নিজস্ব প্রতিনিধি: ফুল বদল করেছেন ব্যারাকপুরের বাহুবলী সাংসদ। তৃণমূল(TMC) ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েও মাত্র ৩ বছর ২ মাসের মাথায় ফের তৃণমূলেই ফিরলেন অর্জুন সিং(Arjun Singh)। রবি বিকালেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Abhishek Banerjee) উপস্থিতিতেই ফুল বদল করেছেন অর্জুন। আর তার পরে পরেই সোম সকালে তিনি কার্যত বিস্ফোরক হয়ে উঠলেন। কেন বিজেপি ছেড়ে তিনি তৃণমূলে এলেন, কী পরিবেশে বিজেপিতে(BJP) কাজ করতে হচ্ছিল, বাংলায়(Bengal) বিজেপির ভবিষ্যত কী – এসব নিয়েই মুখ খুলে কার্যত বিস্ফোরক হলেন তিনি। তবে ঘটনা হচ্ছে অর্জুনের এই দলত্যাগ রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপিকেও কিন্তু আগামী দিনে বড় ধাক্কার মুখে দাঁড় করাতে চলেছে, সেটা পদ্ম শিবিরের কেউ স্বীকার করুক বা না করুক।
ঠিক কী বলেছেন অর্জুন? এদিন অর্জুন বলেন, ‘পশ্চিমবাংলায় বিজেপি যেভাবে চলছে তাতে দলের সংগঠন ড্যামেজ হয়ে গিয়েছে৷ সংগঠন বলে বাংলায় বিজেপির কিছুই নেই৷ আমরা যাঁরা বিজেপিতে এসেছিলাম, তাঁরা নামে বিজেপিতে ছিলাম, আমাদেরকে বিশ্বাসই করতে পারেনি কোনওদিন। আমরা বিজেপির সাংসদ হয়েছিলাম, আমার তিনটে জেলার দায়িত্ব ছিল, কিন্তু সেই জেলাতে কী হবে, না হবে তার সঙ্গে আমার কোনও যোগাযোগ ছিল না। আমাদের কোনও দামই ছিল না, আমাদের ওপরে সবসময় সন্দেহ করা হত। রিক্স নিয়ে ব্যারাকপুরে আমাকে লড়াই করতে হচ্ছিল। সেই মানুষগুলোকে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে সুরক্ষা দিতে হত, অনেকের চাকরি চলে গিয়েছিল, অনেকে ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। সমস্ত ব্যাপারটাকে নিয়ে এরা লড়াইয়ের মধ্যে ছিল না আমরা বলার পরেও। শুধুমাত্র একটা মিথ্যার উপর ভিত্তি করে একটা দলের মধ্যে থেকে, যখন মানুষের কিছু ভালোই করা যাবে না, দলই যেখানে পাশে দাঁড়াচ্ছে না, সেখানে সেই মানুষগুলোর প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে বাধ্য হয়ে শ্রমিকের জন্য লড়াই করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেছি।’
২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় কী ফলাফল হতে পারে তারও একতা আভাস এদিন দিয়েছেন অর্জুন। সাফ জানিয়েছেন, ‘বাংলা থেকে বিজেপির একটাও আসন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। যেভাবে বিজেপির সাংগঠনিক ব্যবস্থা ভেঙেচুরে গিয়েছে, তাতে ২০২৪ এ মনে হচ্ছে ৪২টা আসনই তৃণমূল কংগ্রেস পাবে। বিজেপি এখন লড়াই করার মতো কোনও অবস্থাতেই নেই। পঞ্চায়েত ভোটও নয়, লোকসভার ভোটও নয়। কোনও হিংসার প্রয়োজনই নেই কোনও ভোটে। বাংলায় বিরোধী বলে কিছু নেই। তৃণমূল ছাড়া বাংলায় কিছুই নেই। বিজেপি বলুন কী বাম, উপস্থিতির সবটাই কাগজকলমে।’ অর্জুনের এই ফুল বদলের পরে অনেকেই কিন্তু মনে করছেন, এটা হওয়ারই কথা ছিল। কেননা, অর্জুন কোনও বড় তিক্ততার কারণে বিজেপিতে যাননি। গিয়েছিলেন শুধু দীনেশ ত্রিবেদীর বিরোধীতা করার জন্য।
সন্দেহ নেই, বাম জমানার সময় থেকেই অর্জুন তৃণমূলের হয়ে লড়াই করে গিয়েছেন। পরিবর্তনের পরে তিনিই ছিলেন ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী হওয়ার সব থেকে যোগ্য দাবিদার। যদিও তৃণমূল টিকিট দিয়েছল দীনেশকেই। তাও এক আধবার নয়, পর পর দুইবার, যা নিয়ে অর্জুনের ক্ষোভ। সেই দীনেশও এখন বিজেপিতে। স্বাভাবিক ভাবেই অর্জুনের তৃণমূলে ফেরার কাঁটা পথ থেকে সরে গিয়েছিল। তাছাড়া ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে জিতে অর্জুন প্রমাণ করে দিয়েছেন, দীনেশকে প্রার্থী করা তৃণমূলের ভুল ছিল। এখন অর্জুন তৃণমূলে ফিরে আসায় সন্দেহ নেই বিজেপি কর্মীদের মনোবল ভাঙবে সারা রাজ্যেজুড়েই, বিশেষ করে হিন্দিভাষী বিজেপি কর্মীদের মধ্যে। আসলে বঙ্গ বিজেপি হোক কী জাতীয় স্তরের বিজেপি, দলের অন্দরটা রীতিমত ভঙ্গুর। আদি বিজেপি বনাম নব্য বিজেপি, তৎকাল বিজেপি বনাম পরিযায়ীদের বিজেপি, এই লড়াইটা শুধু বাংলাতে নয়, গোটা দেশ জুড়েই চলছে। অর্জুন এই ভিতরের বেহাল অবস্থার ছবিটাই সামনে নিয়ে চলে এলেন।