নিজস্ব প্রতিনিধিঃ শিশিরের ঘোমটা দেওয়া পৌষ মাস। আর পৌষ মাস মানেই খেজুরের রস আর নলেন গুড়। এই নলেন গুড়ে সুবাসিত পিঠে-পুলি, রসগোল্লা ছাড়াও জয়নগরের মোয়ার স্বাদ বাঙালির মনে প্রাণে ছোঁয়া দিয়ে যায় প্রতি শীতেই। কিন্তু এবছর শীত আসলেও জয়নগরের বিখ্যাত মোয়া সেভাবে মিলছে না। কারণ মূল উপকরণ কনকচূড় ধানের খইয়ের অভাব।
ইতিমধ্যেই জয়নগরে শুরু হয়ে গিয়েছে মোয়ার বাজার। কিন্তু মোয়ার বাজারে আগের মত জয়নগরের প্রসিদ্ধ মোয়া পাওয়াই দুস্কর। কারিগরদের দাবি, মোয়া তৈরিতে কনকচূড় ধানের যে খই লাগে তা মিলছে না। অতিরিক্ত বর্ষার কারণে নষ্ট হয়েছে ধান জমি। যে ধান আগে মিলত ৬০০ টাকায় এখন তার দাম দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০০০ টাকার কাছাকাছি। কিন্তু সেই অতিরিক্ত দাম দেওয়ার পরেও মিলছে গুণগতমান সম্পন্ন ধান ও খই। শুধু তাই নয় জয়নগরের মথুরাপুর, মন্দিরবাজার সহ বেশ কিছু জায়গায় এই বছর অতিবর্ষণের জেরে তেমনভাবে কনকচূড় ধান চাষ হয়নি। ফলে কনকচূড় ধানের খই মেলাই দুস্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে মোয়া প্রস্তুতকারকদের কাছে।
শীতের শুরুতেই বিভিন্ন খেজুর গাছ থেকে খজুর রস সংগ্রহ করেন শিউলিরা। তারপর সেই তা আগুনে ফুটিয়ে তৈরি হয় নলেন গুড়। এরপর এই নলেনগুড়, কনকচূড় ধানের খই ও অন্যান্য উপাদান দিয়ে বানানো হয় জয়নগরের মোয়া। প্রতিবছর শীতকালে নলেনগুড়ের তৈরি বিভিন্ন জিনিসের চাহিদা থাকে তুঙ্গে আর তাই প্রত্যেক বছরই ভোর থেকেই শিউলিরা বেরিয়ে পড়েন খেজুর গাছের রস সংগ্রহে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গুড়ের গুণগত মান বাড়ে আর তাই সুস্বাদু হয় মোয়া। জয়নগরের মোয়ার বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে দাম বাড়িয়েছেন মোয়া বিক্রেতারাও। এইবছর মোয়ার দাম ধার্য হয়েছে ৮ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত।
গতবছর বাকি সবার মতই করোনার কারণে লাভের মুখ দেখেনি মোয়া ব্যবসায়ীরা। এই বছর বাজার ভালো হবে এই আশায় বুক বেঁধেছিলেন তাঁরা। কিন্তু প্রয়োজনীয় সামগ্রী অর্থাৎ কনকচূড় ধানের খইয়ের জোগান ঠিক না থাকার ফলে চাহিদামত সরবরাহ করতে পারছেন না তাঁরা। শুধু রাজ্যেই নয় জয়নগরের মোয়ার বিশ্বজোড়া খ্যাতি। অনলাইনে বসেই অর্ডার দেওয়া যাচ্ছে জয়নগরের মোয়া আর তাই বাইরের দেশে অর্থাৎ সৌদি আরব, লন্ডন, আমেরিকাতে মিলছে বাংলার এই বিশেষ খাবার। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন জয়নগরের মোয়ার জন্য জিআই স্বীকৃতির আবেদন করা হবে। যদিও জয়নগরের বিখ্যাত মোয়া মূলত তৈরি হয় জয়নগর সংলগ্ন বহড়ুতে।