এই মুহূর্তে




বিশালের হাত ধরে লাল-হলুদকে হারিয়ে ২২ বছর পর শিল্ড জয় মোহনবাগানের

নিজস্ব প্রতিনিধি: লাল-হলুদ নয়। শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে কলকাতা ডার্বির রং হল সবুজ-মেরুন। ধুন্ধুমার লড়াই শেষে চির প্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গলকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ২২ বছর বাদে আইএফএ শিল্ড জিতল মোহনবাগান। জয়ের নায়ক হলেন বাগান গোলরক্ষক বিশাল কাইথ। ইস্টবেঙ্গলের জয় গুপ্তের শট প্রতিহত করে চলতি মরসুমে দলকে প্রথম ট্রফি এনে দিলেন। অধিকাংশ সময় দাপট দেখিয়েও কাজের কাজ করতে পারেননি লাল-হলুদ ফুটবলারেরা।

শনিবার ম্যাচের শুরু থেকেই আগ্রাসী মেজাজে খেলতে শুরু করে ইস্টবেঙ্গল। বিপিন সিংহ পর পর দু’বার মোহনবাগান রক্ষণে হানা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বল ঠিকমতো রাখতে না পারায় গোল হয়নি। চার মিনিটের মাথায় প্রতি আক্রমণ থেকে ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ ভেদের চেষ্টা চালিয়েছিল মোহনবাগানের খেলোয়াড়েরা। আট মিনিটের মাথায় সাহালের থেকে পাস পেয়ে ম্যাকলারেন এবং কামিংস একে অপরের মধ্যে পাস খেলে লাল-হলুদের বক্সে হানা দেন। ম্যাকলারেনের পাস বাঁচিয়ে দিলেন প্রভসুখন। ১১ মিনিটে আপুইয়ার দূরপাল্লার শট অল্পের জন্য বেরিয়ে যায়। মোহনবাগানের পর পর হানায় খানিকটা আগোছালো দেখাচ্ছিল ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ ভাগকে। ১১ মিনিটের মাথায় আচমকা বক্সের বাইরে বল পেয়ে নিচু জোরালো শট রেখেছিলেন মহেশ। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচিয়ে দেন বাগান গোলরক্ষক বিশাল। এর পর বলের দখল নিয়ে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। ২৫ মিনিটে ডান দিক থেকে আপুইয়ার পাস পেয়েছিলেন সাহাল। সামনে একা ছিলেন প্রভসুখন। যদিও বল ইস্টবেঙ্গল গোলরক্ষকের মাথার উপর থেকে জালে গলানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

৩২ মিনিটে বক্সের মধ্যে ম্যাকলারেনকে ফেলে দেন ইস্টবেঙ্গলের আনোয়ার। রেফারি বেঙ্কটেশ সরাসরি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। যদিও আনোয়ারের অপরাধ পেনাল্টির মতো গুরুতর ছিল না বলে মনে করেন মাঠে থাকা দর্শকরা। তবে পড়ে পাওয়া ওই পেনাল্টি কাজে লাগাতে পারেননি মোহনবাগানের কামিংস। বারের অনেকটা উপর দিয়ে উড়িয়ে দিলেন বল। খেলার গতির খানিকটা বিপরীতে গিয়ে ৩৭ মিনিটে গোল আদায় করে নেয় ইস্টবেঙ্গল। বাঁ দিক থেকে বল নিয়ে একাই উঠেছিলেন মহেশ। বিপক্ষের নাগাল এড়িয়ে বক্সে নিচু পাস দিয়েছিলেন। মোহনবাগানের দুই ডিফেন্ডারে তাঁর পাস আটকাতে পারলেন না। ফাঁকায় থাকা হামিদ বল জালে জড়িয়ে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দিলেন। ৪২ মিনিটের মাথায় মাঝ মাঠ থেকে রশিদ পাস দিয়েছিলেন মহেশকে। তিনি পাস দেন হামিদকে। সামান্য ঘুরে বাঁ পায়ে নিখুঁত শট মেরেছিলেন হামিদ। বল পোস্টে লেগে বেরিয়ে যায়। এর দু’মিনিট বাদে ব্যবধান বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন ইস্টবেঙ্গলের বিপিন। বক্সের মধ্যে মহেশ বল সাজিয়ে দিয়েছিলেন বিপিনকে। চলতি বলে শট অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। প্রথমার্ধের সংযুক্ত সময়ের দু’মিনিটের মাথায় সমতা ফেরায় সবুজ মেরুন শিবির। ডান দিক থেকে সাহালের ভাসানো বল রিসিভ করেছিলেন লিস্টন। সামনে থাকা আপুইয়ার শট বারে লেগে মাটিতে ড্রপ খেয়ে বেরিয়ে এল। তবে লাইন্সম্যান ইঙ্গিত করলেন, বল গোললাইন পেরিয়েছে। রিপ্লে-তেও তাই দেখা যায়।

