নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার মানুষদের জন্য শিবরাত্রির সকালেই চলে বড় সুখবর। Securities and Exchange Board of India বা SEBI এবার পদক্ষেপ করতে চলেছে বেশ কিছু চিটফান্ড সংস্থার বিরুদ্ধে। ওই সব সংস্থার সম্পত্তি নিলাম করে বা E-Auction এর মাধ্যমে বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে চিটফান্ডে বিনিয়োগ করা আমজনতার টাকা এবার তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে SEBI। আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহেই সেই নিলামের আয়োজন হতে চলেছে। যে সব চিটফান্ড সংস্থার সম্পত্তি নিলাম হতে চলেছে তার মধ্যে থাকছে MPS, Prayag, Tower সহ মোট ৬টি সংস্থা। যার অর্থ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে এবার চিটফান্ডের জেরে লক্ষ লক্ষ প্রতারিত আমানতকারী তথা মধ্যবিত্ত বঙ্গবাসীর মুখে হাসি ফুটতে চলেছে। সম্ভবত পুজোর আগেই তাঁরা তাঁদের টাকা ফেরত পেতে চলেছেন। SEBI সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্পত্তি নিলাম থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে গ্রাহক বা আমানতকারীদের টাকা ফেরানো হবে। সেই নিলামের সময় এজেন্ট বা অন্য কেউ বাধা দিলে তা প্রতিহত করতে পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তাও চেয়েছে SEBI।
আরও পড়ুন মমতার দেখানো পথকেই স্বীকৃতি মোদি সরকারের, এল পুরস্কার
MPS’র সম্পত্তি নিলামের জন্য ২০১৫ সালে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে প্রাক্তন বিচারপতি এস পি তালুকদারের নেতৃত্বে এক সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে ভিবজিওর, টাওয়ার, ওয়ারিশ গ্রুপ সহ মোট ৫৫টি চিটফান্ড সংস্থাকে এই নির্দেশের আওতায় আনা হয়। SEBI’র তরফে ওই কমিটির কাছে তালিকা দিয়ে কাদের কত সম্পত্তি রয়েছে, তা জানানো হয়। সেসব নথি যাচাইয়ের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে অনেকদিন আগেই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির সূত্রে জানা গিয়েছে, Sarada আর Rose Valley’র পর MPS, Tower, Prayag এবং বায়স ইন্ডিয়া লিমিটেড নামক ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি সবচেয়ে বেশি টাকা তুলেছিল। এর পরিমাণ সব মিলিয়ে ২০ হাজার কোটির বেশি। এই সংস্থাগুলির একাধিক ফ্ল্যাট, বাড়ি এবং জমি রয়েছে কলকাতা, বিধাননগর, ব্যারাকপুর, চন্দননগর সহ বিভিন্ন জেলায়। এদের হাতে থাকা জমির পরিমাণ কয়েক হাজার বিঘা। SEBI জেনেছে, এর মধ্যে বেশ কিছু জমি বেহাত হয়েছে। চিটফান্ডের কর্ণধাররাই গোপনে বেশ কিছু জমি হাতবদল করেছেন গোপনে।
আরও পড়ুন রাজ্যের সঙ্গে সঙ্ঘাতের আবহে দাঁতের চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালে রাজ্যপাল
তাই আর দেরী করতে চাইছেন না SEBI’র আধিকারিকেরা। আইনি জটিলতা নেই, এরকম সম্পত্তিগুলি চিহ্নিত করে ইতিমধ্যেই সেগুলি তাঁরা বাজেয়াপ্ত করেছেন। সেই সব সম্পত্তিই এবার তালিকা ধরে নিলাম হবে। স্থাবর সম্পত্তিগুলির আয়তন ও এলাকা অনুযায়ী নির্দিষ্ট দাম বা Base Price ধরা হয়েছে। ৩ মার্চ এই সম্পত্তিগুলির E-Auction হওয়ার কথা। ওই দিন সম্ভাব্য ক্রেতারা সম্পত্তি সরেজমিনে পরীক্ষার পর নিজেদের দাম জানাবেন। সঙ্গে থাকবেন SEBI’র কর্তারাও। সর্বোচ্চ দাম যিনি দেবেন, তাঁকেই বিক্রি করা হবে সেই সব সম্পত্তি। SEBI’র অফিসাররা জায়গাগুলি ইতিমধ্যে সার্ভে করেছেন। কোনও চিটফান্ড সংস্থার সম্পত্তি বেচে পাওয়া টাকা নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে। তারপর প্রতারিতদের তালিকা ধরে তা ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হবে। কত সংখ্যক গ্রাহককে টাকা ফেরানো যাবে, তা নির্ভর করছে কত পরিমাণ সম্পত্তি নিলামে উঠল, তার ওপর। প্রসঙ্গত, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ED এই সংস্থাগুলির বেশ কিছু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। দীর্ঘদিন কেটে গেলেও সেগুলি নিলামের প্রক্রিয়া এখনও শুরুই হয়নি। সংশ্লিষ্ট চিটফান্ড কোম্পানির মালিকপক্ষের ঘনিষ্ঠ কেউ নিলামে অংশ নিচ্ছেন কি না, সেদিকেও নজর রাখবেন SEBI’র আধিকারিকেরা। তাদের আশঙ্কা, এসব সংস্থার কর্ণধাররা ঘুরপথে জমির মালিকানা ধরে রাখার চেষ্টা চালাতে পারেন।