নিজস্ব প্রতিনিধি: যাদের আপত্তি নিয়ে জট পাকিয়েছে তাঁরাই বৈঠকে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় এবার গোটা প্রকল্পটি নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল। নজরে বার্ণপুর বিমানবন্দর থেকে নিয়মিত বিমান পরিষেবা চালু করার উদ্যোগ। মোদির প্রচেষ্টা ও রাজ্য সরকারের ইচ্ছায় বার্ণপুর বিমানবন্দর থেকে নিয়মিত বিমান পরিষেবা চালুর সম্ভাবনা রয়েছে সামনের বছরের শুরুর দিকেই। দ্রুত সেই পরিষবা চালু করতে চায় কেন্দ্র সরকার। কিন্তু জট পাকিয়েছে শো-দেড়েক গাছ। সেই সঙ্গে সেই সব গাছ ও জমির মালিকদের দাবিও এখন দ্রুত পরিষেবা চালুর পথে অন্তরায় হয়ে উঠেছে। ফলে এই জমি ও গাছ মালিকদের দাবি পূরণ না করেই যদি প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ নেয় তাহলে ভবিষ্যতে এই বিমানবন্দরকে ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের আন্দোলনের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।
পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার বার্ণপুরে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা সেইলের নিজস্ব বিমানবন্দর। দীর্ঘদিন সেই বিমানবন্দর কার্যত অব্যবহৃত অবস্থাতেই পড়েছিল। ২০১১ সালে বাংলায় পরিবর্তনের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে আরও বেশি সংখ্যক বিমানবন্দর চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই সময় কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ইউপিএ সরকারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বার্ণপুর বিমানবন্দরকে ফের সক্রিয় করে তোলার। যদিও সেই সময় এই বিমানবন্দর থেকে নিয়মিত বিমান পরিষেবা চালু করতে কোনও বিমান সংস্থাই সেভাবে আগ্রহ দেখায়নি। কিন্তু মোদি সরকার গত বছরেই সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিটি রাজ্যে মাঝারি ও ছোট শহরগুলি থেকেও যাতে বিমান পরিষেবা শুরু করা যায় তার জন্য কেন্দ্র পদক্ষেপ করবে। সেই প্রকল্পের মধ্যেই বার্ণপুর বিমানবন্দরকে যোগ করা হয়। ২০২২ সালের শুরু দিকেই এই বিমানবন্দর থেকে নিয়মিত বিমান পরিষেবা শুরু করতে চাইছে মোদি সরকার। তাতে রাজ্যেরও সমর্থন আছে। কিন্তু এখন জট পাকিয়েছে বার্ণপুর বিমানবন্দরের পাশে ব্যক্তিগত জমিতে থাকা প্রায় শো-দেড়েক গাছ।
বার্ণপুর বিমানবন্দর চালু করতে গেলে যে ওই গাছ সব কেটে ফেলতে হবে সেটা এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া জানিয়ে দিয়েছিল সেইল ও ইস্কো কর্তৃপক্ষকে। সেই মতো ওই সব ব্যক্তিগত জমির মালিকদের জানানো হয়েছিল গাছ কাটার বিষয়টি। ঘটনা এটাই যে, ওই সব জমির মালিকেরা গাছ কাটার বিরোধিতা করছেন না। পরিবর্তে তাঁরা দাবি তুলেছেন যে গাছ যে জমিতে রয়েছে সেই জমি অধিগ্রহণ করুক সরকার। পরিবর্তে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক বা অন্যত্র কোথাও সমপরিমান জমি দেওয়া হোক। কেননা গাছ কেটে দেওয়ার পরে যে জমি পড়ে থাকবে তা কোনও কাজে লাগবে না। সেখানে না চাষ করা যাবে, না বাড়ি করা যাবে। সেক্ষেত্রে জমির মালিকদের বড়সড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। আর প্রশাসন জোর করে গাছ কাটতে গেলে তাঁরা আন্দোলন গড়ে তুলবেন। জমির মালিকেরা এলাকা উন্নয়ন বা বিমানবন্দর চালুর বিরুদ্ধে নন। কিন্তু তাঁরা ক্ষতিগ্রস্থ হতে চান না। তাঁদের দাবি মানা না হলে তাঁরা আদালতে মামলা ঠুকতে বাধ্য হবেন।
এই অবস্থায় শনিবার রাজ্যের আইন ও পূর্ত দফতরের মন্ত্রী মলয় ঘটকের সভাপতিত্বে এক বৈঠক হয় এই সমস্যা মেটাবার জন্য। সেই বৈঠক আয়োজিত হয় জেলাশাসকের কার্যালয়ে। বৈঠকে জেলাশাসক এস অরুন প্রসাদ, আসানসোলের মহকুমা শাসক অভিজ্ঞান পাঁজা, ইস্কো কারখানার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (পার্সোনাল) অনুপ কুমার, ইস্কোর জেনারেল ম্যানেজার ভাস্কর কুমার সহ জেলা প্রশাসন ও আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠক এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু বৈঠকে ডাক পাননি যাদের জমিতে গাছ আছে সেই সব জমির মালিকেরা। বৈঠকে ঠিক হয়, গাছের মালিকদের সঙ্গে ইস্কো কর্তৃপক্ষ ও এয়ারপোর্ট অথরিটি অবিলম্বে কথা বলে সমস্যা মিটিয়ে দ্রুত বিমান পরিষেবা চালু করার জন্য কেন্দ্র সরকারকে জানাবে। পরে বৈঠক নিয়ে ইস্কোর জিএম (শহর বিভাগ) ভাস্কর কুমার বলেন, ‘ইস্কোর জমিতে থাকা গাছগুলি কাটার কাজ চলছে। তবে ব্যক্তিগত জমিতে থাকা অন্তত ১৫০টি গাছে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। রাজ্য বন দফতরের তরফে ব্যক্তিগত জমির গাছ পর্যবেক্ষণ করা হবে। তার পরে দাম নির্ধারণ করা হবে। সেই দাম নিয়ে জমির মালিকেরা সহমত হলে, প্রশাসন গাছ কাটার বিজ্ঞপ্তি জারি করবে। তার পরেই গাছগুলি কাটা হবে।’ কিন্তু ক্ষতিপূরণ প্রদান বা অধিগ্রহণ কিংবা বিকল্প জমির মতো দাবিদাওয়া নিয়ে প্রশাসন কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় এই প্রকল্প নিয়ে জট পাকার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।