নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্য রাজনীতিতেই বীরভূম(Birbhum) এবং অনুব্রত মণ্ডল(Anubrata Mondol), থুড়ি কেষ্ট, কার্যত একই কয়েনের এপিঠ ওপিঠ। সেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা এখন সিবিআইয়ের হেফাজতে। পরে হয়তো যেতে পারেন জেলেও। আর একবার গেলে যে খুব সহজেই বেড়িয়ে আসতে পারবেন এমনও নয়। তৃণমূল(TMC) অবশ্য এখনও অনুব্রত মণ্ডলকে দলের জেলা সভাপতির পদেই রেখে দিয়েছে। খুব শীঘ্রই তাঁকে সেই পদ থেকে সরাতেও চায় না তৃণমূল। কেননা এক তো অনুব্রত’র বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই এখনও প্রমাণিত হয়নি আর দুই, তাঁর বাড়ি থেকে কিছু উদ্ধারও হয়নি এমনকি তাঁর বিষয়সম্পত্তি নিয়েও কোথাও কোনও গরমিল খুঁজে পায়নি সিবিআই(CBI)। কিন্তু শুধু কী এই দুই কারণেই জন্যই কেষ্টকে পদে রেখে দিয়েছে তৃণমূল? নাকি এর পিছনে রয়েছে অন্য কোনও কারণ? সেই সূত্রেই এবার সামনে উঠে এল ভিন্ন এক গপ্পো যাকে কেউই খারিজ করতে পারছে না।
কেষ্টকে সিবিআই গ্রেফতার করার পরে পরেই প্রশ্ন উঠেছিল যে অনুব্রতকে কী দল আর তাঁর পদে রাখবে? যদি না রাখে তাহলে কার হাতে দায়িত্ব যাবে? যদিও সেই প্রশ্নের উত্তর মিলেছিল রাতেই। দল আপাতত অনুব্রতকে তাঁর পদেই রেখে দিচ্ছে। বড্ড জোর সেখানে কিছু নেতানেত্রীকে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হবে এলাকা ভাগ করে দলের নিত্যদিনের কাজকর্ম চালানোর জন্য। সেই সঙ্গে জেলায় দলের সংগঠন ও কাজকর্ম এবার হয়তো নিজের কাঁধে তুলে নেবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এখানেই প্রশ্ন কেন সরানো হচ্ছে না অনুব্রতকে? কেন কোনও মুখকে তাঁর জায়গায় তুলে আনা হচ্ছে না? এর উত্তর মিলেছে তৃণমূলেরই অন্দরে। বীরভূমে জোড়াফুল শিবিরের নেতাদের দাবি, নতুন মুখ তুলে এনে কোনও লাভ নেই। কেননা কেষ্ট যে সিস্টেমে বীরভূমে দল চালিয়েছেন, তাতে নতুন করে শ্রীরামকৃষ্ণের বাণী দিয়ে কেউ দল চালাতে পারবেন না সেখানে। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির কাউকে ব্যবহার করে দলের ভাবমূর্তি মেরামত করার চেষ্টা করা যেতে পারে। কিন্তু জেলা সভাপতি করে নয়। কাউকে সে পদে বসানো হলেও তিনি এই সিস্টেমে মানিয়ে নিতে পারবেন না। কেননা সব জায়গায় কেষ্ট’র নিজের লোক রয়েছে। তা সে বুথ হোক কী জেলা, পঞ্চায়েত হোক কী ব্লক, পাথর খাদান হোক কী চালকল। এই সিস্টেম রাতারাতি ভাঙার নয়। কেষ্ট দীর্ঘদিন জেলে থাকলেও এই সিস্টেম বীরভূমে সক্রিয় থাকবে।
লাল মাটির জেলার জোড়াফুলের নেতাদের আরও দাবি, বীরভূমের মাটিতে তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠনে যে ভাবে অনুব্রত মণ্ডল তাঁর প্রভাব বিস্তার করে রেখেছেন, বিভিন্ন লোককে যেভাবে বিভিন্ন শাঁসালো পদে বসিয়ে রেখেছেন, তাতে নতুন কারোর পক্ষে তা আয়ত্ত করা বা দখল করা খুবই কঠিন। সায়গল যে তাঁর হয়ে ‘কাজ’ করত, সেটা জেলার কারও অজানা ছিল না। চায়ের দোকানে যে গ্লাস ধোয়, সে পর্যন্ত জানে, কে কত টাকা নেয়! কে কার হয়ে টাকা তোলে! কাউকে তোয়াক্কা করে না কেউ। কোনও আড়ালও রাখা হয় না। এতটাই বেপরোয়া অনুব্রতের লোকজন। পরিস্থিতি যে জায়গায় গিয়েছে, তা রাতারাতি বদলে যাবে না। কেষ্ট জেলে গেলেও পাথর খাদান, চালকল, বালি খাদান থেকে নিয়মিত টাকা ঢুকবে ফাণ্ডে। আর এই সিস্টেমকে চাঙ্গা রাখতে হলে অনুব্রতকেও হাতে রাখতে হবে। তা সে জেলে থাক কী ঘরে। কেষ্ট ঘরে বসেও জেলা চালাতে পারে এটা তৃণমূলের শীর্ষ নেতানেত্রীরাও জানেন।