নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার মাটিতে বামেদের বিরুদ্ধেই লড়াই করে তাঁর রাজনৈতিক উত্থান। সেই লড়িয়ের জন্যই তিনি বাংলার অগ্নিকন্যা। সেই লড়াই তাঁকে জমি আন্দোলনের ভূমি থেকে রাজ্যের মসনদে পৌঁছে দিয়েছে। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলার মানুষ তাঁদের হৃত স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছেন। তাঁর লড়াইয়ের জন্যই বাংলার মাটি থেকে বিদায় নিয়েছে ৩৪ বছরের একটা অপদার্থ, অত্যাচারী সরকার। এবার পালা ভারত থেকে বিজেপিকে তাড়াবার। সেই তাড়ানোর বার্তাই কলকাতার মাটিতে দাঁড়িয়ে দেশবাসীকে দিয়ে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। সাফ জানালেন, ‘জেদ ছিল। সিপিএমকে(CPIM) বাংলা(Bengal) থেকে সরাব, আমরা সরিয়েছে। কেউ ভাবতে পারেনি যে বাংলা থেকে সিপিএম বিদায় নেবে, কিন্তু সেটা হয়েছে। আজ আমাদের লড়াই দিল্লি(India) থেকে বিজেপিকে সরানোর। সিপিএমকে সরিয়েছি। বিজেপিকেও(BJP) সরাবো। আমি চাই এই যুদ্ধে আপনার বাঘ-সিংহের মতো লড়াই করুন।’
এদিন মমতা নিজেই তাঁর লড়াইয়ের ইতিহাস তুলে ধরেন বক্তব্যের মাঝে। আসলে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, সিপিএম তাঁর ওপর অজস্র নির্মম অত্যাচার করেও তাঁকে থামাতে পারেনি। আগামী দিনে বিজেপি যতই অত্যাচার করুক না কেন, তাঁকে থামাতে পারবে না। তিনি বাংলার মসনদ থেকে সিপিএমকে সরিয়েছেন, ভারতের মসনদ থেকে বিজেপিকেও সরাবেন। তিনি এদিন বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে আমাদের রাজনীতি করতে হয়েছে। অনেক মার খেয়েছি। মার খেয়ে কোমরে আঘাত লেগেছে। এখনও আমি কোমরে বেল্ট না পরে রাস্তা গিয়ে হাঁটতে পারি না। মাথায় মেরেছিল। এখন চোখে সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তার দেখাতে হবে, কিন্তু সময় পাচ্ছি না। সারা শরীর আমার ভগ্ন। আমি জিন্দা লাশ হয়ে বেঁচে রয়েছি। কিন্তু জেদ ছিল সিপিএমকে বাংলা থেকে সরাব, আমরা সরিয়েছে। কেউ ভাবতে পারেনি যে বাংলা থেকে সিপিএম বিদায় নেবে, কিন্তু সেটা হয়েছে।’
প্রত্যেক বছর মেয়ো রোডে গান্ধীর মূর্তি পাদদেশে ২৮শে অগাস্ট, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হয়। এবারও TMCP-র প্রতিষ্ঠা দিবসের সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সমাবেশের কারণে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা মেয়ো রোডে জড়ো হন। তাঁদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নিজের ছাত্রজীবন ও রাজনৈতিক উত্থানের গল্প তুলে ধরেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী। বলেন, ‘আমায় যদি জিজ্ঞাসা করেন যে আপনার কাছে সবথেকে গর্বের বিষয় কোনটা? আমি বলব, আমি ছাত্র রাজনীতির প্রোডাক্ট। যোগমায়াদেবী কলেজে পড়ার সময় আমি সেখানকার ছাত্র পরিষদের ইউনিটের সভাপতি ছিলাম। মাদার ডেয়ারিতে কাজ করে, সকালে কলেজ যেতাম। আয়ের টাকা দিয়ে দলের পতাকা কিনতাম। আমাদের মূল লড়াই ছিল ডিএসও-র সঙ্গে। ওরা আমাকে দলে টানার অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি।’
এরপরেই মমতা চলে আসেন তাঁর ওপর আক্রমণের প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম তো সম্প্রতি হয়েছে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আগেও অনেক ঘটনা ঘটেছে। আমার মাথায় ডান্ডা দিয়ে মারার চেষ্টা করেছে। আমার হাতের হাড় ভেঙে গিয়েছে। ১৯৯৩ সালের ২১শে জুলাই আমাকে মেরেছিল। লোহার তার, লোহার চেন দিয়ে পুরো জায়গাটা খালি করেছিল। আমি হঠাৎ দেখলাম, আমায় তাড়া করল। আমার সঙ্গে ছিলেন দিলীপ মজুমদার। তিনি মারা গিয়েছেন। প্রথমে আমায় একটা ডান্ডা মারল। মাথার ডানদিক থেকে গলগল করে রক্ত পড়ছে। আমি ভাবছি যে পুলিশের ডান্ডা ওরা কোথা থেকে পেল? ততক্ষণে ওরা মাথার বাঁ-দিকে মারল। কোনওরকমে হাত দিয়ে ঢেকে মাথাটা বাঁচিয়েছিলাম। আমার হাতে একাধিকবার অস্ত্রোপচার হয়েছে।’