বিরতির পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই গোলের জন্য ঝাঁপায় দুই দল।  শুরুতেই গায়ের জোরে বল কাড়তে গিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন বাগানের আলবের্তো। ৫২ মিনিটে আক্রমণের ধার বাড়াতে এডমুন্ডের বদলে পিভি বিষ্ণুকে নামান লাল-হলুদ কোচ।  পরের মিনিটেই গোল করার সুযোগ এসেছিল মোহনবাগানের কাছে। তবে পরিত্রাতা হয়ে আবির্ভূত হয়ে  ইস্টবেঙ্গলকে বাঁচিয়ে দেন আনোয়ার। আক্রমণের ঝাঁজ বাড়াতে কামিংসের বদলে রবসনকে নামান বাগান কোচ।। ৬৪ মিনিটে বক্সের ঠিক বাইরে ফ্রিকিক পেয়েছিল মোহনবাগান। রবসনের ফ্রিকিকে সাহাল মাথা ছোঁয়ালেও তা গোলের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। ৬৬ মিনিটে মিগুয়েলের ফ্রিকিকে মাথা ছুঁইয়ে গোলে মেরেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের হিরোশি। তা বাঁচান বিশাল। সংযুক্ত সময়ে দূর থেকে শট নিয়েছিলেন রশিদ। সেই  শট সহজেই ধরে ফেলেন বিশাল। শেষ মুহূর্তে ফ্রিকিক পেয়েছিল মোহনবাগান। রবসনের ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে গোলে বল রেখেছিলেন মেহতাব। সেই শট লাফিয়ে বাঁচিয়ে দেন প্রভসুখন। শেষ মুহূর্তে গোল খাওয়া থেকে বেঁচে যায় ইস্টবেঙ্গল।

নির্ধারিত সময়ে মীমাংসা না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান-দুই দলের খেলোয়াড়রাই আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে খেলতে শুরু করেন। আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে জমে ওঠে খেলা। ১০৪ মিনিট ভাল সুযোগ পেয়েছিল  মোহনবাগান। তবে আপুইয়ার বাড়ানো পাস বেশিক্ষণ পায়ে ধরে রাখায় সুযোগ নষ্ট করেন মনবীর। ১০৬ মিনিটে মিগুয়েলের থেকে পাস পেয়ে ডান দিক থেকে শট নিয়েছিলেন হিরোশি। অল্পের জন্য পোস্টের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। ১০৮ মিনিটে বিষ্ণুকে অবৈধ ভাবে ট্যাকল করে হলুদ কার্ড দেখেন মোহনবাগানের শুভাশিস। তিন মিনিট বাদে অকারণে আপুইয়াকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখলেন লাল-হলুদের মহেশ। শেষের দিকে দু’দুবার সুযোগ পেয়েছিলেন মোহনবাগানের পেত্রোতাস। কিন্তু স্বার্থপরের মতো নিজে গোল করতে গিয়ে মিস করেন। অতিরিক্ত সময়ে গোল না হওয়ায় ফল নির্ধারণে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।

প্রথম শট নিতে এসে জালে বল রাখেন লাল-হলুদের মিগুয়েল। মোহনাবাগানের হয়ে গোল করেন রবসন। এর পর ইস্টবেঙ্গলের হয়ে গোল করেন সিবিল। বাগানের হয়ে জাল কাঁপিয়ে সমতা ফেরান মনবীর। তৃতীয় শট নিতে এসে গোল করেন মহেশ। মোহনবাগানের হয়ে লিস্টন কোলাসো ফের সমতা ফেরান। ইস্টবেঙ্গলের জয় গুপ্তের শট রুখে দেন বাগান গোলরক্ষক বিশাল। টাইব্রেকারে খেলার ফল দাঁড়ায় ৫-৪।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

যুবভারতীতে শিল্ড ফাইনালে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই

‘২০২৭ সালের বিশ্বকাপে খেলব’, খুদে ভক্তকে ওয়াদা রোহিত শর্মার

শনি সন্ধ্যায় শিল্ড ফাইনালে মুখোমুখি ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান, জয়ের জন্য মরিয়া দু’পক্ষ

পাক বিমান হামলায় নিহত ৩ আফগান ক্রিকেটার, প্রতিবাদে ত্রিদেশীয় সিরিজে দল প্রত্যাহার

ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দশে ঢুকে পড়ল জার্মানি, এক ধাপ এগোল আর্জেন্টিনাও

শনিতে শিল্ড ফাইনালে কলকাতা ডার্বি, সমর্থকদের গ্যালারি ভরানোর আর্জি বাগান কোচের

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