নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সরা, যার ওপর ফুটে ওঠে নানা রঙিন বৈচিত্র। যাকে আমরা পটচিত্রও বলি। কিন্তু এই প্রতিটি লক্ষ্মী সরার আঁকায় থাকে আলাদা আলাদা নিয়ম ও মত, সর্বোপরি আলাদা আলাদা ঘটনা। ওপার বাংলায় মূলত এই লক্ষ্মী সরার প্রচলন। তবে মুসলিম সমাজেও এর ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। মাটির তৈরি এক গোলাকার ঢাকনা বা পাত্র বানানো হয়। যার সমতল ও মসৃণ দিকটিতে আঁকা হয় মা লক্ষ্মী। তবে নিয়ম অনুসারে আসে তাতে রদবদল।
বৈষ্ণব, শাক্ত ও শৈব মত অনুসারে সরায় নানা রঙ আর তুলির টানে ফুটিয়ে তোলা হয় নানা দেব দেবীর চিত্র। শুধু তাই নয় সরার আকার ও ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে সেগুলিকে নানা ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- লক্ষ্মীসরা, ধূপসরা, আঁতুড়সরা, গাজির সরা, মহরম সরা প্রভৃতি।
পূর্ববঙ্গে প্রধাণত সরাতেই লক্ষ্মীপুজো হয়ে থাকে। লক্ষ্মীপুজো মূলত পূর্ববঙ্গের এক বিশেষ পুজো। সেখানকার বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্নরকম লক্ষ্মী সরার প্রচলন দেখা যায়। শুধু তাই নয় যেহেতু তিনি ধন, সম্পদের দেবী তাই তাঁর পুজোয় কলার পেটোয় তৈরি নৌকা।
বিভিন্ন শস্যদানা ও সোনা-রুপা দিয়ে সাজিয়ে দেবীর পূজায় দেওয়া হয়। একে সপ্ততরী নৌকা বা বাণিজ্যের নৌকাও বলে। পূর্ববঙ্গের ঢাকা, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ ইত্যাদি এলাকায় কুম্ভকারদের ঘরে এই সরা আঁকা হত।
লক্ষ্মীসরার নানাবিধ প্রকারভেদ আছে। যেমন- ফরিদপুরি সরা, সুরেশ্বরী সরা, গণকা সরা, আচার্যী সরা ইত্যাদি। ফরিদপুরি সরা প্রচলিত হয় ফরিদপুর থেকে। এই সরায় মাঝে থাকেন মা লক্ষ্মী দুই পাশে থাকেন তাঁর সহচরী জয়া ও বিজয়া, উপরে থাকেন লক্ষ্মী নারায়ণ নীচে থাকেন পেঁচা ও ময়ূর। মা লক্ষ্মীর হাতে থাকে গাছকৌটো। ফরিদপুরের একটি গ্রাম সুরেশ্বরে সুরেশ্বরী সরার উৎপত্তি। এই সরায় মূলত মা দুর্গা সপরিবারে থাকেন। নীচে থাকেন মা লক্ষ্মী। আচার্য ও গণকরা অতীতে এই সরা আঁকতেন তাই এর এমন নামকরণ। ঢাকাই সরার উপরে থাকেন লক্ষ্মী নারায়ণ, নীচে নৌকায় লক্ষ্মী ও তাঁর সহচরীরা থাকেন।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই এখন সরার পরিবর্তে মাটির মূর্তিতে পুজা প্রচলন করেছেন কিন্তু শস্য শ্যামলা গ্রামবাংলার এ এক অন্যতম পূজা। তবে মাটির মূর্তিতে পুজো হলেও সরায় প্রাচীন লোকশিল্পের ছোঁয়া আজও অকৃত্তিম।