বরণ শেষে সিঁদুর খেলা
থাকবে মনে বিদায় বেলা,
আজ সিঁদুরে-সোহাগে
রাঙা জীবন…
নিজস্ব প্রতিনিধি: সিঁদুর খেলার প্রাথমিক ইতিহাস সম্পর্কে সেভাবে জানা যায় না। তবে ধারণা করা হয়, বিজয়ার পর সিঁদুর খেলা আনুমানিক ৪০০ বছর আগে শুরু হয়েছিল। যেসময় মানুষ সবেমাত্র দুর্গাপূজা উদযাপন করতে শুরু করেন। হিন্দু ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজো। কয়েক দিনব্যাপী এই পুজোয় পালিত হয় নানা রকমের আচা-অনুষ্ঠান। এরমধ্যে অন্যতম বিজয়া দশমীর দিন সধবা মহিলাদের দেবী বরণ এবং সিঁদুর খেলা। এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, সিঁদুর কী শুধুমাত্র শৃঙ্গার বা খেলার জিনিস? মোটেই তা নয়, পৌরাণিক সূত্র ধরে দেখলে এর অর্থ অনেক গভীরে।
হিন্দু নারীরা লাল বর্ণের সিঁদুর কপালে পড়েন কেন? কারণ লাল বর্ণ হল উর্বরাশক্তির প্রতীক। অপরমতে লাল রঙ হল সৃষ্টিরও প্রতীক। তাই প্রাচীনকালে লাল সিঁদুরকে ভারতীয় নারীরা বেছে নিয়েছিলেন তাঁদের অন্যতম প্রসাধন হিসেবে। আর বিবাহিতা মহিলাদের কপালে সিঁদুর থাকার অর্থ হল তাঁরা সন্তান ধারণের উপযুক্ত। এই বিশ্বাস থেকেই লাল রঙের সিঁদুর পড়ার রীতি চলে আসছে।
পৌরাণিক শাস্ত্রমতে মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে বিভিন্ন দেবতার অধিষ্ঠান। যেমন আমাদের কপালে থাকেন স্বয়ং ব্রহ্মা, তিনি আবার সৃষ্টির দেবতা। তাই ব্রহ্মাকে তুষ্ট করতেই কপালে লাল সিঁদুর পড়েন সকলে। শক্তির সাধক কাপালিক বা পুরুষরাও কপালে রক্তবর্ণ সিঁদুর ধারণ করে থাকেন। আসলে ব্রহ্মা কে তুষ্ট রাখার জন্যই এই ব্যবস্থা। অপরদিকে প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্র মতে নারী হল শক্তি, সেই শক্তিকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য সিঁদুরের ব্যবহার শুরু হয়।
তবে কী বিবাহিত মহিলারাই কপালে সিঁদুর দিতে পারেন? না এটা ঠিক নয়, প্রাচীন শাস্ত্র মতে অবিবাহিত বা কুমারী মহিলারাও কপালে সিঁদুরের টিপ দিতে পারে। তবে বিবাহিত মহিলাদের মতো সিঁথিতে সিঁদুর না দিলেই হল। কারণ সব মহিলাই শক্তির উৎস। সিঁদুরের ব্যবহারে মহিলাদের সম্মান বাড়ে বই কমে না। দুর্গাপুজোর শেষে সিঁদুর খেলার তাৎপর্য হচ্ছে সিঁথির সিঁদুরের স্থায়িত্ব। অর্থাৎ, স্বামীর দীর্ঘজীবন কামনা করেই সধবা মহিলারা পান ও সিঁদুর দিয়ে দেবী বরণ করেন এবং সেই সিঁদুর একে অপরের কপালে ছুঁইয়ে দেন স্বামীর মঙ্গল কামনায়।
এভাবেই পালিত হয় বিজয়ার তাঁদের সিঁদুর খেলা। তবে বিগত দুই বছর ধরে করোনা অতিমারীর জেরে এই সিঁদুর খেলার উপর আরোপ করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তবে এবছর কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে যাদের করোনা টিকার দুটি ডোজ নেওয়া আছে তাঁরা অল্প সময় সিঁদুর খেলতে পারবেন তবে দূরত্ববিধি মেনে।