নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশের ভোটে হেরে ক্রমশই প্রতিশোধের রাজনীতি করে চলেছে মোদি সরকার। আর সেই প্রতিশোধ শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূল কংগ্রেস কিংবা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধেই নয়, বাংলার আমজনতার সঙ্গেও। প্রথমে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় যশের সময় পর্যাপ্ত আর্থিক সাহায্য না করা, তারপর রাজ্যের তদানীন্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ, ভবানীপুর সহ রাজ্যের ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন না হতে দেওয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপ এবং এরপর মমতার চালু করা একগুচ্ছ ট্রেন স্থায়ীভাবে বাতিল করে দেওয়ার ঘটনা। আর এই ট্রেন বাতিল করার জন্য এখন সবথেকে বড় ধাক্কা খেতে চলেছে জঙ্গলমহলের জনতা যারা ২০১৯ সালে বিজেপিকে দুই হাত ঢেলে ভোট দিয়েছিল। যেখানকার ৫টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৫জনই বিজেপির সাংসদ, সেই জঙ্গলমহলের বুক থেকেই ট্রেন তুলে নিচ্ছে মোদি সরকার। আর সবটাই করা হচ্ছে বাংলার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ মনোভাব নিয়ে।
দক্ষিণ-পূর্ব রেল তথ্যের অধিকার আইনে মোদি সরকারের একগুচ্ছ ট্রেন চিরতরে বাতিলের কথা জানিয়েছে। যে ৮ জোড়া ট্রেনকে বাতিলের খাতায় ফেলতে চলেছে মোদি সরকারের রেলমন্ত্রক তার মধ্যে রয়েছে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালু করা ১২৮৬৫ আপ/১২৮৬৬ ডাউন হাওড়া-পুরুলিয়া লালমাটি এক্সপ্রেস, ২২৮৬১আপ/২২৮৬২ ডাউন শালিমার-আদ্রা রাজ্যরানি এক্সপ্রেস, ২২৮৭৫ আপ/২২৮৭৬ ডাউন খড়গপুর-পুরুলিয়া ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস, ২২৮২১ আপ/২২৮২২ ডাউন ঝাড়গ্রাম-পুরুলিয়া বিরসা মুন্ডা এক্সপ্রেস, এবং ৬৮৬৪৩ আপ/৬৮৬৪৪ ডাউন খড়গপুর-হিজলি প্যাসেঞ্জার। এই ট্রেনগুলি বন্ধ হওয়ার দরুন সব থেকে বেশি ধাক্কা খেতে চলেছে পুরুলিয়া জেলার মানুষ যারা শুধু ২০১৯ সালেই নয়, ২০২১ সালেও দুই হাত ঢেলে ভোট দিয়েছে বিজেপিকে। ধাক্কা খাবে বাঁকুড়ার মানুষজন যারা ২০১৯ সালে জেলা থেকে ২জন বিজেপি সাংসদ ও ২০২১ সালে ৮জন বিজেপি বিধায়ক উপহার দিয়েছে। ধাক্কা খাবে জঙ্গলমহলের সেই জনতা যারা মেদিনীপুর থেকে ২০১৯ সালে দিলীপ ঘোষকে সাংসদ করে দিল্লি পাঠিয়েছেন। ধাক্কা খাবেন ঝাড়গ্রামের সেই সব জনতা যারা ২০২১ সালে বিজেপিকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলির সঙ্গে কলকাতার সরাসরি যোগাযোগ নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে সমস্যা ছিল। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ইউপিএ সরকারের আমলে রেলমন্ত্রী ছিলেন তখন তিনি পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের মানুষদের জন্য একগুচ্ছ ট্রেন পরিষেবা চালু করেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় মমতার এই অবদানের কথা ভুলে গিয়ে জঙ্গলমহলের জনতা ২০১৯ সালে তৃণমূলকে লাথি মেরে দুই হাত ঢেলে ভোট দিয়েছে বিজেপিকে। ২১শের নির্বাচনেও পুরুলিয়া আর বাঁকুড়া থেকে ভালই ভোট পেয়েছে বিজেপি। এখন সেখানকার জনতাকেই বড় বাঁশ দিয়ে দিতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য দেখাচ্ছে না নরেন্দ্র মোদির ‘আচ্ছে দিন’ এর সরকার। অস্বীকার করার উপায় নেই উপরিউক্ত ৫ জোড়া ট্রেন চিরতরে স্তব্ধ হয়ে গেলে জঙ্গলমহলের জনতাই সব থেকে বেশি বিপাকে পড়বেন। এই সঙ্গে এটাও সত্যি যে একুশের নির্বাচনে বিজেপিকে ধাক্কা খেতে হয়েছে এই জঙ্গলমহলেই। আর তার জেরেই এখন তাঁদের এই প্রতিশোধমূলক মনোভাব। যাত্রী না হওয়ার ধুয়ো তুলে এখন ট্রেন বন্ধ করে দিচ্ছে মোদি প্রশাসন।
শুধু এই ৬টি ট্রেনই নয়, বাতিলের তালিকায় আছে, ১৮৬৩৩ আপ/১৮৬৩৪ ডাউন রাঁচি-পটনা এসি এক্সপ্রেস, ২২৮৮৫ আপ/২২৮৮৬ ডাউন টাটা-লোকমান্য তিলক অন্ত্যোদয় এক্সপ্রেস, ১৮১১৩ আপ/ ১৮১১৪ ডাউন টাটা-রাঁচি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসও। এই ৮ জোড়া ট্রেনে নাকি যাত্রী হচ্ছে না। তাই এই ট্রেনগুলি অলাভজনক রুটের ট্রেন হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। আর তাই এই ট্রেনগুলি বাতিল করা হচ্ছে। এই শেষের ৩ জোড়া ট্রেনই ঝাড়খণ্ডের মানুষের বিহার ও মুম্বইয়ের যাতায়াতের ক্ষেত্রে বড় ভরসা হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনেও ধাক্কা খাওয়া বিজেপি এখন সেই ভরসাটুকুও কেড়ে নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করছে না। গোটা ঘটনায় বিজেপির আর মোদি সরকারের সেই প্রতিশোধ মনোভাবাপন্ন মানসিকতাই সামনে আসছে।