নিজস্ব প্রতিনিধি,সন্দেশখালি: শুক্রবার সন্দেশখালিতে ইডি অফিসারদের উপর হামলার ঘটনার পর পলাতক শাজাহান এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে লোক আউট নোটিশ জারি করল ইডি । দেশের সবকটি বিমানবন্দরে এই লুক আউট নোটিসের সার্কুলার শনিবার বিকেলের মধ্যে পাঠানো হয় ইডির পক্ষ থেকে। কারণ সিজিও কমপ্লেক্স- এ(CGO Complex) দায়িত্বে থাকা ইডি অফিসাররা মনে করছেন শাজাহান তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিদেশে গা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করবে। তদন্তে এটি জানতে পেরেছে ফুটান এবং দুবাইয়ে তার রীতিমতো যাতায়াত রয়েছে। বাংলাদেশে তার একাধিক আস্তানা রয়েছে ।
শনিবার সকালে ইডির সূত্র অনুযায়ী, একটি এটিএম কাউন্টার থেকে শাহজাহানের এটিএম কার্ড ব্যবহার করে বেশ কিছু নগদ টাকা তুলে নেওয়া হয়। এরপরই দুপুরের মধ্যে দিল্লির অনুমতি নিয়ে দেশের সব বিমানবন্দরে পলাতক শাজাহান(Sazahan) ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে লোক আউট সার্কুলার জারি করা হয় সিজিও কমপ্লেক্স থেকে। এর পাশাপাশি গোটা ঘটনা নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হতে চলেছে ইডি। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালি এখন থমথমে। পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। বাজার, হাট, রাস্তা, তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়, পঞ্চায়েত অফিস সহ গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল রাস্তার মোড় সব জায়গায় মুড়ে ফেলা হয়েছে কঠোর পুলিশি নিরাপত্তায়। কিন্তু হদিস নেই শেখ শাহজাহানের। প্রশ্ন উঠেছে তিনি কি সন্দেশখালিতে আছেন, না কি নদী পথে বাংলাদেশ পালিয়ে গেছেন গ্রেফতার এড়াতে। যদিও রাত পোহালেই বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন। বিভিন্ন মহলের ধারণা এই নির্বাচনের সময় সেখানে আস্তানা নেওয়াটা এখন দুষ্কর শেখ শাহজাহানের। কারণ এর আগেও তিনজন বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনায় তাকে যখন সিবিআই খুঁজছিল তখন সে বাংলাদেশে গা ঢাকা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
নদীপথে পালিয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। সুতরাং সেই ঘটনার পুনবৃত্তি যে হবে না সেটাও কেউ বলতে পারেন না । অন্যদিকে সন্দেশখালীর বিষয় নিয়ে কালীঘাট(Kalighat) বা নবান্নের এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। কিছু তৃণমূল নেতারা যে যার মত করে দলের হয়ে বক্তব্য রাখছেন সন্দেশখালি নিয়ে। যদিও হয়তো পরবর্তীকালে সেই বক্তব্যের দায় এড়াতে পারে দল এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। রাজনীতির সবদিক খোলা রেখেই তৃণমূল কংগ্রেস এগোচ্ছে সন্তর্পনে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে খুশি থাকলেও সরাসরি বাহবা দিতে পারছে না যা কেউ করে দেখাতে পারেনি তা করে দেখিয়েছে শেখ শাহজাহান। কারণ তাহলেই উস্কানির প্রশ্ন উঠবে শাসকদলের ও সরকারের বিরুদ্ধে। এমনিতেই ইডির উপরে ও সংবাদমাধ্যমের উপরে শাহজাহান অনুগামীরা হামলা করে ব্যাগ ফুটে নিয়ে গিয়েছে রাজ্যের শাসক দলকে ।
সামনের লোকসভা নির্বাচন এবং তাকে কেন্দ্র করে আরো ইডি এবং সিবিআই কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা তৃণমূল সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলের। পাল্টা হিসেবে সন্দেশখালি থানায় শনিবার সকালেই ইডি এবং সিআইএসএফ(CISF) জওয়ানদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন শেখ শাহজাহানের পরিবার। তাদের অভিযোগ অবৈধভাবে তাদের বাড়িতে প্রবেশ করেছে এবং ভাঙচুর চালিয়েছে ইডি এবং সিআইএসএফ জওয়ানরা। প্রতিবেশীরা বাধা দিতে এলে তাদের উপরেও চড়াও হয় সিআইএসএফ জওয়ানরা। যদিও বসিরহাট জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার এই অভিযোগ স্বীকার করেছেন। এদিকে শনিবার সন্দেশখালিতে গিয়ে দেখা যায় শাহজাহানের তিনটি প্রাসাদ সমান বাড়ি জনমানব শূন্য। তার বাড়ির উঠোনে করে রয়েছে সরকারি ত্রিপল। বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি ও সাম্রাজ্য ছেড়ে শাজাহান পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোথায় বা ঢাকা দিয়েছেন সেই প্রশ্নের উত্তরই খুঁজছে ইডি(ED)।