নিজস্ব প্রতিনিধি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘দেবতারে প্রিয় করি, প্রিয়েরে দেবতা।’ বেশিরভাগ ভারতীয়র জীবন ও চেতনাকে এই কয়েকটি শব্দে ধরেছিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ভক্তির দেশ ভারত, সেখানে মহান মানুষদেরকে দেবতার আসনে বসিয়ে পুজো করার চল রয়েছে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর (Netaji Subhash Chandra Bose) ছবি নিয়েও হয় পুজো। বাঁকুড়ায় গঙ্গাজলঘাটি এলাকার এক পরিবারের ঠাকুরঘরে একটি কাঠের চেয়ারে নেতাজির ছবি রেখে নিত্যদিন পুজো করা হয় সুভাষচন্দ্র বসুকে। জানা যায়, ১৯৪০ সালের ২৮ এপ্রিল বাঁকুড়ায় (Bankura) এসে ওই কাঠের চেয়ারে (Chair) বসেছিলেন নেতাজি। ‘দেশনায়কের’ স্মরণে তাই প্রতিদিন অন্যান্য দেবতাদের সঙ্গে তাঁকেও ফুল দিয়ে পুজো করেন বাঁকুড়ার একটি পরিবার।
১৯৪০ সালের ২৮ শে এপ্রিল। সেদিনই প্রথমবার বাঁকুড়ায় আসেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটিতে সেদিন এক সভা করেছিলেন দেশের সিংহভাগ মানুষের প্রিয় নেতা। সেখানে উপস্থিত সাধারণ মানুষের সামনে বেশকিছুক্ষণ ভাষণ দিয়েছিলেন তিনি। সেই সভায় নেতাজির বসার জন্য এক আরামদায়ক সোফা এবং অন্যান্য নেতাদের জন্য কাঠের চেয়ারের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। সভার আয়োজকদের এমন ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট ক্ষুব্ধ হন নেতাজি। অন্যদের থেকে তাঁর জন্য কেন আলাদা ব্যবস্থা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। সোফায় বসতে অস্বীকার করে নেতাজি বসেন এক কাঠের চেয়ার টেনে নিয়ে। ঘটনাচক্রে সেদিন যে কাঠের চেয়ারে নেতাজি বসেছিলেন, সেই চেয়ারটি ছিল বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি এলাকার এক চিকিৎসকের চেম্বার থেকে আনানো। জানা যায় ওই চিকিৎসকের নাম রামরূপ কর্মকার।
২৮ শে এপ্রিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এলাকায় ভাষণ দিয়ে চলে যাওয়ার পর সেই চেয়ার নিয়ে তাঁর দেশুড়িয়া গ্রামের বাড়িতে বাড়ি যান রামরূপ কর্মকার। নেতাজির স্পর্শ পাওয়া সেই কাঠের চেয়ারটি সযত্নে নিজের বাড়িতে রেখে দেন ওই চিকিৎসক। পরে সেটিকে ঠাকুরঘরে স্থানান্তরিত করা হয়। ঠাকুরঘরে রাখা সেই কাঠের চেয়ারের উপরে রাখা হয়েছে নেতাজীর একটি ছবি। প্রতিদিন নিয়ম করে দেশনায়ককে পুজো করা হয়। ঠাকুর ঘরে যেমন অন্য দেবতাদেরকে পুজো করা হয়, তেমনই নেতাজিও দেবতা রূপে পূজিত হন।