27ºc, Haze
Tuesday, 28th March, 2023 11:31 pm
সুব্রত রায়: মাওবাদীদের সন্ত্রাসে একসময় তালাবন্দি লালগড় থানায় এখন ফুটছে রংবেরঙের ফুল। বারুদের গন্ধের বদলে লালগড় থানা প্রাঙ্গণ ফুলের গন্ধে ম- ম করছে। যিনি লালগড় থানা(Lalgar P.S.) প্রাঙ্গনে এই রংবেরঙের ফুল ফুটিয়েছেন তিনি একজন ওই থানারই সাব-ইন্সপেক্টর। তার নাম সুব্রত সামন্ত। প্রায় হাজারটি টবে রংবেরঙের ফুল ফুটিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। এক সময় মাওবাদীদের(Maoist) সন্ত্রাসে যে লালগড় থানায় সাধারণ মানুষের যেতে ভয় লাগতো, দিনে – দুপুরে থানার ছাদে বন্দুক উঁচিয়ে বসে থাকতে হতো পুলিশকে, সেখানেই ছাত্র-ছাত্রী থেকে পথ চলতি সকলেই ভিড় জমাচ্ছেন প্রতিনিয়ত ।
উদ্দেশ্য রংবেরঙের ফুল চাক্ষুষ করা। শুধু তাই নয়, লালগড় থানার প্রাঙ্গণে ঢুকে সেই রংবেরঙের ফুলের বাগানে দাঁড়িয়ে সেলফিও তুলছেন আজকের প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীরা। যারা প্রয়োজনীয় কাজে লালগড় থানায় আসছেন, থানায় ঢুকে তারা অবাক হয়ে যাচ্ছেন। ওই সাব ইন্সপেক্টর(Sub-Inspector) এর নাম বদলে হয়ে গিয়েছে ফুলবাবু। ওই ফুলবাবু ৫৯ বছর বয়সে রংবেরঙের ফুল ফুটিয়ে থানায় আসা সকলের মনে শান্তির বার্তা এনে দিয়েছে। লালগড় থানার প্রাঙ্গণে বর্তমানে ফুটেছে ১৬ প্রজাতির বিভিন্ন রংয়ের বড় বড় গোলাপ ফুল , ২৮ ধরনের প্রজাতির চন্দ্রমল্লিকা, ২০ প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের ডালিয়া, ১২ প্রজাতির পুটিয়া, জারবেরা ৩০ প্রজাতির, গাঁদা ৫ধরনের, সেলোসিয়া ৪ ধরনের। এছাড়া ওই বাগানে স্থান পেয়েছে মরশুমের ফুল স্টক, ভারবেনা, রুট বেকিয়া , ফ্র ক্লশ ও ডায়েনথাস।
এছাড়াও লালগড় থানার ছাদে গড়ে তোলা হয়েছে এক অস্থায়ী সবজি বাগান। যেখানে ফলছে লাল রংয়ের বাঁধাকপি, সবুজ রঙের ফুলকপি, গোলাপি হলুদ। আরো রয়েছে সাদা বেগুন, লাল লিডকি, কালো তাল, সবুজ তাল ,বেলুন বেগুন ৬ প্রজাতির। এছাড়া ফুল আছে বিভিন্ন রঙের টমেটো ও লাল, হলুদ, সবুজ রঙের ক্যাপসিকাম, বিভিন্ন রঙের ও প্রজাতির লঙ্কা। এছাড়াও রয়েছে আঙ্গুর, আপেল, সজনে, পেঁপে ও লম্বা এবং গোল লাউ। আছে দু ধরনের কুল গাছও। ওই সাব ইন্সপেক্টর অর্থাৎ ফুলবাবু জানিয়েছেন, এই গাছগুলির চারা তিনি কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, হরিপাল, সিঙ্গুর, বাগনান ও জকপুর থেকে সংগ্রহ করেছেন। ওই সাব ইন্সপেক্টর যখন প্রথম ঘাটাল থানায় কর্মরত ছিলেন সেই সময় একটি পুষ্প প্রদর্শনী দেখে তার মনে বাগান তৈরির ইচ্ছে জাগে। এরপর থেকে যখন তার যে থানায় পোস্টিং হয়েছে, তিনি সেখানে গিয়ে বাগান তৈরি করেছেন। ডিউটির পর ছুটি পেলেই তিনি এই বাগান পরিচর্যার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। লালগড়(Lalgar) থানায় তার এই বাগান তৈরীর কাজে সকল অফিসার এবং সহকর্মীরা সহযোগিতা করছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। ফুলবাবুর এই সহযোগিতায় লালগড় থানায় একসময়ের গামছা ঢাকা মুখগুলির বারুদের গন্ধের বদলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এক সুমধুর পরিবেশ।