নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনশো বছরের বেশি প্রাচীন মেলা। লাঠি খেলা ছিল মেলার অন্যতম আকর্ষণ। পয়লা মাঘ শুরু হওয়া আট দিনের মেলায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম হত। কলকাতা, কৃষ্ণনগর, পাঁচমুড়া, শুশুনিয়া থেকে লোহা, কাঠ, পিতল, অ্যালুমনিয়াম, মাটির তৈরি নানা সামগ্রীর দোকান বসত। অন্তত শ’তিনেক দোকান হত মেলায়। গৃহস্থালির নানা সরঞ্জাম থেকে চাষের যন্ত্র, সবই পাওয়া যেত। ছোট থেকে মেলা দেখে আসছেন এলাকার প্রবীণ থেকে শুরু করে নতুন প্রজন্ম। কিন্তু এবছর সেই ছবিটাই বদলে গিয়েছে। কেননা স্থানীয় প্রশাসন মেলা বসানোর অনুমতিই দেয়নি। আর এই মেলা বসতে না দেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি গোটা মহকুমার মানুষের ক্ষোভকে হাতিয়ার করে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শাসক পক্ষের বিরুদ্ধে মাঠে রে রে করে নেমে পড়তে চলেছে গেরুয়া শিবির। নজরে পুরুলিয়া(Purulia) জেলার রঘুনাথপুর(Raghunathpur) মহকুমার বেড়ো গ্রামের(Bero Village) খেলাইচণ্ডী মেলা(Khelai Chandi Mela), যা চলতি বছরে বসানোর অনুমতি দেয়নি জেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুন সরস্বতীকে জীবন দিতে মমতার বরাদ্দ ২০০ কোটি
ঠিক কী হয়েছে? রঘুনাথপুর ১ ব্লকের বেড়ো গ্রামে প্রায় ৩০০ বছর ধরে আয়োজিত হচ্ছে খেলাইচণ্ডী মেলা। কোভিডের কারণে গত ২ বছর এই মেলার আয়োজন করা হয়নি। কিন্তু এই বছর গ্রামের লোকেদের পাশাপাশি মহকুমার বাসিন্দারা আশা করেছিলেন প্রশাসন মেলা বসানোর অনুমতি দেবে। কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। মেলা ছাড়াই এবছর ১ মাঘ থেকে হচ্ছে শুধুমাত্র পুজোর অনুষ্ঠান। বছর ভর এই মেলার জন্য হাপিত্যেশ করে অপেক্ষা করা মানুষজন এখন মেলা না হওয়ায় ক্ষোভে ফুটছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। আর এই ক্ষোভকে হাতিয়ার করেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঝাঁপানোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বিজেপি(BJP)। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেড়ো গ্রামের চণ্ডীমন্দিরের সেবাইতরা তিনশো বছরের কিছু আগে শুরু করেন মেলা। তাই থেকে কালক্রমে মেলার নাম হয় খেলাইচণ্ডীর মেলা। মন্দিরের আগের সেবাইত শ্রীনিবাস আচার্য স্থানীয় এক ব্যক্তিকে মেলা পরিচালনার লিজ় দিয়েছিলেন। ২০১৫ পর্যন্ত সেই ব্যক্তি ও স্থানীয় চণ্ডীমন্দির উন্নয়ন কমিটি মেলা পরিচালনা করেন। লিজ়ের মেয়াদ শেষে মেলা পরিচালনা করছিল খেলাইচণ্ডী মাতা মেলা কমিটি। মন্দিরের সেবাইত দুয়ারাকানাথ আচার্য কমিটির সভাপতি।
আরও পড়ুন উপাচার্যদের নিয়ে মঙ্গলবার বৈঠকে রাজ্যপাল, থাকবেন শিক্ষামন্ত্রীও
কিন্তু কেন এবারে প্রশাসন মেলা করার অনুমতি দিল না? প্রশাসন সূত্রের খবর, মেলা আয়োজনের জন্য তিনটি কমিটি আবেদন জানিয়েছিল। কিন্তু কোনও এক পক্ষকে মেলা করার অনুমতি দেওয়া হলে মেলা ঘিরে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, এই মর্মে রঘুনাথপুর থানার তরফে রিপোর্ট পাওয়ার পরে মেলা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ বারে খেলাইচণ্ডী মাতার মেলা কমিটি ছাড়াও পশ্চিম বেড়ো চণ্ডীমন্দির উন্নয়ন কমিটি ও পঞ্চগ্রামীণ খেলাইচণ্ডী মেলা কমিটি মেলা আয়োজনের দায়িত্ব চেয়ে প্রশাসনে আবেদন জানায়। সূত্রের খবর, মধ্যস্থতা করতে উদ্যোগী হয়ে পরপর দু’টি সভা ডাকেন রঘুনাথপুরের মহকুমা শাসক। সেখানে মেলা কমিটিগুলি থেকে প্রতিনিধি নির্বাচন করে একটি কমিটি তৈরি করে সেই কমিটি মেলা পরিচালনা করুক বলে প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু সব পক্ষ তাতে সম্মত হয়নি। তাই শেষমেষ কোনও পক্ষকেই মেলা করার অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। আর মেলা না হওয়ায় হতাশ বেড়ো পঞ্চায়েত-সহ রঘুনাথপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ অংশের লোকজন। এই ক্ষোভকেই হাতিয়ার বানাতে চাইছে বিজেপি আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে।