নিজস্ব প্রতিনিধি: সৌদি আরবের রিয়াধে UNESCO’র World Heritage কমিটির সভায় শান্তিনিকেতনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তকমা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল গত রবিবার। এবার তাঁরা জানিয়ে দিল, শান্তিনিকেতনের(Shantiniketan) ঠিক কতটা এলাকা এই ঐতিহ্যের আওতায় আসছে। কেননা ওই এলাকায় মেনে চলতে হবে একাধিক বিধিনিষেধ, যা না মানলেই UNESCO’র World Heritage কমিটি এই শিরোপা কেড়ে নেবে। UNESCO’র World Heritage কমিটি জানিয়ে দিয়েছে, শান্তিনিকেতনের ৫৩৭.৭৩ একর এলাকা বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভূক্ত। তাই সেখানে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন করতে হবে ঐতিহ্য মেনে। ঐতিহ্যশালী স্থাপত্যের কোনও ক্ষতি হয়, এলাকাকে এমন দূষণ থেকে দূরে রাখার ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে। এর জন্য যানবাহন নিয়ন্ত্রণের কথাও বলে দিয়েছে ইউনেস্কো। যা খুশি করা যাবে না।
শান্তিনিকেতন বললে একটা বিস্তৃত পরিসর বোঝায়। যা মূল শিক্ষাঙ্গন ছাড়িয়েও চার পাশে অনেকটা ছড়িয়ে। ইউনেস্কোর স্বীকৃতির পরিসর সেই বিরাট শান্তিনিকেতনের কিছু নির্দিষ্ট অংশ। ইউনেস্কো যে এলাকা ঠিক করে দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে আশ্রম ভবন, কলা ভবন, সঙ্গীত ভবন, উত্তরায়ণ। উত্তরায়ণের মধ্যেই রয়েছে রবীন্দ্রনাথের বাসগৃহ উদয়ন, উদীচী, শ্যামলী, পুনশ্চ, কোনার্ক। এ ছাড়াও উপাসনা গৃহ, ছাতিমতলা সবই ঐতিহ্যের তালিকায়। মুক্ত বিদ্যালয় বসে যে সব জায়গায়, তা-ও এই ক্ষেত্রের মধ্যেই পড়ছে। এই সব জায়গায় কড়া বিধি মেনে চলতে হবে। কেননা শান্তিনিকেতনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ভাবনা ও দর্শন যেমন ছড়িয়ে রয়েছে, তেমনই তাঁর নিজের এবং সহযোগীদের সৃষ্টিও রয়েছে। সেটা যেমন কোনও ভবন, তেমনই ভবনের অন্দরসজ্জাও। আবার যে সব গাছ, বাগান, জলাশয় রয়েছে সেগুলিও ঐতিহ্যের মধ্যে। সবটাই যেমন ছিল, যেমন রয়েছে, তেমন ভাবেই সংরক্ষণ করতে হবে। কোনও বদল আনা যাবে না। মৌলিক কাঠামো বজায় রেখে এ সবের সংরক্ষণ করতে হবে।
জানলা, দরজা কিছু মেরামত করতে হলে তাতে কোনও বদল আনা যাবে না। নকশার তো নয়ই, যা দিয়ে তৈরি তাতেও বদল নয়। কোনও গাছ বদলে দেওয়া যাবে না। এমনকি কোনও অনুষ্ঠানে কেমন ভাবে আলপনা দেওয়া হবে, কেমন করে শঙ্খ বাজানো হবে, তাতেও শান্তিনিকেতনের বিশুদ্ধতা মেনে চলতে হবে। ওই এলাকায় কোনও নতুন নির্মাণও চলবে না। তবে মূল এলাকার বাইরের যে অংশ, অর্থাৎ বিশ্বভারতীর অধীনস্থ বাকি এলাকায় কিছু ছাড় রয়েছে। এই এলাকায় মূলত রয়েছে খেলার মাঠ, পড়ুয়াদের হোস্টেল। সেখানে আগামী দিনে প্রয়োজনে নির্মাণ করা যেতে পারে। তবে কেমন হবে সেই নির্মাণ, তা-ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এর জন্য নতুন কমিটি তৈরি করতে হতে পারে বিশ্বভারতীকে।