নিজস্ব প্রতিনিধি: দুর্গাপুজো বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব। হাজার হাজার ওয়াটের আলোয় ঝলমল করে রাজ্য়ের প্রতিটি কোনা। এছাড়াও এলইডি আলোর কারুকার্যে সেজে ওঠে পল্লী থেকে শহর। কিন্তু ওদের কাছে সবই ফ্যাকাসে। কারণ এই আলোর রোশনাই ওদের চোখে ধরা দেয় না। ফলে সকলে যখন মণ্ডপে মণ্ডপে ঠাকুর দেখতে ব্যস্ত থাকেন তখন ওরা ঘরেই বসে সময় কাটিয়ে দেন। দৃষ্টিহীনদের কথাই বলছি। ইচ্ছে থাকলেও তাঁরা প্রতিমা, মণ্ডপ ও আলোর রোশনাই দেখতে পান না। তবে সুখবর, এবার সেই দৃষ্টিহীনদের ঠাকুর দেখাবে ‘প্রেরণা অডিও লাইব্রেরি’। তবে চোখ দিয়ে না, কান দিয়েই ঠাকুর দেখবেন দৃষ্টিহীনরা।
উত্তর ২৪ পরগনার গুমার দৃষ্টিহীন শিক্ষক তারক চন্দ্র, জন্ম থেকেই তিনি চোখে দেখতে পান না। ফলে বন্ধুদের সঙ্গে হই হই করে ঠাকুর দেখা তাঁর কোনও দিনই হয়নি। যদিও মনের কোনে আজন্ম সাধ ছিল সকলের সঙ্গে পুজোর আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার। তিনি সেই স্বাদই একটু অন্যভাবে পূরণ করতে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। গুমায় দৃষ্টিহীনদের জন্য একটি পাঠাগার চালান তারকবাবু। ওই লাইব্রেরির ওয়েবসাইটেই এবার খুলছেন একটি আলাদা বিভাগ। কানে হেডফোন লাগিয়ে ওই ওয়েবসাইটে একটি বাটনে ক্লিক করলেই পুজো পরিক্রমা পরিক্রমা শুনতে পারবেন দৃষ্টিহীনরা। ব্যাপারটা ঠিক কী? অনেকটা টিভিতে যেমন পুজো পরিক্রমা দেখানো হয় ঠিক সেরকম। তবে এখানে কোনও ছবি বা ভিডিও থাকবে না। থাকবে শুধুই বর্ণনা।
বেশ কিছুদিন আগেই থেকেই তিনি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার কাজে হাত দিয়েছিলেন। উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতার বিখ্যাত পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে কথা বলে তাঁর সংস্থার সদস্যরা জেনে নিয়েছিলেন পুজোর খুঁটিনাটি। প্রতিমাশিল্পী কে, পুজোর থিম কি, ঠাকুরের বর্ণনা বা মণ্ডপের বর্ণনা, মণ্ডপে কী কী কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়েছে যাবতীয়। এবার সেই মতো একেকটি পুজো আলাদা করে তুলে ধরা হয়েছে নিখুঁদ বর্ণনায়। পুজোর সময় তাঁদের ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট বিভাগে ঢুকে কানে শুনেই পুজো পরিক্রমায় শামিল হতে পারবেন অগুনতি দৃষ্টিহীন মানুষ। লাইব্রেরির www.voiceofbooks.org এই ওয়েবসাইটে গেলেই পুজো পরিক্রমা শুনতে পাওয়া যাবে।
প্রেরণা অডিও লাইব্রেরিতে বহু আগে থেকেই অসংখ্য পাঠ্যপুস্তক আপলোড করা হয়েছে। আরও নানা ধরণের বইয়ের অডিও বা অডিওবুক আপলোড করা হচ্ছে। ওয়েবসাইটের হাত ধরে উত্তর ২৪ পরগনার গণ্ডি ছাড়িয়ে তাঁদের উদ্যোগ সমাদৃত হয়েছে গোটা রাজ্যেই। যদিও প্রেরণা লাইব্রেরিতে প্রতিটি বিষয়ের ব্রেল বুক রয়েছে। কিন্তু স্থানের অভাবে আরও বই রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এখান থেকেই অডিও বুক তৈরির ভাবনা। যাদবপুর, কলকাতা ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিহীনরাও তাঁদের ওয়েবসাইটে গিয়ে পড়াশোনা করছেন।