নিজস্ব প্রতিনিধি: ফরাসডাঙায় জয় যে হবে সে নিশ্চয়তা ছিলই। খালি দেখার ছিল আগের থেকেও ভাল ফল হয় কিনা। কেননা এই শহরের শাসক দলের গোষ্ঠীকোন্দল সর্বজনবিদিত। সেই গোষ্ঠীকোন্দলের জেরেই এই পুরনিগমে ক্ষমতাসীন বোর্ডের মেয়াদ ফুরাবার আগেই তা ভেঙে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। স্বাভাবিক ভাবেই জল্পনায় ছিল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের উর্ধ্বে উঠে শাসক দল এই পুরনিগমে ভাল ফল করে দেখাতে পারে কিনা। সোম সকালে গণনা শুরু হতেই অবশ্য আভাস মেলে আগেকার রেকর্ড ভেঙে যেতে পারে এবারের নির্বাচনে। এরপর বেলা যত গড়িয়েছে শহরের সর্বত্র ততই জোড়াফুলের জয়জয়কার সবুজ আবিরে ভেসে উঠেছে। শহরের ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ভোট হয়েছিল ৩২টি ওয়ার্ডে। তারমধ্যে ৩১টি ওয়ার্ডেই এদিন তৃণমূল ঝড় উঠেছে। জনতার রায় পরিষ্কার, ফরাসডাঙা তৃণমূলেরই। আর সেই জয়ের কারিগর, রাজ্যের মন্ত্রী তথা গায়ক শিল্পী ইন্দ্রনীল সেন এই রায়কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের জয় বলেই চিহ্নিত করে দিলেন।
২০১৫ সালের পুরনির্বাচনে চন্দননগর পুরনিগমে ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল জয়ী হয় ২২টি ওয়ার্ডে। বামেরা পেয়েছিল ৮টি আসন। কংগ্রেসের ঝুলিতে গিয়েছিল ৩টি আসন আর বিজেপি জেতে ১টি আসনে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে একক ক্ষমতাতেই পুরবোর্ড গড়েছিল তৃণমূল। কিন্তু সেই পুরবোর্ডের মেয়াদ ফোরাবার আগেই রাজ্য সরকার বাধ্য হয় পুরবোর্ড ভেঙে দিতে। সৌজন্যে শাসক শিবিরের গোষ্ঠী কোন্দল, মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন এবং উন্নয়নের নিরিখে অনান্য পুরসভা বা পুরনিগমের তুলনায় পিছিয়ে পড়া। কার্যত এরপরে চন্দননগরের উন্নয়ন ও দলীয় সংগঠন দেখার দায় নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছিলেন চন্দননগরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। এবারের চন্দননগরের পুরভোট তাঁর সেই নেতৃত্বের একটা পরীক্ষা ছিল। তিনি নিজে পরিষবা দিয়ে চন্দননগরবাসীর মন জয় করে নিয়েছেন। তাই ২০১৬ সালের বিধানসভায় চন্দননগর থেকে যে ইন্দ্রনীল জিতেছিলেন মাত্র ২ হাজার ১১৪ ভোটে জয়ী হয়েছিলেন তিনিই একুশের ভোটে জয়ী হয়েছেন ৩১ হাজার ২৯ ভোটের ব্যবধানে।
ইন্দ্রনীল সেনের এই জয়ই বলে দিয়েছিল চন্দননগর পুরনিগমের নির্বাচনে অনেকটা এগিয়ে থেকেই লড়াই শুরু করবে জড়াফুল। পুরবোর্ডও যে তাঁদের দখলেই থাকবে সেটাও একরকম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। দেখার বাকি ছিল তৃণমূল আগের বারের থেকে আরও ভাল ফল করে কিনা এটাই। আর নজর ছিল বিরোধী শিবিরের দিকে। তাঁরা কে কটা আসন পায় আর কেই বা উঠে আসে বিরোধী দল হিসাবে। গত শনিবার শহরের ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩২টি ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ করা হয়। ১টি ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় সেই ওয়ার্ডে নির্বাচন স্থগিত রাখে কমিশন। সোমবার ওই ৩২টি ওয়ার্ডের ইভিএম খুলতেই দেখা যায় ফরাসডাঙায় তৃণমূল ঝড় উঠেছে। ৩১টি ওয়ার্ডেই জয়ী তৃণমূল। মাত্র ১টি ওয়ার্ড গিয়েছে বামেদের হাতে। বিজেপি আর কংগ্রেস উভয়েই শূন্য। আগামী দিনে ভোট না হওয়া ওয়ার্ডে যদি তৃণমূল জেতে তাহলে অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না যেমন, তেমনিই এদিন যে বাম প্রার্থী জয়ী হয়েছেন তিনিও যদি জোড়াফুলে যোগ দেন তাহলে চন্দননগর কিন্তু বিরোধীশূন্য পুরনিগম হইয়ে যাবে। এখানেই বোধহয় ইন্দ্রনীল সেনের কৃতিত্ব। নিজে তো বিধানসভাতে জিতেইছেন, মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে দলকেও এদিন বিপুল ভোটে ও আসনের জয়ের মুখ দেখাতে সমর্থ হলেন তিনি। ফরাসডাঙায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আপাতত অতীত। সামনে শুধুই উন্নয়ন।