নিজস্ব প্রতিনিধি: একটা চার্চ (CHURCH)। স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই চার্চের নাম। প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৮৫১ সালে। শুধু তাই নয়, মোঙ্গলি কে চেনেন? এই চার্চ চত্ত্বর জুড়ে রয়েছে তেমন এক কাহিনীও। আজও দাঁড়িয়ে আছে সেই গির্জা। ইংল্যান্ডের চার্চ মিশন সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত সেই গির্জার নাম ‘সেন্ট জন’স চার্চ’। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর শহরের সেখপুরায় রয়েছে এই গির্জা। আর সামনেই রয়েছে কবরস্থান। যেই সব কবর অখণ্ড মেদিনীপুর, বাংলা তথা দেশের গৌরব। বারবার মনে করিয়ে দেয় স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা। মনে পড়ে দেশমাতার বীরপুত্রদের কথা।
১৯৩০ সালে জেলাশাসকের দায়িত্ব নিয়ে মেদিনীপুরে এসেছিলেন এল জেমস পেডি। অত্যাচারী হিসেবে তার নাম তখন কারও অজানা নয়। ১৯৩১ সালের ৭ এপ্রিল মেদিনীপুর জিলা স্কুলের এক প্রদর্শনীতে (মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল) আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিল কুখ্যাত জেলাশাসক। আর তখনই বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্ত এবং জ্যোতিজীবন ঘোষের পরপর ছোঁড়া গুলিতে লুটিয়ে পড়ে অত্যাচারী জেলাশাসকের দেহ। তাকে সমাধিস্ত করা হয় এই চার্চ চত্ত্বরে।
এরপরে জেলাশাসকের দায়িত্ব নিল রবার্ট ডগলাস। প্রবল অত্যাচারী। তার নির্দেশে ১৯৩১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর জেলে গুলি করে খুন করা হয় বিপ্লবী তারকেশ্বর সেন এবং সন্তোষ মিত্রকে। তার আগে ভারতমাতার বীরপুত্রদেরকে করা হয়েছিল অকথ্য অত্যাচার, মারধর। ১৯৩২ সালের ৩০ এপ্রিল বিকেলে জেলা বোর্ডের বৈঠক বসেছিল মেদিনীপুর জেলা পরিষদে। সেই বৈঠকের সভাপতি অত্যাচারী জেলাশাসক। পরপর তিনটি গুলি চালিয়ে তাকে হত্যা করেন বিপ্লবী প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য, প্রভাংশু পাল। ডগলাসের সমাধি রয়েছে এই চার্চ চত্ত্বরে। অন্যদিকে, ১৯৩৩ সালের ১২ জানুয়ারি ফাঁসি হয় মহান দেশপ্রেমিক প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্যের। উল্লেখ্য, তাঁর নামাঙ্কিত জেলা পরিষদের অডিটোরিয়াম। হেরিটেজ জার্নি দাবি জানিয়েছে, ঐতিহাসিক সেই হত্যাস্থল ‘লালভবন’কে হেরিটেজ মান্যতা দেওয়ার। তা নিয়ে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুন: ‘হেরিটেজ জার্নি’র আবেদনকে মান্যতা, মেদিনীপুর জেলা পরিষদকে হেরিটেজ ঘোষণার আবেদন
১৯৩৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর পুলিশ মাঠে মহামেডান ক্লাব এবং টাউন ক্লাবের ফুটবল ম্যাচ ছিল। বিপ্লবী অনাথ বন্ধু পাঁজা এবং মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত মহুর্মুহু গুলিতে হত্যা করলেন অত্যাচারী জেলাশাসক বার্নার্ড এডওয়ার্ড জন বার্জকে। এই জেলাশাসকের সমাধিও রয়েছে চার্চ সংলগ্ন কবরস্থানেই। উল্লেখ্য, অত্যাচারী সেই জেলাশাসকের নামেই মেদিনীপুর শহরের একটি এলাকার নাম বার্জটাউন। শহরবাসীর দীর্ঘ বছরের দাবি, স্বাধীনভারতে কুখ্যাত ব্রিটিশ জেলাশাসকের নামাঙ্কিত জায়গার নাম পরিবর্তন করে তা ভারতমাতার বীরপুত্র অনাথবন্ধু এবং মৃগেন্দ্রনাথ দত্তের নামে করার।
চার্চ প্রাঙ্গণেই রয়েছে ব্রিটিশ জেলারের স্ত্রী লুসি মেভারনেনের সমাধি। উল্লেখ্য, অদূরেই নরমপুরে রয়েছে জেলার প্রথম কালেক্টর জন পিয়ার্সের সমাধি। ১৭৭৭ সালে জেলা কালেক্টরের পদে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। প্রসঙ্গত, এএসআই দ্বারা সংরক্ষিত এই সৌধ।
এখানেই রয়েছে অমলার সমাধি। মাত্র ৩ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছিল তার। দিনটা ছিল ১৯২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর। অমলা এবং কমলা ছিল দু’ই বোন। ১৯২৬ সালে জোসেফ অমৃত লাল সিং জানিয়েছিলেন, গোদামূরী নামক এক গ্রাম সংলগ্ন জঙ্গল থেকে কমলা এবং অমলাকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তাদের ব্যবহার, ডাক ছিল নেকড়ের মত। অনুমান, জন্মের পর দীর্ঘকাল জনবিচ্ছিন্ন জঙ্গলে নেকড়েদের কাছেই প্রতিপালিত হয়েছিল দু’ই বোন। কি মোঙ্গলি’র কথা মনে পড়েছে?