নিজস্ব প্রতিনিধি: ভালবাসার কোনও সীমান্ত হয় না। হয় না ধর্মের ভেদাভেদ। জাতিগত ফারাকও সেখানে তুচ্ছ। একই রকম ভাবে সমপ্রেমও ডানা মেলেছে বিশ্বের বাতাসে। প্রেমের পরিণতি হিসাবে যদি বিয়েটাই না হয় তাহলে সেই প্রেমও অনেকের কাছেই অপূর্ণ থেকে যায়। সমপ্রেমীদের বার বার সেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। অদ্ভত এই দেশ। নারী পুরুষ বিবাহে বাধা নেই, কিন্তু দুই পুরুষ বা দুই নারীর বিয়েতেই যত বাধা। কিন্তু প্রেম কবে বাধা মেনেছে। সে তো সব বাধা ছাড়িয়ে এগিয়ে চলার পথকেই বেছে নেয়। এদেশেও তাই হচ্ছে। একাধিক রাজ্যে একাধিক মামলা দায়ের হচ্ছে হাইকোর্টে হাইকোর্টে। তাতে আর্জি একটাই, বিয়ে করতে চাই। সেই বিয়েকে আইনসন্মত করুন রায় দিয়ে। সর্বশেষ মামলা দায়ের হয়েছে যে যুগলের মাধ্যমে তাঁদের একজন বাঙালি। আমাদের এই বাংলারই ছেলে। নাম তার সুপ্রিয় চক্রবর্তী। সুপ্রিয়(Supriya Chakrabarty) আর তার জীবনসঙ্গী অভয় ডাং যে মামলা দায়ের করেছেন সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলার সূত্রেই এবার সুপ্রিম কোর্ট(Supremew Court) এই একই বিষয়ে দেশের বিভিন হাইকোর্টে জমে থাকা মামলাগুলিকে একসঙ্গে শুনতে চাইছে। সেই সূত্রেই তাঁরা এবার কেন্দ্র সরকারকে দ্রুত সমলিঙ্গের বিয়ে(Same Sex Marriage) নিয়ে তাঁদের মতামত জানাতে বলল।
আরও পড়ুন ঘর ঘর মোদি, হর ঘর ডিশ টিভি, বঙ্গে বিপ্লব
জানা গিয়েছে, সমলিঙ্গ বিবাহ নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাইকোর্টে জমে থাকা এই সংক্রান্ত যাবতীয় মামলা আগামী মার্চ মাসে শুনবে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি পিএস নরসিমহা এবং বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালার ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাঁদের মতামত জানাতে হবে। একই সঙ্গে দেশের সব হাইকোর্টে জমে থাকা সমলিঙ্গ সংক্রান্ত যাবতীয় মামলা শুনতেও রাজি হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। মামলার আবেদনকারীরা সুপ্রিম কোর্টকেই এই মামলাগুলি শোনার আর্জি জানিয়েছিলেন। মামলার সমস্ত আবেদনকারীর নাম নথিভুক্ত করার জন্যও কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, ভারতীয় সংবিধান ৩৭৭ ধারাকে প্রত্যাহার করে সমকামিতাকে ‘অপরাধ’-এর তকমা থেকে মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু, ৩৭৭ ধারার প্রত্যাহার সাংবিধানিক ভাবে সমকামী মানুষদের অস্তিত্বকে স্বীকার করে নিলেও দৈনন্দিন অপমান থেকে তাঁদের মুক্তি দেয়নি। নানা জায়গায় বিভিন্ন সময়ে সমকামীদের নির্যাতন এবং আক্রমণের অভিযোগ উঠেছে। সব থেকে বড় কথা সমপ্রেমী পুরুষ ও মহিলাদের বিয়েকে কিছুতেই আইনী স্বীকৃতি দিতে চাইছে না কেন্দ্রের সরকার।
আরও পড়ুন ভারতে খুলবে অক্সফোর্ড,স্ট্যানফোর্ডের ক্যাম্পাস, সৌজন্যে প্রধানমন্ত্রী
কিছুদিন আগেই কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন মোদি সরকারের(Modi Government) মন্ত্রী সুশীল মোদি(Susil Modi) এই প্রসঙ্গে শুধু যে বিয়ের বিরোধিতা করেছিলেন তাই নয়, সংসদে দাঁড়িয়ে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদেরও। বলেছিলেন, ‘তথাকথিত কিছু উদারপন্থী এ বিষয়ে অন্ধ ভাবে পশ্চিমী সংস্কৃতি অনুকরণ করতে চাইছে। সমলিঙ্গে বিয়ে সামাজিক বন্ধন ছিন্ন করবে। শুধু বিচারবিভাগের হাতে এ সংক্রান্ত দায়িত্ব ন্যস্ত না করে সংসদে বিষয়টি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ বিতর্কেরও প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। মাত্র দু’জন বিচারপতি মিলে এমন গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ভারতীয় সামাজিক মূল্যবোধ সমলিঙ্গ বিয়ে অনুমোদন করে না। এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া বিচারবিভাগের এক্তিয়ারে পড়ে না।’ কিন্তু ঘটনা হচ্ছে সুশীল মোদি যাই বলে থাকুন না কেন বা কেন্দ্র সরকার এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টকে যাই জানাক না কেন, দেশের আইনজীবী মহলের দাবি, মোদি সরকার যে অবস্থানই নিক না কেন, দেশের প্রান্তিক শ্রেনীর মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার দেওয়ার স্বার্থে সুপ্রিম কোর্ট কখনই পিছু পা হবে না। বাস্তবে সেটাই দেখা যাচ্ছে।