নিজস্ব প্রতিনিধি: বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো। মোদি বাহিনী চেয়েছিল দেশের নির্বাচন কমিশনকে তাঁদের তাঁবেদার সংস্থায় পরিণত করতে। সে কাজে তাঁরা অনেকটাই সফলও হয়েছিল। একুশের বিধানসভা নির্বাচন কালে কমিশনের বহু পদক্ষেপ, সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। কিন্তু কোথাও গিয়ে দেশের এই সাংবিধানিক সংস্থার মাথাদেরও মনে হয়েছে বিষয়টি বড্ড একপেশে হয়ে গিয়েছে। তাই এখন শুরু হয়েছে গেরুয়া বাঁধন কেটে বেড়িয়ে আসার পালা। আর তাই বোধহয় গেরুয়া শিবিরকে কড়া ধাক্কা দিয়ে মঙ্গলবার সকালেই বাংলার ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করে দিল নির্বাচন কমিশন। আগামী ৩০ অক্টোবর বাংলার চারটি বিধানসভা কেন্দ্র যথা – খড়দহ, শান্তিপুর, গোসাবা ও দিনহাটায় উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা হবে ২ নভেম্বর।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে হারের জেরে বঙ্গ বিজেপি শিবির কার্যত এখন বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছে। দলে দলে নেতা থেকে বিধায়ক বিধায়ক ছাড়ছেন। সঙ্গে দল ছাড়ছেন কর্মীরাও। বহু চেষ্টা করেও, বহু আবেদন নিবেদন বৈঠক করেও এদের ধরে রাখতে পারছে না বিজেপি। এমনকি দলের হেভিওয়েট পদ দিয়েও তাঁদের ধরে রাখতে ব্যার্থ বিজেপি। এই অবস্থায় তাঁরা চাইছিল না দ্রুত কোনও নির্বাচনের মুখোমুখি দাঁড়াতে। কিন্তু একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময় জাতীয় নির্বাচন কমিশন যেমন একপেশে মনোভাব নিয়েছিল, সেই জায়গা থেকে তাঁরা নিজেরাই এখন অনেকটা সরে আসতে চাইছেন। কমিশনের সিদ্ধান্তে ও পদক্ষেপে তাঁর আঁচ মিলছে। এমতাবস্থায় বিজেপি কমিশনের ওপর চাপ তৈরি করলেও তা নিয়ে আর মাথা ঘামাতে চাইছে না কমিশন। তাই বাংলায় যখন বিজেপি বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছে ঠিক তখনই গেরুয়া শিবিরকে রীতিমত বিপাকে ফেলে দিল কমিশন। না তৃণমূল, না বিজেপি, কার্যত কাকপক্ষীর কাছেও খবর ছিল না মঙ্গল সকালে বাংলার চার আসনে উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করে দেবে কমিশন। তৃণমূলের কাছে কমিশনের এই ঘোষণা কার্যত আশির্বাদ হতে চলেছে আর বিজেপির কাছে কার্যত বিনা মেঘে বজ্রপাত।
এর আগে কমিশন ভবানীপুরের উপনির্বাচন এবং সামসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরের স্থগিত হয়ে যাওয়া ভোটগ্রহণের জন্য ৩০ সেপ্টেম্বরের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছিল। সেই সময় বিজেপি প্রশ্ন তুলেছিল, শুধু ভবানীপুরেই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে কেন? রাজ্যের বাকি চার আসনে কেন উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হচ্ছে না? শুধু প্রশ্ন তোলাই নয়, এই নিয়ে মামলাও ঠুকেছে বিজেপি। সেই সব মামলার রায় আসার আগেই এদিন কমিশন রাজ্যের বাকি থাকা ৪ আসনেও উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণে করে দিয়ে বিজেপিকে কড়া ধাক্কা দিল। আসলে গেরুয়া শিবির চাইছিলই না উৎসবের মরশুমে কোনও ভোট করাতে। এর নেপথ্যে তাঁদের লক্ষ্য ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্য। কেননা বিধায়ক না হয়ে তৃণমূলনেত্রী আগামী ৫ নভেম্বর পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারতেন। তাই বিজেপি প্রথম থেকেই চাইছিল এই বছর যাতে আর কোনও নির্বাচন যেন না হয় বিধানসভার ক্ষেত্রে। কিন্তু তাঁদের সেই আশায় জল ঢেলে দিল কমিশন। ৫ নভেম্বরের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাগ্য নির্ধারণ তো হয়েই যাচ্ছে সঙ্গে চারটি ফাঁকা আসনে ভোটও হয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য এদিন কমিশন যে বিজ্ঞপ্তি বার করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে বাংলা সহ দেশের ১৩টি রাজ্যের মোট ৩০টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন হবে আগামী ৩০ অক্টোবর। সেই সঙ্গে হবে ৩টি লোকসভা কেন্দ্রেরও উপনির্বাচন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা হবে আগামী ২ নভেম্বর ধনতেরাসের দিন। এদিনের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে বাংলার ৪টি বিধানসভা আসনের ক্ষেত্রে আগামী ১ অক্টোবর গেজেট প্রকাশিত হবে। সেদিন থেকেই জমা দেওয়া যাবে মনোনয়ন। ৮ অক্টোবর মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষদিন। ১১ তারিখ হবে স্ক্রুটিনি। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিন ১৬ অক্টোবর।