নিজস্ব প্রতিনিধি: হাঁসখালি গণধর্ষণ কাণ্ডে নাবালিকা নির্যাতিতার বাবা-মাকে শনিবার জিজ্ঞাসাবাদ করল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এদিন তাঁদের সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জানা গিয়েছে, এর আগে শ্মশানেও গিয়েছিলেন তদন্তকারী সংস্থা। সেই সঙ্গে এলাকার বিভিন্ন জায়গাও পরিদর্শন করেন প্রতিনিধি দল। আরেক অভিযুক্তের খোঁজেও চলছে তল্লাশি। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করে তা পাঠানো হয়েছে ডিএনএ টেস্টের জন্য।
জানা গিয়েছে, সকাল ১১ টা ৪৫ নাগাদ সিবিআই (CBI) আধিকারিকরা নির্যাতিতার বাড়ি এসে তাঁর বাবা ও মাকে নিয়ে যান দফতরের অস্থায়ী অফিসে। সেখানেই তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জানা হয় বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য। আরও জানা গিয়েছে, নির্যাতিতা নাবালিকার বাবা-মার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয় মূল অভিযুক্ত ব্রজ গয়ালী (সোহেল) প্রসঙ্গেও। নির্যাতিতার পরিবারের আগেই অভিযোগ ছিল, এই অভিযুক্ত বিভিন্ন অসামাজিক কাজে যুক্ত।
প্রসঙ্গত, হাঁসখালি গণধর্ষণ কাণ্ডে ডিএনএ টেস্ট করাবে সিবিআই। মিলিয়ে দেখা হবে অভিযুক্ত ও নাবালিকা নির্যাতিতার ডিএনএ। শুক্রবার সকালে অভিযুক্তের বাড়িতে যান সিবিআইয়ের প্রতিনিধি দল। ইতিমধ্যেই নমুনা সংগ্রহ করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। শুক্রবার ঘটনাস্থলে গিয়েছিল সিবিআই-এর এক প্রতিনিধি দল। ইতিমধ্যেই শ্মশান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে পোড়া কাঠ। আরেক অভিযুক্ত প্রভাকর পোদ্দারের বাড়িতে গিয়ে তার ব্যবহৃত অন্তর্বাস ও পোশাক সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। আরও জানা গিয়েছে, তৃতীয় অভিযুক্ত পলাতক রঞ্জিত মল্লিকের বাড়ি ইতিমধ্যেই সিল করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। জোর কদমে খোঁজ চলছে তার। গত বৃহস্পতিবার দু’দফায় অভিযুক্ত ব্রজ গয়ালীর বাড়িতে ঢুকেছিল সিবিআই। বিছানায় মিলেছিল রক্তের দাগ। প্রতিনিধি দল কথা বলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গেও। বৃহস্পতিবার বিকেলে অভিযুক্তের বাড়িতে তালা ভেঙে ঢুকেছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। সঙ্গে ছিল কেন্দ্রীয় ফরেনসিক টিম। ওইদিন রাতেই অভিযুক্তের বাড়িতে গিয়েছিলেন সিবিআই ডিআইজি অখিলেশ সিং। অভিযুক্তের বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল নমুনা। নির্যাতিতার বাড়ি থেকেও তার জামার কিছু অংশ সংগ্রহ করা হয়েছিল আগেই। আর শুক্রবার নেওয়া হয়েছিল মূল অভিযুক্তের জামার টুকরো। এর আগে পুলিশ (Police) ঘটনাস্থল থেকে বীর্যের নমুনা সংগ্রহ করেছিল।
প্রসঙ্গত, নাবালিকার রহস্য মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল নদিয়ার হাঁসখালিতে। অভিযোগের তির ওই নাবালিকার প্রেমিকের দিকে। অভিযোগ, প্রেমিকের জন্মদিন উপলক্ষ্যে তার বাড়ি গিয়েছিল ওই নাবালিকা। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ নাবালিকাকে এক অপরিচিত মহিলা বাড়ি ফিরিয়ে দিয়ে যান। বাড়ি ফেরার পর বোঝা যায় ওই নাবালিকা অসুস্থ। তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা হয় তার। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। ভোরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় আরও। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছিল, ভোরের দিকে মেয়ে ছটপট করতে থাকে। বোঝা যায় যন্ত্রণা কিন্তু কিসের যন্ত্রণা, তা বুঝতে পারেন না বাড়ির কেউ। সঙ্গে সঙ্গে মা বেরিয়ে যান গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ আনার জন্য। ওষুধ নিয়ে ফিরে এসে দেখেন মেয়ের দেহে প্রাণ নেই। এই ঘটনা নদিয়ার হাঁসখালি থানার গাজনা এলাকার। তারপর স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করে নাবালিকার পরিবার। বাড়ির সকলের অভিযোগ, নাবালিকাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। মৃতার পরিবারের দাবি, ব্রজের বাবার চাপেই হয়নি ময়নাতদন্ত। তাড়াতাড়ি করতে হয়েছে শেষকৃত্য। আরও অভিযোগ, সোহেল বিভিন্ন অসামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল। পুলিশকেও তা জানানো হয়েছিল বলে দাবি নাবালিকার পরিবারের। এক শ্মশানকর্মীর দাবি, ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই দাবি করা হয়েছিল দেহ। নির্যাতিতার পরিবারের আরও দাবি, অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্যের ছেলের বাড়ির চাপেই মৃত মেয়ের সৎকার করতে আসেনি কোনও পুরহিত।
