নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: দুর্গোৎসব কমিটির নাম প্রাচীনতম সর্বজনীন। অবিভক্ত মেদিনীপুরের এটাই সবচেয়ে পুরনো দুর্গাপুজো। তবে যতটা সমাজের কল্যাণে, তার চেয়ে অনেক বেশি ইংরেজদের বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছিল এই পুজো। উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন বিমল দাশগুপ্ত, বীরেন শাসমল, ব্যারিস্টার ক্ষিরোদবিহারী দত্ত, রাজা দেবেন্দ্রলাল খানেরা। তবে বিপ্লবীরা যাতে দুর্গাপুজোর আয়োজন করতে না পারে, তার জন্য কম চেষ্টা করেনি গোরা পুলিশ আধিকারিকরা।
মণ্ডপের জন্য জমি দেওয়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। শেষমেষ দেবনারায়ণ ভকতের বাড়ির সামনের উন্মুক্ত জমিতে শুরু হয় পুজোর আয়োজন। আগে অনেক জাঁকজমক করে পুজো হত এখানে। সারাজেলার মানুষজন ভিড় করতেন পুজোর দিনগুলিতে। ধীরে ধীরে জেলার অন্যান্য প্রান্তেও দুর্গাপুজোর প্রচলন হয়। কিন্তু প্রাচীনতম সর্বজনীনের পুজোর জৌলুসে এতটুকু ভাটা পড়েনি কখনও। ব্যতিক্রম ঘটল গতবছর। করোনা পরিস্থিতিতে বাজেট কমিয়ে অনেকটাই ছোট করে দেওয়া হয়েছে পুজো। এবছরও সরকারি গাইডলাইন মেনেই তৈরি হচ্ছে খোলামেলা মণ্ডপ।
মাস্টারদা সূর্য সেনকে ফাঁসির মঞ্চে ঝোলানো অবিভক্ত মেদিনীপুরের জেলাশাসক জেমস পেডি, খড়্গপুরের হিজলির জেলে বন্দিদের হত্যার ষড়যন্ত্রকারী জেলাশাসক রবার্ট ডগলাস, এবং অত্যাচারী জেলাশাসক বার্নার্ড বার্জকে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছিলেন বিদ্রোহীরা। তাদের হত্যা করা বিদ্রোহী দীনেশ গুপ্ত, বিমল দাশগুপ্ত ও প্রদ্যুৎ ভট্টাচার্যকে ছেড়ে কথা বলেনি ইংরেজরা। সময়টা তখন ১৯৩৪ থেকে ১৯৩৬ সাল। পর পর তিন জেলাশাসকের খুনে তখন মেদিনীপুর শহর ছন্নছাড়া। গ্রামবাসীদের ওপর গোরা পুলিশদের অত্যাচার দ্বিগুন হয়ে গেল। বিপ্লবীরাও ইতিউতি গা ঢাকা দিতে লাগলেন। এমন সময় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সামাজিক বন্ধনে সর্বজনীন দুর্গাপুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিপ্লবীরা। সেই পুজোই আজ ৮৫ বছরে পা দিল।
পুজো কমিটির বর্তমান সম্পাদক মিলন আঢ্য জানান, অন্য়ান্য বছর থিমের পুজো করা হলেও গতবছর থেকে ফের সবেকিয়ানায় ফিরেছেন তাঁরা। মণ্ডপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই একচালার প্রতিমা গড়ে তোলা হচ্ছে, তার সঙ্গে আকর্ষণীয় ডাকের সাজ। করোনাকালে এবছরও এলাকাবাসীর থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছে না বলেই জানালেন সম্পাদক। কমিটির সদস্য ও এলাকার কিছু ব্যবসায়ীদের মিলিত অর্থেই পুজোর আয়েজন। তার মধ্যেই পঞ্চমীর দিন বস্ত্রবিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চলেছেন তাঁরা।