নিজস্ব প্রতিনিধি: অতিমারির আগের ছবিটা ছিল আরও করুণ। কোভিড এসে সেই ছবি কিছুটা হলেও বদলেছে। কিন্তু কাজের গতি কী বেড়েছে? সম্ভবত না। কেননা রোজকার দিনে বৈঠলের বোঝা আর কিছুতেই কমছে না। গোদের ওপর বিষফাঁড়া হয়েছে অনলাইনের বৈঠক। দিন নেই রাত নেই, ছুটির দিন বলেও রেয়াত নেই। বৈঠক নিত্যদিনই লেগে রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই কাজের চাপের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনও বৈঠকময় হয়ে উঠেছে। আর তাতেই ছন্দ তাল সুর সব কেটে যাচ্ছে জীবনের। তাই এবার নবান্নই উদ্যোগ হয়েছে বৈঠকের বোঝা কমাতে। নজরে বাংলার জেলাশাসকেরা। কেননা তাঁদের ওপরেই চেপে বসেছে নিত্যদিনের বৈঠকের বোঝা। যার জেরে প্রশাসনিক কাজ তার স্বভাবসিদ্ধ গতি হারিয়েছে। এবার সেই জেলাশাসকদের ওপর থেকে এই বৈঠকের বোঝা কমিয়ে প্রশাসনিক কাজের গতি বাড়াতে সচেষ্ট হল নবান্ন, থুড়ি রাজ্য প্রশাসন।
জানা গিয়েছে, জেলাশাসকদের ওপর থেকে বৈঠকের বোঝা কমাতে নবান্ন থেকে রীতিমত প্রতিটি দফতরের সচিবদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এরপরেও যদি বৈঠকের সংখ্যা না কমে তাহলে সুনির্দিষ্ট আদেশনামাও আগামী দিনে প্রকাশ করতে পারে নবান্ন, এমনই ইঙ্গিত মিলেছে রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসনিক মহল থেকে। কেননা তাঁরা জানতে পেরেছেন নিত্যদিনের বৈঠকের চাপে রীতিমতো হাসফাঁস করছেন জেলাশাসকেরা। এই বৈঠক চাপের ছবিটা ঠিক কেমন? জানা যাচ্ছে, মুখ্যসচিব নিজে সপ্তাহে বা দু’সপ্তাহে একবার জেলার কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেন। তা বাদ দিয়ে প্রতি দিনই গড়ে ২-৩টি করে বিভিন্ন দফতরের সচিবের সঙ্গে বৈঠকে থাকতেই হয় জেলাশাসক বা জেলা প্রশাসনের অন্য কর্তাদের। সব মিলিয়ে মাসে অন্তত ৬০-৭০টি এমন বৈঠক হয়। রাজ্য স্তর থেকে যে নির্দেশ আসে, তা মহকুমা-ব্লক স্তরে পৌঁছে দিতে সেখানকার আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা বলা দরকার। ফলে দৈনিক আরও একটি বা দু’টি অতিরিক্ত বৈঠক করতেই হয়। একেকটি বৈঠকের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গড়ে এক ঘণ্টা সময় ধরলেও দিনে চার-পাঁচ ঘন্টা সময় বৈঠকেই কেটে যায়। প্রশাসনের শীর্ষ মহলের পর্যবেক্ষণ, এ ভাবে বৈঠকে সময় কাটলে অন্যান্য প্রশাসনিক কাজের ক্ষতি হবেই হবে।
গল্প এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। জেলা শাসকদের কার্যালয় সূত্রে জানা জ্ঞিয়েছে, দুয়ারে সরকার এবং পাড়ায় সমাধান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে জেলা প্রশাসনগুলির কাজ এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। এর ওপরে কোভিড পরিস্থিতিতে চিকিৎসা এবং টিকাকরণেও বাড়তি লোকবল নিয়োগ করতে হচ্ছে জেলাশাসকদের। তাই কাজের চাপ যেমন বেড়েছে, তেমনই কমেছে লোকবলও। প্রশাসনের খবর, এই পরিস্থিতিতে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী নিজেও চাইছেন, কাজের স্বার্থেই বৈঠকের আওতা থেকে জেলা-কর্তাদের যতটা সম্ভব মুক্ত রাখা হোক।দু’সপ্তাহে একবার বৈঠক করার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করা হোক। ই-মেল, হোয়াটসঅ্যাপ, ফোন এবং সরকারি চিঠিপত্র সমন্বয় এবং নজরদারি এবং নির্দেশ আদানপ্রদানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ফলে বৈঠকের সংখ্যা কিছুটা কমলেও সমন্বয়ের প্রশ্নে সমস্যা তৈরি হবে না। সেই মনোভাবই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন দফতরের সচিবের কাছে।