নিজস্ব প্রতিনিধি: পূর্ব মেদিনীপুরের(Purba Midnapur) মাটি দীর্ঘদিন ধরেই অধিকারীদের গড় হিসাবে চিহ্নিত হয়ে এসেছ। বিশেষ করে কাঁথি মহকুমা এলাকা। যদিও বাম জমানায় সেই কাঁথি মহকুমা এলাকাতে তো বটেই, জেলাজুড়েই দাপট দেখিয়েছে বামেরা। নন্দীগ্রাম(Nandigram) গণআন্দোলন সেই একচেটিয়া বাম আধিপত্যের অবসান ঘটিয়েছে। তৃণমূলের(TMC) জমানায় মেদিনীপুরের মাটিতে আরই জাঁকিয়ে বসেছিল অধিকারীদের রাজত্বপাট। কিন্তু অধিকারীদের বিজেপি(BJP) গমনের পর থেকেই সেখানে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একুশের ভোটে পূর্ব মেদিনীপুরের ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৯টি তৃণমূলের দখলে থাকলেও ৭টি গিয়েছে বিজেপির দখলে। তার মধ্যে নন্দীগ্রামও রয়েছে। কিন্তু সেই ভোটের পর থেকেই মেদিনীপুরের মাটিতে ক্রমশ দুর্বল হতে শুরু করেছে অধিকারীদের কামড়। কার্যত জেলার রাজনীতিতে তাঁরা এখন রীতিমত কোনঠাসা। প্রশ্ন রয়েছে নন্দীগ্রামের বুকে শুভেন্দু অধিকারীর(Suvendu Adhikari) জয় নিয়েও। এবার সেই নন্দীগ্রামের বুকেও অধিকারীদের ধাক্কা দিতে নতুন কর্মসূচী আনল তৃণমূল।
আরও পড়ুন খোঁজ খোঁজ খোঁজ, বেপাত্তা মানিকের ছেলে আর বউ
জোড়াফুল শিবিরের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নন্দীগ্রামের বুকে তাঁরা কর্মসূচী নেবেন। দলের নেতা থেকে কর্মীরা যাবেন মানুষের বাড়িতে বাড়িতে। সেখানে মাটিতে চাটাইয়ে বসে শুনবেন মানুষের অভাব অভিযোগের কথা। তাঁদের দাবিদাওয়ার কথা। এই কর্মসূচি পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শুরু হলেও তা চলবে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় অবধি। মূল লক্ষ্য, নন্দীগ্রামের বুক থেকে অধিকারীদের অধিকার মুছে দেওয়ার। নন্দীগ্রামের বুকে মঞ্চ বেঁধে বড় জনসভা, চার রাস্তার মোড়ে পথসভার পাশাপাশি চলবে দলের কর্মীসভাও। দলের নেতা থেকে কর্মী সকলের কাছেই মূল লক্ষ্য হিসাবে জেলার কাঁথি, নন্দীগ্রাম, হলদিয়া সহ গোটা পূর্ব মেদিনীপুরের মাটি থেকে বিজেপি ও অধিকারীদের উৎখাত করা। এর জন্য যেমন দলের তরফে কুণাল ঘোষকে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তেমনি নেতা-কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের ওপরেও জোর দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন বৃহস্পতিবার আসানসোল জেলে গিয়ে অনুব্রতকে জেরা করতে পারে ইডি
নতুন ধাঁচের কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে নন্দীগ্রামের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাবেন দলের নেতারা, এমনটাই চাইছেন তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব। তাই এই কর্মসূচিতে জেলার নেতারা যেমন থাকবেন, তেমনি থাকবেন রাজ্যেরও একাধিক নেতা। গ্রাম, পাড়া, পল্লিতে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন তাঁরা। তাঁদের দুয়ারে চাটাই পেতে বসে নেতারা শুনবেন মানুষের কথা। পাশাপাশি দু’টি পাড়া নিয়ে হবে বৈঠকি আড্ডাও। চায়ের দোকানে ঢুকে জানবেন গ্রামবাসীর মতামত। সাধারণ মানুষের কথাকে গুরুত্ব সহকারে শোনা ও অভাব অভিযোগের নিষ্পত্তি করার ওপর জোর দেওয়া হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উন্নয়নের সুফল পাচ্ছেন মানুষ। তারপরও তাঁদের কোনওরকম সমস্যা, অভিযোগ, মতামত থাকলে তা নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করার বার্তাও দলের নেতা থেকে কর্মীদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩ ডিসেম্বর কাঁথিতে সভা করবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সভার আগেই যাতে জেলার কারখানার শ্রমিক থেকে কৃষকদের সঙ্গে যাতে একটা সুসমন্বয় গড়ে তোলা যায় সেইদিকেই বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। জোর দেওয়া হচ্ছে মানুষের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ককে আরও নিবিড় করে তোলার ওপরেও। গ্রামবাসীর কাছে গিয়ে নেতৃত্ব বিশেষভাবে শুনতে চান—জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে তাঁদের কষ্টের কথা এবং কেন্দ্রীয় সরকার সম্পর্কে তাঁদের বক্তব্য।