নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি যে ভাল গান গাইতে পারেন সেটাই এতদিন কেউ জানত না। কিন্তু জেলের ভেতরে রাতের আঁধারে নিত্যদিনই তাঁর গলায় গানের সুর থেকে কলি শুনতে পাচ্ছেন সহবন্দীরা। দিনের বেলায় তিনি থাকেন বেশ খোশমেজাজে। তখন রক্ষী থেকে বন্দি, সকলের সঙ্গেই চলে আড্ডা আর গপ্পো। মাঝে মধ্যে হাসি-ঠাট্টাও। কিন্তু রাত নামলেই বদলে যায় ছবি। ক্রমশ নিস্তেজ হতে থাকেন যেন তিনি। যত রাত এগোয়, ততই চুপচাপ হয়ে যান তিনি। সকলের ঘুমানোর সময় হলে তখন গান ধরেন তিনি। ‘বড় একা লাগে এই আঁধারে, মেঘেরও খেলায় আকাশও পারে’। আর সেই গান শুনতে শুনতেই ঘুমের দেশে পাড়ি দেন সহবন্দীরা। জেলের অন্দরে থাকা ভিভিআইপি মানুষটির গলা থেকে যে এমন সুরেলা গান ভেসে আসতে পারে সেটাই কেউ আন্দাজ করতে পারেননি। কিন্তু এখন নিত্যদিন, জেলের রক্ষী থেকে আধিকারিক মায় বন্দীরাও শুনছেন তাঁর গান। এই গায়ককে অবশ্য একডাকে গোতা বাংলা চেনে। দিদিমণি ডাকেন তাঁকে তাঁর ডাকনামেই, কেষ্ট। মানে অনুব্রত মণ্ডল(Anubrata Mondol)। বীরভূম(Birbhum) জেলা তৃণমূলের(TMC) সভাপতি, এখনও।
জেলজীবন কেমন কাটছে গরু চুরির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া কেষ্টমামার? সেটাই খোঁজ শুরু করা হয়েছিল। আর তাতেই আসানসোল সংশোধানাগারের(Asansol Special Correctional Home) কারারক্ষীদের সূত্রে বের হয়ে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। কারারক্ষীরাইও জানিয়েছেন, কেষ্টবাবু এখন রয়েছেন জেলের হসপিটাল ওয়ার্ডে। সেখানে তাঁর সঙ্গে রয়েছেন আরও সাত বন্দি। দিনের বেলায় তাঁদের সঙ্গে বেশ গল্পগুজব করে কাটাচ্ছেন। কখনও কখনও হাসিঠাট্টাও করছেন। তাঁর কথায় মাঝে মাঝে হাসির রোলও উঠছে। কিন্তু সেই ছবিটাই বদলে যাচ্ছে রাত ঘনালে। সন্ধ্যার পর থেকেই চুপচাপ হয়ে যাচ্ছেন। এখন সেখানে সকলকে ৯টার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নিতে হয়। তারপর বেশিরভাগ বন্দিই শুয়ে পড়ে। তখন অনেকটা একা হয়ে যান কেষ্ট। সংশোধনাগারের নিয়ম, রাতে কোনও সেল বা ওয়ার্ডে আলো বন্ধ হবে না। তাই আলোর মধ্যেই শুতে হচ্ছে তাঁকে। কিন্তু আড়াইটার আগে কিছুতেই ঘুমাতেই পারছেন না। আর তাই রাতের খাবার খাওয়ার পরেই হালকা সুরে গান ধরেন তিনি। তাঁর চব থেকে বেশি পছন্দের গায়ক মান্না দে(Manna Dey)। সেই কিংবদন্তী শিল্পীর গাওয়া গানেই ভেসে যায় জেলের রাত উঠোন।