নিজস্ব প্রতিনিধি: গ্রামে পরিষেবা দেওয়ার জন্যে তিন বছরের Diploma Doctor তৈরি করা যায় কিনা, বিশেষজ্ঞদের সে সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। সেই প্রস্তাব ঘিরে স্বাস্থ্যমহলের বড় অংশে তৈরি হয়েছে ঘোর বিরোধিতা। এর প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি তার আইনি বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের একাংশ থেকে রাজ্যের চিকিৎসক মহলও। কিন্তু এবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাই জানিয়ে দিলেন, মুখ্যমন্ত্রী যা চেয়েছেন অর্থাৎ Diploma Doctor’র মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান, সেই ক্ষেত্রে কোনও আইনি সমস্যা হবে না। কেননা কেন্দ্রীয় আইনেই গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবক তৈরির পথ এক্ষেত্রে মসৃণ করে রাখা আছে। খালি রাজ্যকে কিছু শর্ত মানতে হবে।
আরও পড়ুন ১২ বছর পূর্ণ প্রথম শপথের, ট্যুইটে বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, ২০১৯’র National Medical Commission Act’র ৩২ নম্বর ধারাতেই Community Health Provider বা CHP তৈরির সংস্থান রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবের সঙ্গে এর কোনও ফারাক নেই। ওই ধারার তিনটি উপধারায় Community Health Provider তৈরির বিষয়ে বলা হয়েছে, চিকিৎসার মধ্যবর্তী পর্যায় পর্যন্ত CHP-দের সীমিত ডাক্তারি করায় National Medical Commission বা NMC’র অনুমতি দিতে বাধা নেই। তবে মানতে হবে কিছু শর্ত। প্রথম শর্ত অবশ্যই তাঁরা সবাই Modern Medicine অ্যালোপ্যাথি মতে রোগী দেখবেন। তবে তাঁরা কতটা ‘ডাক্তারি’ করতে পারবেন, অর্থাৎ তাঁদের চিকিৎসার সীমানা কতটা, তা নির্ধারণ করে দেবে কমিশনই। তৃতীয় শর্ত, একটি রাজ্যে কতজন CHP থাকতে পারবেন, তা নিয়েও দিকনির্দেশ রয়েছে National Medical Commission Act-এ। তাতে বলা হয়েছে, এই সংখ্যা কখনওই সংশ্লিষ্ট রাজ্যে থাকা MBBS পাশ চিকিৎসকদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি হবে না। চতুর্থ শর্ত এই CHP-দের রাজ্য মেডিকেল কাউন্সিলের পাশাপাশি NMC’র জাতীয় স্তরের রেজিস্টারে নথিভুক্ত থাকতে হবে। পঞ্চম শর্ত, এরা নির্দিষ্ট কিছু সাধারণ রোগের চিকিৎসায় নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ লিখতে পারবেন প্রেসক্রিপশনে। তবে নিজে থেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইরে স্বাধীন ভাবে রোগী দেখে প্রেসক্রিপশন লিখতে পারবেন না। এই পরিধির বাইরে রোগী দেখে প্রেসক্রিপশন লিখতে হলে তা করতে হবে MBBS পাশ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে। ষষ্ঠ শর্ত, CHP-দের রোগী দেখার ক্ষেত্রে Emergency’র কোনও স্থান নেই। তাঁরা চিকিৎসা করবেন মূলত প্রাথমিক ও প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়।
আরও পড়ুন নিজাম প্যালেসে অভিষেক, শুরু জিজ্ঞাসাবাদ
উল্লেখ্যম, মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবের বাস্তব ভিত্তি খতিয়ে দেখতে প্রবীণ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি এই নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করছে। সেই কমিটির সদস্যরাও জানিয়েছেন, তাঁরাও NMC’র ৩২ নম্বর ধারা মেনেই মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন। তিন বছরের ক্লাসরুম ও প্র্যাকটিক্যাল প্রশিক্ষণের পর গ্রামাঞ্চলে একেবারে প্রাথমিক স্তরে রোগী দেখতে পারবেন প্রস্তাবিত গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবকরা বা CHP’রা। তবে প্রেসক্রিপশনের অধিকার তাঁদের কতটা দেওয়া হবে, তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। পাশাপাশি তাঁদের এটাও অভিমত যে, রাজ্যের চিকিৎসক মহল থেকে যতই বিরোধিতা আসুক, মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব বাস্তবায়িত করার রসদ রয়েছে National Medical Commission Act -এ।