আজ কৌশিকী অমাবস্যা। আর কালী (KALI) মন্দিরের সঙ্গে সাহিত্যের ছোঁয়া আনলে আপনার মনে আসতে বাধ্য বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাস। সেই কালী মন্দির রয়েছে এখনও। মন্দিরের বাম দিকে বাঁধা ছিলেন নবকুমার। কাপালিকের কন্যাসম কপালকুণ্ডলা তাঁকে উদ্ধার করে ডান দিকের দরজা দিয়ে পালিয়েছিলেন।
কাঁথিতে ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালীন দরিয়াপুর ঘুরতে আসতেন বঙ্কিমচন্দ্র। নদীর পাড়েই মন্দির। আর চারিদিকে রয়েছে জঙ্গল। কথিত আছে, প্রায়ই মন্দিরে স্নান করতে আসতেন এক কাপালিক। তা দেখে আর কল্পনার তুলি বুলিয়ে সাহিত্য সম্রাট রচনা করেছিলেন বিখ্যাত এই উপন্যাস।
সত্যিই এই মন্দিরটি রসুলপুর নদীর সামনে। অদূরেই রয়েছে মোহনা। গঙ্গাসাগর থেকে এই নদীতে জলপথে আসতে সময় লাগে প্রায় ২ দিন। কল্পনার সঙ্গে বাস্তবের কী নিখুঁত পাঞ্চ! এই মন্দিরেই নবকুমার- কপালকুণ্ডলার রোমাঞ্চকর প্রেমের কাহিনি গড়ে উঠেছিল বঙ্কিম কল্পনায়।তবে এখন আর মন্দিরে দেবী বিগ্রহ নেই। আজ থেকে প্রায় ৪ বছর আগে এই মন্দিরকে নতুন করে গড়ে তোলা হয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের উদ্যোগে।
অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার সঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্র যোগ নিয়ে জেলাবাসী আজও গর্বিত। চাকরিসূত্রে বঙ্কিমচন্দ্রও বেশ কিছুকাল এই জেলায় ছিলেন। ১৮৬০ সালের জানুয়ারিতে তিনি তৎকালীন নেগুয়া মহকুমার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হয়ে এসেছিলেন কাঁথির কাছে। নভেম্বরে বদলি হয়ে চলে গিয়েছিলেন খুলনায়। কিন্তু এই দশ মাসের মেদিনীপুরে বসবাসের ফলে তাঁর সাহিত্য সৃষ্টিতে বর্তমান পূর্ব মেদিনীপুরের ‘দরিয়াপুর’ গ্রাম সকলের দর্শনীয় স্থান। স্থানীয় নেগুয়া ও কাঁথি মিলিয়ে দু’জায়গার বাংলোতেই থেকেছেন সাহিত্য সম্রাট। উল্লেখ্য, তখনও তিনি স্বনামধন্য সাহিত্যিক নন, শুধুমাত্র সরকারি চাকুরে। তারপর ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত হয় ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাস যা বাংলা সাহিত্যে এক মাইল স্টোন। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের সৃষ্টির মধ্যে অন্যতম কপালকুণ্ডলা। বর্তমানে কপালকুণ্ডলা খ্যাত এই মন্দির কাঁথি ২ নম্বর ব্লকের দারিয়াপুর এলাকায়।
কালী মন্দিরের দায়িত্বে থাকা ভূদেব জানা বলেছিলেন, ‘বংশপরম্পরায় আমরা এই মন্দিরের দায়িত্বে রয়েছি। গত ৪ বছর আগে পুরানো মন্দির ভেঙে নতুন মন্দির তৈরি করা হয়েছে। মন্দির তৈরি হলেও এখানে নেই কোনও মূর্তি। প্রতিমা না থাকলেও আমি প্রতিদিন এখানে পুজো দিয়ে প্রদীপ জ্বালাই। প্রতিদিনই পর্যটকরা আসে তাঁদেরকে মন্দিরের দরজা খুলে দেখাই। কালীপুজোর দিন মন্দিরে মোমবাতি এবং প্রদীপ জ্বালাই’।
আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষকদের দাবি, এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কাঁথির কিশোরনগর গড় রাজবাড়ির রাজা যাদব রাম রায়। আবার কারও মতে এই রাজা শুধুমাত্র মন্দির সংস্কার করেছিলেন। আগে এই মন্দির না কি ভৈরবী চণ্ডীর ছিল। পরে দেবী পূজিতা হতেন চণ্ডী রূপে। আর বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস রচনা আর তার কদর হওয়ার পরে দেবীর নাম মুখে মুখে হয়ে যায় কপাল্কুণ্ডলা। পূজিতা হতেন কালী রূপেই। এখন অবশ্য মন্দিরে বিগ্রহ নেই। গ্রামবাসীদের উদ্যোগে এই মন্দিরের কাছেই নির্মাণ করা হয়েছে আরও এক নতুন মন্দিরে। পুজো হয় এখানেই। আর মন্দিরের নাম? কপালকুণ্ডলার নতুন মন্দির।
– নিসর্গ নির্যাস মাহাতো