এই মুহূর্তে




উত্তরবঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যু বেড়ে ২৭, সোমবার ফের আলিপুরদুয়ার জেলায় প্রবল দুর্যোগের পূর্বাভাস

নিজস্ব প্রতিনিধি: উত্তরবঙ্গে দুর্যোগে রবিবার সন্ধ্যে পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। সোমবার লক্ষ্মী পুজার দিন উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(CM Mamta Banerjee)। একটানা বৃষ্টিতে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে জল বইছে তিস্তা, জলঢাকা , তোর্সা নদীর। লাল সর্তকতা জারি হয়েছে। শিলিগুড়ি – মিরিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। ধস নেমেছে ঋষি খোলা , পেডোংয়ের অনেক রাস্তায়। উত্তরবঙ্গের বিপর্যয় মৃতদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে রবিবার কলকাতায় দুর্গাপুজোর কার্নিভাল (Carnival)থাকলেও উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতির ওপর রবিবার সকাল থেকেই নজর রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাঁচ জেলাশাসককে নিয়ে ইতিমধ্যে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী পর্যটকদের জন্য বিশেষ বার্তা দিয়েছেন তিনি। অসমের কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে বন্যায় প্লাবিত হয়ে বহু বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয় প্রতিবছর। এবার সেই একই ঘটনা ঘটলো উত্তরবঙ্গতে। শনিবার রাতভর বৃষ্টিতে উত্তরবঙ্গে দুর্যোগের হাত থেকে রেহাই পেল না বন্য প্রাণ। গরু মারা জঙ্গল লাগোয়া জলঢাকা নদীতে ভেসে এল গন্ডারের দেহ। ওই এলাকাতেই নদী পেরোতে গিয়ে জলঢাকা নদীর মাঝে আটকে পড়ে হাতির একটি দল। নকশালবাড়িতে মেচি নদীর স্রোতে তলিয়ে যায় একটি হাতির বাচ্চা। রবিবার ৩০টি হাতির একটি দল মেচি নদী পার হচ্ছিল সেই সময় একটি হাতির বাচ্চা দলছুট হয়ে ভারী বৃষ্টিতে আচমকা নদীর জলে পড়ে গেলে তলিয়ে যায়। রাতভর বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি দার্জিলিং, মিরিক ,সুখিয়াপোখরির বিস্তীর্ণ এলাকা। উত্তরবঙ্গের সব নদীর জলস্তর বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে।

জল ঢুকেছে তরাই ডুয়ার্সের বনাঞ্চলেও। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান থেকে একটি গন্ডার ভেসে যাচ্ছে সেই ছবি ভাইরাল হয়েছে সর্বত্র। ২৭ নম্বর জাতীয় সড়কে সিল তোর্সা সেতু থেকে ওই ভিডিও তোলা হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের জলে প্রতিবছর অসমের কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান প্লাবিত হয়। বহু বন্যপ্রাণী মৃত্যু হয়। এবার সেই একই ঘটনা ঘটলো উত্তরবঙ্গে। শনিবার সন্ধ্যে থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হয়েছে দার্জিলিং, কালিংপং সহ পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায়। একাধিক জায়গায় ধ্বস নেমে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। দার্জিলিং থেকে একাধিক জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। জল এবার নামছে সমতলে। আর তাতেই বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে উত্তরবঙ্গের সমতল এলাকা গুলিতে। ভুটান এবং পাহাড়ে ভারী বৃষ্টির জন্য জল নেমে এসে প্লাবিত ডুয়ার্স সহ উত্তরবঙ্গের সমতলের বিস্তীর্ণ এলাকা।অবিরাম বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত পাহাড়, ১৭ জনের মৃত্যু, অবশেষে পরিস্থিতি সামলাতে নামল সেনা।দার্জিলিং, শনিবার থেকে উত্তরবঙ্গের পাহাড়জুড়ে অবিরাম বৃষ্টিতে দার্জিলিং সহ পার্বত্য অঞ্চলে নেমেছে ভয়াবহ বিপর্যয়। শনিবার রাতভর ভারী বর্ষণ ও ধসের ফলে ন্যাশনাল হাইওয়ে-১০ (NH-10)-এর বিভিন্ন অংশে রাস্তা বন্ধ হয়ে সিকিম ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

