে বিধানসভার অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে এদিন জানিয়েছেন বিধানসভার অধ্যক্ষ(Speaker) বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্য বিধানসভা(Assembly) রাজ্যের মধ্যে গণতন্ত্রের মন্দির হিসাবেই চিহ্নিত। রাজ্যের সার্বভৌমিকতারও প্রতীক। সেখানেই রাজ্য সরকার আইন প্রণয়ন করে। সেই সঙ্গে বিধানসভাকে রাজ্যের আইনসভাও বলা হয়ে থাকে। অথচ সেখানেই কিনা ঝরল রক্ত। বীরভূম জেলার রামপুরহাট থানার বকটুইয়ের ঘটনা নিয়ে সোমবার রাজ্য বিধানসভায় ২ ঘন্টার আলোচনা চেয়েছিলেন বিজেপির(BJP) বিধায়কেরা। কিন্তু অধ্যক্ষ তা নাকচ করে দিতেই অধিবেশন কক্ষের ওয়ালে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিজেপির বিধায়কেরা। বিজেপির প্রস্তাব নাকচ করার কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ‘আপনারা গত কয়েকদিন ধরে অধিবেশনের কাজ চালাতে সমস্যা তৈরি করেছেন। স্লোগান দিয়েছেন, চিৎকার করেছেন, ওয়াক আউট করেছেন। পুলিশ বাজেটেও আপনারা উপস্থিত থাকেননি।’ কার্যত অধ্যেক্ষের এই বক্তব্যের পরেই বিজেপির বিধায়কেরা ওয়ালে নেমে আসেন। সেই সময় দেখা যায় তৃণমূলের(TMC) মহিলা বিধায়ক ও বিধানসভার মহিলা বিধায়কেরা অধ্যক্ষকে ঘিরে একটা ঘেরাটোপ তৈরি করে ফেলেছেন। বিজেপির বিধায়কেরা সদলবলে এগিয়ে এসে সেই ঘেরাটোপ ভাঙার চেষ্টা করতেই শুরু হয় দুই তরফের হাতাহাতি।
সেই সময় অধ্যক্ষকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা এ রকম আচরণ করবেন না। মহিলাদের ধাক্কাধাক্কি করছেন! এটা উচিত করছেন না। আপনারা মহিলা সিকিউরিটিকে ধাক্কাধাক্কি করছেন। আপনারা সরে যান।’ কিন্তু অধ্যক্ষের সেই নির্দেশ মানা তো বহু দূরের কথা বিজেপি বিধায়কেরা আরও ধ্বস্তাধ্বস্তি ও মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। অভিযোগ উঠেছে সেই সময়েই তৃণমূলের বর্ষীয়ান বিধায়ক অসিত মজুমদারকে বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে মাটিতে ফেলে মারধর করেন বিজেপির বিধায়কেরা। অভিযোগ তুলেছন খোদ অসিতবাবু। তাঁর অভিযোগ, শুভেন্দু ঘুঁষি মেরে তাঁর নাম ভেঙে দিয়েছে। ভেঙেছে তাঁর চশমাও। আবার বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গার জামা টেনে ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিধায়কদের বিরুদ্ধেও। এরপরেই এদিন অধিবেশন চলাকালীন গোলমাল বাঁধানো এবং চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদারকে মারধর করার অভিযোগে শুভেন্দু অধিকারীকে সাসপেন্ড করার প্রস্তাব আনেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়(Biman Banerjee) এরপরই বিরোধী দলনেতা সহ পাঁচ বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ডের নির্দেশ দেন। বিজেপির এই পাঁচ বিধায়ক হলেন শুভেন্দু অধিকারী, মাদারিহাটের বিধায়ক মনোজ টিগ্গা, পুরুলিয়ার বিধায়ক নরহরি মাহাতো, শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ এবং ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মন। এদের সবাইকে অধ্যক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড করেছেন। ফলে বিজেপির এই ৫ বিধায়ক ফের কবে বিধানসভার অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
তবে এই সাসপেনশানের খবর সামনে আসতেই পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারীও। তাঁর দাবি, ‘স্পিকারের সামনেই আমাদের মারধর করা হয়েছে। বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। পরিকল্পনা মাফিক কলকাতা পুলিশের কর্মীদের সাদা পোশাকে অধিবেশন কক্ষের মধ্যে ঢোকানো হয়েছিল। তারাই প্রথমে বিজেপি বিধায়কদের উপর হামলা চালায়। চন্দনা বাউড়ি, তাপসী মণ্ডলের মতো মহিলা বিধায়করাও আক্রান্ত হন। চন্দনার গায়ে পুরুষ পুলিশ নিরাপত্তাকর্মীরা হাত দেন। বিধায়ক শওকত মোল্লা, রহিম বক্সী, তপন চট্টোপাধ্যায়েরা হামলা চালিয়েছেন।’