নিজস্ব প্রতিনিধি: উনিশের লোকসভা ভোটে কংগ্রেস গড়েও যে বদল আসছিল তার আঁচ কিছুটা হলেও মিলেছিল মুর্শিদাবাদ থেকে। সেখানকার ৩টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ২টিতেই জয়ী হয় তৃণমূল। সেই ফলই কার্যত একুশের যুদ্ধে মুর্শিদাবাদের মাটিতে তৃণমূলকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। জেলার ২২টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে জঙ্গিপুর ও সামসেরগঞ্জ বাদ দিয়ে সব কেন্দ্রেই ভোট হয়েছিল সেই সময়ে। সেই ভোটের ফলাফলেই দেখা যায় ১৮টি আসনে বাজিমাত করেছে তৃণমূল। এবারে যখন জঙ্গিপুর ও সামসেরগঞ্জে ভোট নেওয়া হল তখন আন্দাজই করা গিয়েছিল দুই কেন্দ্রেই জয়ী হবে তৃণমূল। বাস্তবেও সেটাই হল। জঙ্গিপুরে তৃণমূল প্রার্থী তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জাকির হুসেন জিতলেন ৯২ হাজার ৬১৩ ভোটের ব্যবধানে আর সামসেরগঞ্জে তৃণমূল প্রার্থী আমিরুল ইসলাম জিতলেন ২৬ হাজার ১১১ ভোটের ব্যবধানে।
রবিবার সকাল থেকেই জঙ্গিপুরের পলিটেকনিক কলেজে জমেছিল ভিড়। সেখানেই এই দুই বিধানসভা কেন্দ্রের গণনা হয়েছে। কার্যত সেই গণনা শুরুর প্রথম থেকেই দেখা যায় দুটি কেন্দ্রেই তৃণমূল প্রার্থীদের এগিয়ে থাকতে। এরপর বেলা যতই গড়িয়েছে তৃণমূল প্রার্থীদের ব্যবধান ততই বেড়ে গিয়েছে তাঁদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে। তবে অনেকেই মনে করেছিলেন এই দুই কেন্দ্রে তৃণমূল যেমন জয়ী হবে তেমনি দ্বিতীয় স্থানে হয়তো থাকবে বিজেপি। সেই হিসাব কিন্তু পুরোপুরি মেলেনি। জঙ্গিপুরে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও সামসেরগঞ্জে কিন্তু দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে কংগ্রেস। বিজেপি সেখানে নেমেছে তৃতীয় স্থানে। আর গেরুয়া বাহিনীর এই পিছিয়ে পড়াই বাংলার রাজনীতিতে এক নতুন ছবি তুলে ধরতে চলেছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তাঁদের ধারনা এবার সময় যত গড়াবে বাংলার রাজনীতির আঙিনা থেকে বিজেপিকে ততই পিছু হঠতে হবে। সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে উঠে আসতে পারে কংগ্রেস।
এদিনের ফলাফল আরও দুটি কথা বলে দিচ্ছে। এক, রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে এখনও তৃণমূলের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। আর দুই, বামেরা আগামী দিনে রাজ্য রাজনীতিতে তাঁদের প্রাসঙ্গিকতা ও গুরুত্ব দুই হারাতে চলেছে। এবারে তাঁদের ভোট প্রাপ্তির হার এতই কম যে ওর থেকে বেশি লাইক নানা সোশ্যাল মিডিয়াতে পাওয়া যায় ব্যক্তিগত ছবি পোস্ট করে। কার্যত এই দুর্দশাই বলে দিচ্ছে বাংলায় আর বামেদের কোনও জায়গাই নেই। তাঁরা এই অবস্থায় আজ এসে দাঁড়িয়েছে অন্ধ মমতা বিরোধীতা করতে গিয়েই। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখেও তাঁরা নিজেদের ভুল শুধরাতে পারছে না। মমতা বিরোধীতাকে হাতিয়ার করেই তাঁরা রাজ্য রাজনীতিতে পড়ে থাকতে চাইছে। কিন্তু বাংলার মানুষ যে তাঁদের এই ভূমিকাকে আর পছন্দ করছে না সেই সত্যিটা তাঁরা মানতে পারছেন না।