মিরিক ও দুধিয়া সংযোগকারী লোহার সেতুও ভেঙে পড়েছে, যা দার্জিলিং বিভাগের রাজ্য সড়কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেনা নিয়ন্ত্রিত সেতু ভেঙে যাওয়ার ফলে শিলিগুড়ি শহর থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ওপারে থাকা প্রায় ৩০ টি গ্রাম। ফলে মিরিক থেকে শিলিগুড়ির মধ্যে কোনো সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব নয়। একইসঙ্গে দার্জিলিং-শিলিগুড়ি রোডের হিলকার্ট রোড, দিলারাম ও হুইটসেল খোলা (কার্শিয়াং) এলাকায় বড় ধস নেমেছে। রোহিনী রোডেও একাধিক স্থানে গাড়ি চলাচল বন্ধ।দুধিয়া সেতুতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে আশেপাশের একাধিক গ্রাম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। পাশাপাশি, পুলবাজার সেতুও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, যার ফলে থানালাইন ও বিজনবাড়ি এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ স্থগিত। শেষ খবর লেখা অবধি প্রায় ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। দার্জিলিং এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (Add,S.P.)জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত মিরিকে ৯ জন, সুখিয়াতে ৪ জন, ও অন্যান্য অঞ্চল মিলে মোট ১৭জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। অন্যদিকে ভূমি ধসের কারণে মাটি চাপা রয়েছেন একাধিক। উদ্ধার কাজে সেনার পাশাপাশি বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর কাজ চালাচ্ছে। জলপাইগুড়ি, কলকাতা, এবং মালদা থেকে সিভিল ডিফেন্স ও এনডিআরএফ এর অতিরিক্ত দলকে ডাকা হয়েছে। দুধিয়াতে সেতু ভেঙে পড়ার কারণে এসএসবির ( SSB) ইঞ্জিনিয়ারেরা ড্রোনের মাধ্যমে পরিস্থিতি যাচাই করছেন। ইতি মধ্যেই PWB আধিকারিকদের সাথে যাতায়াত স্বাভাবিক করতে একাধিক গুরুত্বপুর্ন তথ্য আদান প্রদান চলছে।

প্রশাসন উদ্ধারকাজ শুরু করলেও, অবিরাম বৃষ্টিপাতের কারণে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, তিস্তা নদীর জলস্তর দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা অতীতের ভয়াবহ বন্যার স্মৃতি উজ্জীবিত করছে।জরুরি পরিষেবা, পর্যটক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরের ভিতরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাহাড়ে বৃষ্টির তীব্রতা অব্যাহত থাকতে পারে।প্রকৃতির রুদ্ররূপে পাহাড় আজ থমকে আছে—সেতু ভাঙা, রাস্তা ধসে পড়া, জলরাশির তোড়ে বিচ্ছিন্ন জীবন, সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি জনজীবন যেন এক প্রাকৃতিক পরীক্ষার মুখোমুখি।অন্যদিকে, এই পরিস্থিতিতে পুজোর ছুটিতে পাহাড়ে আটকে পরা পর্যটকদের ফেরার জন্য বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করেছে উত্তরবঙ্গ পরিবহন সংস্থা। রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী নিজে সেকথা জানিয়েছেন।সোমবার পরিস্থিতি পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী মুখ্য সচিবকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন উত্তরবঙ্গে।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

হাকিমপুর সীমান্তে বাংলাদেশ ফিরে যাওয়ার জন্য অনুপ্রবেশকারীদের ভিড় বাড়ছে

এবার রবিবারেও মিলবে কল্যাণী ,কৃষ্ণনগর এসি লোকাল ট্রেন ঘোষণা পূর্ব রেলের

শিলিগুড়ি জংশন স্টেশন থেকে উদ্ধার ৪ নাবালিকা, টাকার লোভ দেখিয়ে পাচারের অভিযোগ

উত্তরপ্রদেশের কুখ্যাত গ্যাংস্টার মহম্মদ সহরাব রিপন স্ট্রিট থেকে গ্রেফতার

SIR ফর্ম বিলির ক্ষেত্রে কলকাতা পিছিয়ে, দ্রুত কাজ শেষ করতে সময়সীমা নির্ধারিত করল কমিশন

বনগাঁয় সন্দেহজনক ব্যাগ খুলতেই বেরিয়ে এল মৃত মানুষের মাথার খুলি ও হাড়গোড়

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