নিজস্ব প্রতিনিধি: সমস্যা মেরুদণ্ডে। তাই হাত পা নাড়াতে সে অক্ষম। এমনকি শরীরের অর্ধেকতাই তার অচল। ডাক্তারির পরিভাষায় সে ‘৯০ শতাংশ ভিন্নভাবে সক্ষম’। কিন্তু তার মস্তিষ্ক অত্যন্ত সচল। সেই সচলতার নমুনা মিলল মাধ্যমিক পরীক্ষায়। কলকাতার(Kolkata) বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের(Bethune Collegiate School) ছাত্রী শ্রেয়া সাহা(Sreya Saha) মাধ্যমিক(Madhyamik) পাশ করেছে ৮১ শতাংশ নম্বর পেয়ে। সেই সূত্রেই পেয়েছে A Grade। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে শ্রেয়া যে জয় ছিনিয়ে এনেছে সেটা মুখ উজ্জ্বল করেছে তার বাবা-মারও।
আরও পড়ুন এগরা কাণ্ডের জেরে পুলিশের ধরপাকড়ে ক্ষুব্ধ আতশবাজি ব্যবসায়ীরা
জানা গিয়েছে, জন্মের পরই শ্রেয়ার শরীরে ধরা পড়েছিল নার্ভের এক বিরল রোগ। শ্রেয়ার বাবা সঞ্জয় সাহার নিমতলা ঘাট স্ট্রিটে ছোট একটি মুদির দোকান আছে। একমাত্র সন্তানকে ঠিক করে তুলতে চিকিৎসার ত্রুটি রাখেননি তাঁরা। এ রাজ্য তো বটেই ভেলোরের ক্রিশ্চান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও নিয়ে গিয়েছিলেন মেয়েকে। কিন্তু কিছু লাভ হয়নি। শ্রেয়ার জীবন বন্দি হয়ে হুইল চেয়ারের মধ্যেই। বেথুন কলেজিয়েট স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি থেকে পড়ছে শ্রেয়া। হুইল চেয়ারে বসেই ক্লাস করেছে সে। তবে ক্লাসে তার সঙ্গে থাকত তার মা জোনাকি সাহা। মেয়ের পাশে বসেই ক্লাসের নোটি নিতেন তিনি। টানা দশ বছর ধরে এইভাবেই পড়াশোনা করেছে শ্রেয়া। এবছর সে বসেছিল মাধ্যমিকে। নিয়েছিল Writer-ও। এখন তার এহেন সাফল্যে গর্বিত গোটা স্কুলও। এই স্কুলেই Arts নিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হতে চায় শ্রেয়া।
আরও পড়ুন মুখ্যমন্ত্রীর Diploma Doctor’র পথে নেই আইনি বাধা
শ্রেয়ার এই সাফল্যের অন্যতম ভাগীদার তার মা জোনাকি সাহা। মেয়ের সাফল্যে তাই চোখের জলের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে তাঁর। তবুও হাসিমুখে জানিয়েছেন, ‘ক্লাসে যা পড়ানো হত মেয়ের পাশে বসে আমি সেগুলির নোট নিতাম। ওর কোনও গৃহশিক্ষক নেই। আমিই পড়িয়েছি। ও ভালো ফল করেছে। আমরা আর কিছু চাই না।’ বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষিকা তানিয়া মৈত্র জানিয়েছেন, ‘শ্রেয়া পড়া না করে কোনওদিন স্কুলে আসেনি। আমরা এমন ছাত্রীর জন্য গর্বিত। আমরা চাই ও আগামী দিনে সবার মুখ উজ্জ্বল করুক।’