নিজস্ব প্রতিনিধি: খোদ রাজ্য সভাপতির মিছিলে গরহাজির দলের ৬ বিধায়ক(MLA)। তাও সেই মিছিল যে জেলায় অনুষ্ঠিত হল সেই জেলারই বিধায়ক ওই ৬জন। স্বাভাবিক ভাবেই এই গরহাজিরা ঘিরে তীব্র জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে দলের অন্দরে। সেই সঙ্গে ছড়িয়েছে উদ্বেগও। কেননা আগামী বছরই রয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। ৪ বছর আগে হয়ে যাওয়া নির্বাচনে এই জেলা থেকেই সব থেকে বেশি সমর্থন পেয়েছিল দল। সমর্থন এসেছে পরবর্তী লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনেও। কিন্তু এখন দলের বিধায়কেরাই যেভাবে দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করে দিয়েছেন তা দেখে একদিকে যেমন জল্পনা ছড়িয়েছে যে এই ৬ বিধায়ক তৃণমূলমুখী হয়েছেন কিনা, অন্যদিকে উদ্বেগ ছড়িয়েছে দলের এই হাল বজায় থাকলে আগামী বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কী হবে? ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনেই বা কী হবে? নজরে বঙ্গ বিজেপি(BJP) ও পুরুলিয়া(Purulia) জেলার ৬ বিজেপি বিধায়ক।
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুরুলিয়া জেলার ত্রিস্তরীয় ব্যবস্থায় জেলা পরিষদে জয়ী হয় তৃণমূল(TMC)। তবে তা বিরোধী শূণ্য ছিল না। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের ৩৮টি আসনের মধ্যে ২৬টিতে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। বিজেপি জেতে ৯টি আসন। কংগ্রেস জিতেছিল ৩টি আসনে। বামেরা কোনও আসনই পায়নি। অন্যদিকে ব্লক স্তরের পঞ্চায়েত সমিতিতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বোর্ড গড়ে তৃণমূল। কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে জেলার সিংহভাগ ক্ষেত্রে বোর্ড গড়তে সক্ষম হয়েছিল বিজেপি। পরের বছর লোকসভা নির্বাচনেও পুরুলিয়ায় বিপুল ভোটে জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু সেই দাপট পরবর্তীকালে কমতে শুরু করে। তার ইঙ্গিত মেলে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। জেলার ৯টি আসনের মধ্যে ৬টিতে বিজেপি জয়ী হলেও ৩টিতে জয়ী হয় তৃণমূল। অর্থাৎ জেলায় বিজেপি তার নিরঙ্কুশ দাপট ধরে রাখতে পারেনি। এবার সেই পুরুলিয়ার ৬ বিজেপি বিধায়কই দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করে দিয়েছেন।
বুধবার বিকালে পুরুলিয়া শহরে বিজেপির মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার(Sukanta Majumdar)। সেই মিছিলেন ছিলেন পুরুলিয়ার সাংসদ তথা দলের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো, দলের জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গা ও প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার আহ্বায়ক বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী প্রমুখ। কিন্তু মিছিলে হাজির ছিলেন না জেলা থেকে নির্বাচিত বিজেপির ৬ বিধায়ক। এরা হলেন, পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়, জয়পুরের বিধায়ক নরহরি মাহাতো, পাড়ার বিধায়ক নদিয়ারচাঁদ বাউরি, রঘুনাথপুরের বিধায়ক বিবেকানন্দ বাউরি, কাশীপুরের বিধায়ক কমলাকান্ত হাঁসদা এবং বলরামপুরের বিধায়ক বানেশ্বর মাহাতো। এদের মধ্যে কেবল নরহরি মাহাতো জানিয়েছেন তিনি রাঁচিতে থাকায় দলের কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারেননি। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বাকি ৫ বিধায়ক দলকে জানাননি কেন তাঁরা মিছিলে উপস্থিত থাকেননি।
এই অবস্থায় বঙ্গ বিজেপির অন্দরে জল্পনা ছড়িয়েছে ৬ বিধায়কই তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। যে কোনওদিন তাঁরা জার্সি বদল করে ফেলতে পারেন। সেই জল্পনাকে আবার উস্কে দিয়েছেন খোদ সুকান্ত মজুমদার। তিনি ৬ বিধায়কের গরহাজিরা প্রসঙ্গে আবার জানিয়েছেন, ‘বিধায়ক দিয়ে সংগঠন চলে না। তাঁরা জনপ্রতিনিধি। বিজেপির সংগঠন বিধায়কের উপর নির্ভর করে না।’ সুকান্তের এহেন কথা শুনে বঙ্গ বিজেপিতে জল্পনা আরও বেড়েছে। অনেকেই মনে করছেন নির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতেই সুকান্ত সম্ভবত একথা বলেছেন। সম্ভবত বঙ্গ বিজেপির নেতারা সুনিশ্চিত পুরুলিয়া জেলার ৬ বিধায়কই আগামী দিনে দলবদল করতে পারেন। আর এখানেই ছড়িয়েছে উদ্বেগ। জেতানোর পরেও দল যদি বিধায়কদের ধরে রাখতে না পারে তাহলে আগামী বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচন বা ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে জেলার ফল কী হবে তা নিয়ে।