নিজস্ব প্রতিনিধি: স্ত্রীর পরকিয়ায় তিতিবিরক্ত হয়ে শেষে নিজের ৬ বছরের ছেলেকে খুন করে আত্মঘাতী হলেন রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল হোমগার্ড তথা প্রাক্তন মাওবাদী হেমন্ত হেমব্রম ওরফে বুড়ু। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে পুরুলিয়া শহরের বেলগুমা পুলিশ লাইনে। সোমবার সকালে ওই পুলিশ লাইনের কোয়ার্টার থেকে হেমন্ত ও তাঁর ছেলে সোমজিৎ হেমব্রমের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সঙ্গে এটাও জানা গিয়েছে, ছেলেকে খুন করে নিজে আত্মঘাতী হওয়ার আগে স্ত্রী চম্পা হেমব্রমকেও খুনের চেষ্টা করেন হেমন্ত। কিন্তু কোনওরকমে ওই কোয়ার্টার থেকে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন চম্পা।
জানা গিয়েছে, হেমন্ত হেমব্রম ওরফে বুড়ু এবং তাঁর স্ত্রী চম্পা পুরুলিয়া জেলার আড়শা থানা এলাকার তানাসি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। একসময় দুইজনই মাওবাদীদের অযোধ্যা স্কোয়াডের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। সেই স্কোয়াড থেকেই অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যান হেমন্ত। অযোধ্যা স্কোয়াড ভেঙে যাওয়ার পর ঝাড়খণ্ডের দলমায় হেমন্তর সঙ্গে চম্পার প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। সেই জায়গা থেকেই তাঁরা দুজনে বিয়ে করে সংসার পাতার সিদ্ধান্ত নেন। সেই মতন ২০১৩ সালে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন হেমন্ত। তারপর চম্পাও পুলিশের কাছে ধরা দেয়। আত্মসমর্পণের বছর দুয়েকের মধ্যে তাঁরা দুইজনই রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল হোম গার্ডের চাকরি পান। চাকরি পাওয়ার পর থেকে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে বেলগুমার পুলিশ লাইনের আবাসনেই থাকতেন হেমন্ত। এদিন চম্পা দাবি করেছেন, হেমন্ত তাঁকে সন্দেহ করত। সেই জায়গা থেকেই এদিন তাঁকে খুনের চেষ্টা করে হেমন্ত। তিনি প্লাইয়ে গিয়ে প্রাণে বাঁচলেও ছেলেকে খুন করে পরে আত্মঘাতী হন হেমন্ত।
যদিও হেমন্তের সহকর্মীদের দাবি, হোমগার্ডের চাকরি করতে গিয়ে এক পুলিশকর্মীর সঙ্গেই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন চম্পা। সেই ঘটনার জেরেই হেমন্তের সঙ্গে চম্পার অশান্তি লেগে থাকত নিত্যদিন। হেমন্ত বহু বার চম্পাকে বলেছে ওই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে। কিন্তু চম্পা সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে না চাওয়ায় সম্ভবত এই খুনের ঘটনা ঘটিয়েছেন হেমন্ত। এমনটাই অনুমান তাঁর সহকর্মীদের। ঘটনার জেরে পুলিশ চম্পাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি হেমন্ত ওতাঁর ছেলের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগণ এদিন জানিয়েছেন, ‘স্পেশ্যাল হোমগার্ড সন্তানকে খুন এবং স্ত্রীকে খুনের চেষ্টা করে। তবে স্ত্রী পালিয়ে যাওয়ায় বেঁচে যান। আত্মঘাতী হন হোমগার্ড। তদন্ত চলছে। ঠিক কী কারণে হোমগার্ড এমন সিদ্ধান্ত নিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’