কৌশিক দে সরকার: রাজ্যের প্রান্তিক জেলা। ঝাড়খণ্ড ঘেঁষে থাকা অযোধ্যা পাহাড়ীর জেলা। সেই জেলার মানুষদের কাছে টাটানগর আর রাঁচী যতটা কাছের ঠিক ততটাই দূরের কলকাতা। ৫ বছর আগেই সেই জেলা হয়ে উঠেছিল পদ্মচাষের অবাধভূমি। ২০১৮’র পঞ্চায়েত ভোটে(Panchayat Election) জেলার বেশির ভাগ গ্রাম পঞ্চায়েতের দখল নিয়েছিল বিজেপি(BJP)। ৩-৪টি পঞ্চায়েত সমিতিতেও তাঁরা ছিল বোর্ড গঠনের জায়গায়। জেলা পরিষদেও তাঁরা ছিনিয়ে এনেছিল ৯টি আসন। কিন্তু ব্লক স্তরে তাঁরা বোর্ড গড়তে পারেনি। যে সব গ্রাম পঞ্চায়েতে তাঁরা বোর্ড গড়েছিল সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেই সবও আজ হাতছাড়া হয়েছে। আবার একটা পঞ্চায়েত নির্বাচন দোরে কড়া নাড়ছে। এবারেও লড়াই দুই ফুলে। পদ্ম আর ঘাসফুলে। সেই লড়াইয়ে ভোট কাটার ভূমিকায় বড় ভূমিকা নেবে বাম আর কংগ্রেস। তাই চোখ বুজে বলা সম্ভবই নয়, কে জিতবে বা কে হারবে। নজরে পুরুলিয়া(Purulia)।
আরও পড়ুন বাড়িতে জন্মাচ্ছিল ডেঙ্গুর মশা, ৫ মাসে ৩৫ জনের লক্ষের জরিমানা
পুরুলিয়া জেলায় ব্লকের সংখ্যা ২০। জেলা পরিষদে আসন সংখ্যা ৪৫। বড়বাজার, পুরুলিয়া-২, মানবাজার-১, কাশিপুর ও পাড়া – এই ৫টি ব্লকে রয়েছে জেলা পরিষদের ৩টি করে আসন। বাকি ১৫টি ব্লকে অর্থাৎ মানবাজার-২, বান্দোয়ান, পুরুলিয়া-১, আরশা, বলরামপুর, ঝালদা-১, বাঘমুণ্ডি, জয়পুর, ঝালদা-২, হুড়া, পুঞ্চা, রঘুনাথপুর-২, নেতুড়িয়া, সাঁতুড়ি এবং রঘুনাথপুর-১ – ব্লকে রয়েছে জেলা পরিষদের ২টি করে আসন। উনিশের লোকসভা ভোটে বাংলা সহ গোটা দেশেই বয়ে গিয়েছিল মোদি ঝড়। ব্যতিক্রম ছিল না পুরুলিয়ার মাটিও। জেলার একমাত্র লোকসভা আসনে বিজেপি তো জয়ী হয়েইছিল, সেই সঙ্গে জেলার ৯টি বিধানসভা কেন্দ্র থেকেই লিড পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু সেই ছবিটাই কিছুটা বদলে যায় একুশের ভোটে। জেলার ৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৩টি বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হয় তৃণমূল(TMC)। সেই ৩টি বিধানসভা কেন্দ্র হল বান্দোয়ান, বাঘমুণ্ডি ও মানবাজার। বাকি ৬টি কেন্দ্র অর্থাৎ বলরামপুর, জয়পুর, পুরুলিয়া, কাশিপুর, পাড়া ও রঘুনাথপুরে জয়ী হয় বিজেপি। এই হিসাবকে সামনে রেখে এগোলে খোলা চোখে মনে হতেই পারে এবার বিজেপির দখলেই যেতে চলেছে পুরুলিয়ার জেলা পরিষদ। কিন্তু সেটাই কী চূড়ান্ত?
