এই মুহূর্তে




মুসলিম ভোগে শুরু পুজো ! নেই আরতি ও পুষ্পাঞ্জলি ! জানেন কী ‘কোদাখাকি দুর্গার’ অজানা কাহিনী

courtesy google




নিজস্ব প্রতিনিধি : পুজোর গন্ধে ভরে উঠেছে আকাশ-বাতাস। চারিদিকে একটাই স্বর মা আসছে..। এদিকে ছেলেমেয়েদের নিয়ে মর্ত্যে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন উমা। প্রত্যেক বছর মায়ের আগমনীর অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকে ভক্তরা। দুর্গা পুজো এলেই মনে পড়ে বনেদি বাড়ির পুজোর কথা। বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে বনেদি বাড়ির পুজো। সময় বদলালেও বর্তমানে এখনও সেই জৌলুস, ধারা বজায় রয়েছে। তেমনই হিন্দু-মুসলমানের সম্প্রীতির অন্যতম আদর্শ উদাহরণ হল রঘুনাথগঞ্জের জোতকমল বহুরা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো। এবছর এই পুজো ৩৫৭ বর্ষে পা দিল।

বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে দেবী ‘কোদাখাকি দুর্গা’ নামে পরিচিত।আজও প্রাচীন রীতি মেনে আজও রঘুনাথগঞ্জের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের কোদাখাকি দুর্গার পুজো হয়। তবে অবাক করা বিষয় হল দেবীর ভোগে। কেননা দেবীর ভোগ আসে মুসলিম পরিবার থেকে। এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে দীর্ঘ এক ইতিহাস। এই বাড়ির পুজো মনে করিয়ে দেয় ৩৫০ বছর আগের ঘটনা।

ইতিহাস : একসময় রঘুনাথগঞ্জের গিরিয়া-সেকেন্দ্রা ছিল ঘন জঙ্গলে ঘেরা। জঙ্গলে তখন ডাকাতদলের বসবাস। জঙ্গলের ভিতর ডাকাতরা পুজো করত দেবী দুর্গার। একদিন জমিদারির কাজের তদারক সেরে জোতকমলের জমিদার শরৎচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় গিরিয়া-সেকেন্দ্রার ঘন জঙ্গলের ভিতর থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। তখন তিনি জঙ্গলের মধ্যে ডাকাতদের দেবী দুর্গার মূর্তি দেখতে পান। কথিত আছে, সেই রাতে জমিদার শরৎচন্দ্রকে স্বপ্নাদেশ দেন দেবী। তাঁর বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হতে চান তিনি। দেবীর আদেশে জঙ্গল থেকে ডাকাতদের পূজিত দেবী দুর্গার মূর্তি নিয়ে আসা হয়। শুরু হয় আয়োজন। তবে মুশকিল হয় পুজোর ভোগে। কিছুতেই তুষ্ট হন না দেবী। পুজোয় কোনরকম খামতি নেই অথছ দেবী তুষ্ট না হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েন জমিদার শরৎচন্দ্র। বারবার দেবী স্বপ্নাদেশ দিতে থাকেন তিনি তুষ্ট নন।

একদিন দেবী স্বপ্নাদেশ দেন, কোনও মুসলিম পরিবারের মহিলার হাতের ভোগ চান তিনি। এতেই তিনি তুষ্ট হবেন। এদিকে জমিদার মশাই তো আরও চিন্তিত হয়ে পড়লেন। কোন মুসলিম পরিবার আদেও কী ভোগ দিতে রাজী হবে ? এই প্রশ্ন গুলো ঘুরপাক খেতে থাকল জমিদারের মনে। অবশেষে উপায় না দেখে গেলেন এক মুসলিম পরিবারে।

সেই সময় বহুরা গ্রামে বাস করতেন এক বিধবা মুসলমান মহিলা। তিনি সকলের কাছে লোকাইয়ের মা হিসাবে পরিচিত ছিলেন। জমিদার শরৎচন্দ্র তখন লোকাইয়ের মায়ের শরণাপন্ন হন। জমিদার দেবীর ইচ্ছার কথা জানালে দারিদ্রতার কারণে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। সেই রাতে দেবী দুর্গা স্বপ্নাদেশে লোকাইয়ের মাকে তাঁর হাতে কোদার নাড়ু খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। দেবীর ইচ্ছা পূরণে ঘন জঙ্গলের ভিতর থেকে কোদার খুঁদ সংগ্রহ করে আনেন তিনি। কোদার খুঁদের নাড়ু তৈরি করে লোকাইয়ের মা নিবেদন করনে দেবীর সামনে। সেই ভোগ পেয়ে তুষ্ট হন দেবী। সেই থেকে আজও বহুরা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দেবী দুর্গা ‘কোদাখাকি দুর্গা’ বা ‘নাড়ুখাকি দুর্গা’ বলে পরিচিত।

প্রাচীন রীতি মেনে আজও এই পরিবারের দেবীর পুজোয় কোনও মুসলিম পরিবারের প্রথম ভোগ দেবীকে নিবেদন করা হয়। অন্যরা দেবীকে ভোগ উৎসর্গ করে থাকেন। ডাকাতদের প্রচলিত পুজো বলে এই পুজোতে আরতি ও পুষ্পাঞ্জলি নেই। যদিও পাঁঠা বলি হয় আজও। পুজোর কটাদিন সব সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে আনন্দে মেত ওঠে।

উল্লেখ্য, বন্দ্যোপাধ্যায়দের আদি বাড়ি ছিল মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি ব্লকের মণিগ্রামে। বহুকাল আগে গোটা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার সাগরদিঘির মণিগ্রাম ছেড়ে চলে আসেন রঘুনাথগঞ্জ দু’নম্বর ব্লকের জোতকমল গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষ্মীজনার্দনপুর বহুরা গ্রামে। এই বাড়ির দুর্গা পুজোয় দেবীর প্রথম ভোগ নিবেদিত হয় কোনও মুসলমান পরিবারের থেকে। এবছর এই পুজো ৩৫৭ বর্ষে পদার্পণ করল। কোদাখাকি দুর্গাপুজো হিন্দু মুসলিমের সম্প্রীতি বহন করে চলেছে আজও।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

দেবী লক্ষ্মী আসলে কে ? জানেন কী কীভাবে জন্ম হয়েছিল নারায়ণীর

রাজ্যে দুর্গাপুজোয় মদ বিক্রিতে আবগারি দফতরের আয় বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ

Lakshmi Puja : এই মন্ত্র পাঠ করলে ভক্তের ওপর সদা সর্বদা প্রসন্ন থাকবেন মা লক্ষ্মী

জানেন কী কার অভিশাপে দেবী লক্ষ্মীকে আশ্রয় নিতে হয়েছিল সমুদ্রগর্ভে?

নাচতে নাচতে মৃত্যু, দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের মিছিলে করুণ পরিণতি যুবকের

বাবার খুনি ধরতে পুলিশে চাকরি মেয়ের, ২৫ বছর বাদে পাকড়াও করলেন কিলারকে

Advertisement

এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর