এই মুহূর্তে




স্ত্রীর কিডনিতে নয়া জীবন পেয়েই পরকীয়ায় জড়ালেন অকৃতজ্ঞ স্বামী




নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকাঃ সংসার মানেই ভালোবাসা, যত্ন আর বোঝাপড়ার এক চমৎকার জগৎ। আর একটি সংসারের মূল ভিত্তিপ্রস্তর মহিলা অর্থাৎ স্ত্রী। একজন স্ত্রী শুধু স্বামীর ভাল সঙ্গীই নন, একটি পরিবারের প্রাণ, সন্তানদের অভিভাবকও বটে। একজন মহিলা বিয়ের পর নিজের স্বামী, সন্তান সংসারের জন্যে নিজেকে বিলিয়ে দিতেও পারেন। কিন্তু যখন স্বামী স্ত্রীকে পাত্তা না দিয়ে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ান, তখনই সব স্ত্রীর স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। তেমনই ৩৫ বছর বয়সী উম্মে সাহেদীনা টুনির গল্প আজ আপনাদের জানাবো। যিনি স্বামীকে বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি দান করেছেন, কিন্তু স্ত্রীর দেওয়া কিডনিতে নয়া জীবন পেয়েই অনলাইন জুয়া এবং পরকীয়াতে জড়ান সেই স্বামী। শুধু তাই নয়, স্ত্রীকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে এখন প্রেমিকার সঙ্গে বসবাস করছেন অকৃতজ্ঞ স্বামী।

ঘটনাটি ঘটেছে, সাভারের কলমা এলাকায়। অকৃতজ্ঞ স্বামীর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই মামলা দায়ের করেছিলেন স্ত্রী টুনি। কিন্তু তাঁকে গ্রেফতার করা হলেও আপাতত জামিনে রয়েছেন তারেক। জানা গিয়েছে, বিয়ের দুই বছরের মাথায় টুনি জানতে পেরেছিলেন তাঁর স্বামীর দুটি কিডনিই অচল। নিয়মিত ডায়ালাইসিস ছাড়া তাঁকে বাঁচানো সম্ভব নয়। এদিকে বিয়ের বছরেই পুত্র সন্তানের মা হয়েছেন টুনি। কিন্তু মুহূর্তেই স্বামীর বাঁচা- মরার খবর তাঁর সুখের সংসার ভেঙে চুরমার করে দেয়। এরপর মন শক্ত করে উন্নত চিকিৎসার আশায় ভারতে নিয়ে আসেন তিনি তাঁর স্বামীকে। ভারতেই চিকিৎসা শুরু হয় তারেকের। কয়েক বছর পর ভারতীয় চিকিৎসকেরা জানান যে, তারেককে বাঁচাতে হলে দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন। তখন টুনি এগিয়ে আসেন। এবং তাঁর একটি কিডনি দান করে তারেককে সুস্থ করে তোলেন। কিন্তু তাঁর এই আত্ম ত্যাগ নিমেষেই ভুল প্রমাণিত হল। সুস্থ হয়েই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন তারেক। ডিভোর্সি একজন নারীর প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়েন তিনি। পাশাপাশি অনলাইন জুয়ার নেশাতেও পেয়ে বসে তারেককে। যে স্ত্রীর কারণে নতুন জীবন পেয়েছেন তারেক, সেই স্ত্রীকেও মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে প্রেমিকার বাড়িতে গিয়ে ওঠেন তারেক। জানা যায়, ২০০৬ সালে টুনির সঙ্গে প্রেম করেই বিয়ে হয়েছিল মালয়েশিয়া প্রবাসী তারেকের।

প্রথম প্রথম তাঁদের সংসার সুন্দর চলছিল, কিন্তু ২০০৮ সালে তারেক আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর চিকিৎসকেরা জানান তাঁর দুটো কিডনি অচল। এরপর পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে তামিলনাড়ুর বিখ্যাত সিএমসি হাসপাতালে তারেককে ভর্তি করানো হয় এবং সেখানেই তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। এরপর ১০ বছর মেডিসিনের দ্বারা তিনি বেঁচে থাকলেও চিকিৎসকেরা তাঁর দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। এরপর ঢাকায় ফিরে বিউটি পার্লারের কাজ করে টাকা জমিয়ে, স্বর্ণালংকার বেচে স্বামীর চিকিৎসা চালিয়ে যান। কারণ এই অবস্থায় স্বামী কিছুই রোজগার করতে পারতেন না। কিন্তু ৩-৪ লাখ টাকা স্বামীর চিকিৎসার জন্যে প্রয়োজন ছিল। শেষমেশ মায়ের পেনশনও তিনি স্বামীর চিকিৎসায় লাগিয়ে দেন। এরপর একসময় চিকিৎসকদের পরামর্শে স্বামীকে নতুন জীবন দান করেন টুনি নিজের একটি কিডনি দিয়ে। কিন্তু সুস্থ হয়েই খোলস পাল্টে ফেলেন তারেক। কিডনি দেওয়ার পর টুনির শরীর খারাপ হয়ে শুরু হয়েছিল। তাঁকে ICU তে রাখতে হয়েছিল।

সেখান থেকে কেবিনে আসার পরেই তারেকের অন্য চরিত্র আবিষ্কার করলেন টুনি। হাসপাতালের মধ্যেই তাঁর সঙ্গে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন। চিকিৎসকেরা তাঁকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেও তারেক বদলে যেতে থাকে। এরপর দেশে ফিরেই টুনির উপর অত্যাচার শুরু করেন তারেক। তাঁকে কাজে যেতে বললে তিনি উল্টে টুনিকে রোজগারের জন্যে চাপ দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে জুয়া খেলায় আসক্তি হয়ে পড়েন তারেক। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজের অছিলায় ঢাকায় গিয়ে ওই ডিভোর্সী নারীর সঙ্গে সময় কাটাতে শুরু করেন তারেক। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক চলছিল। তাঁর মোবাইল ঘেঁটে সব তথ্য পান টুনি। এরপরেই তারেক টুনিকে ডিভোর্সের জন্যে চাপ দিতে থাকেন। এরপর অত্যাচারের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বাপের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন টুনি। গত ২২ এপ্রিল তিনি তারেকের বিরুদ্ধে ঢাকার জুডিশিয়াল কোর্টে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন। ২৪ এপ্রিল গ্রেফতার হন তারেক। ৪ জুন তিনি জামিনে মুক্ত হন। জামিনে মুক্ত হয়েই টুনিকে চাপ দিতে থাকেন যে বাড়িটা যেন তিনি তারেকের নামে লিখে দেন। তাঁর শাশুড়ি বলেছেন, প্রতি বছরে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ হত। সেটা তাঁর মেয়ে কষ্ট করে জোগাড় করতেন। তবে তারেক্কে জামিন দেওয়া হলেও তাঁর সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগ করতে পারছেন না টুনি। নিজের নম্বরও পরিবর্তন করে ফেলেছেন তিনি। সে এখন নিখোঁজ। টুনির এখন একটাই দাবি, তিনি যেন নিজ বাড়িতে সুরক্ষিত থাকতে পারেন।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

প্রতিদিন আত্মহত্যা করছেন ৮ কৃষক, বিধানসভায় তাস খেলায় মগ্ন মন্ত্রী

WCL 2025 বিতর্কের মধ্যেই পাকিস্তানি রেস্তোরাঁয় হরভজন, ভাইরাল ভিডিও

বর্ষায় একমাসে ৮ মৃত্যু! দ্বারকেশ্বরের জলে উদ্ধার মহিলার মৃতদেহ

জালিয়াতি রুখতে দেশের মধ্যে বাংলায় জমি-বাড়ি রেজিস্ট্রেশনে চালু হচ্ছে ফেস রেকগনিশন

২০ বছর কোমায় থাকা সৌদি রাজকুমারের মৃত্যু

‘এক ফুল দো মালি’, হিমাচলে একই পাত্রীকে বিয়ে করলেন দুই সহোদর

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