আরও পড়ুন খুব শীঘ্রই চালুর পথে হাওড়া-পাটনা Vande Bharat Express
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের তথ্য বলছে, জেলা পরিষদের ৪৫টি আসনের মধ্যে ২৭টি আসনে এগিয়ে আছে বিজেপি। ১৮টি আসনে এগিয়ে তৃণমূল। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে এই মাঝের ২ বছরে অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে যেভাবে গোটা জেলাজুড়ে গেরুয়া ঝড় ছিল তা কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই থমকে গিয়েছে। বিভিন্ন ব্লকে বিজেপির সংগঠন দুর্বল হয়েছে। গতবার বিজেপির টিকিটে ভোটে জিতে ছিলেন যে সব জেলা পরিষদ সদস্য তাঁদের অনেকেই পরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তাই এবারে তৃণমূল বনাম বিজেপি লড়াই হলেও সেই লড়াইয়ের ঝাঁঝ আর আগের মতো নেই। বরঞ্চ এই দুই দলের মধ্যে কারা বাজি মারবে তা অনেকটাই কিন্তু এবার নির্ভর করবে বাম(Left) ও কংগ্রেসের(INC) প্রার্থীরা কত ভোট কাটবেন তার ওপর।
আরও পড়ুন সাত সকালেই ব্যাঙ্ক ডাকাতি সিউড়ির বুকে, লুট কোটি টাকা
জেলায় এখনও ঝালদা, জয়পুর, আরশায় যেমন কংগ্রেসের ভাল সংগঠন ও জনসমর্থন আছে ঠিক তেমনি বামেদের ভাল সংগঠন আছে বাঘমুণ্ডি, পুঞ্চা, হুড়া, সাঁতুড়ি এলাকায়। স্বাভাবিক ভাবেই এই এলাকায় নির্বাচনী লড়াই ও ফলাফল কখনই একপেশে হবে না। বরঞ্চ অনেকেই মনে করছেন এবার জেলার ২০টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে অন্তত ৯টির ক্ষেত্রে নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারে বাম ও কংগ্রেসের ভূমিকা। তবে একদম হাল ছাড়ছে না বিজেপিও। তাঁদের আশা বলরামপুর, পুরুলিয়া-১, পুরুলিয়া-২, কাশিপুর, রঘুনাথপুর-১, রঘুনাথপুর-২, নিতুড়িয়া ও সাঁতুড়ির মোট ১৮টি জেলা পরিষদের আসনে জয়ী হবেন। সেই সঙ্গে ওই ব্লকগুলির পঞ্চায়েত সমিতিও তাঁদের দখলে আসবে। ওই সব ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েতেও ভালো ফল হবে তাঁদের।
আরও পড়ুন প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে Property Tax বাড়বে কলকাতায়
তৃণমূল কী ভাবছে? এবার অস্বীকার করার উপায় নেই শাসক দলকে অনেকটাই চাপে রেখেছে কুড়মিদের ভূমিকা। কুড়মিরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁরা কোনও রাজনৈতিক দলকে ভোট দেবেন না। প্রয়োজনে তাঁরা নির্দল প্রার্থী দেবেন। সেক্ষেত্রে কুড়মিদের ভোট যে তৃণমূল পাচ্ছে না সেটা মোটামুটি পরিষ্কার। তবে তাঁদের আশা মাহাতোদের ভোট। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারের আর্থ সামাজিক প্রকল্পগুলির ওপরেও তাঁদের ভরসা আছে। জোড়াফুল শিবিরের দাবি, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির যে হাওয়া ছিল তা এবারে আর নেই। সেই কারণেই উনিশের ভোটে জেলার সব বিধানসভা কেন্দ্রে পিছিয়ে গিয়েও একুশের ভোটে জেলার ৩টি বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন তাঁরা। এবারে অন্তত ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে থাকার চেষ্টা করবেন তাঁরা। লক্ষ্য একটাও জেলা পরিষদ, জেলার সব পঞ্চায়েত সমিতি, জেলার বেশির ভাগ গ্রাম পঞ্চায়েতের দখল। সেই মাটি দখলের লড়াইয়ে তাঁরা এগিয়ে থাকলে ২৪’র ভোটেও পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রও তাঁরা ছিনিয়ে আনতে পারবেন বিজেপির দখল থেকে।