নিজস্ব প্রতিনিধি: গল্পটা ১২০ কোটির। এর মধ্যে নগদ মিলেছে ৫০ কোটির। ব্যাঙ্কে পাওয়া গিয়েছে ৫-৬ কোটি। অনান্য সম্পত্তি নিয়ে আরও ১৪-১৫ কোটি। কিন্তু বাকি টাকা কোথায় গেল? স্কুল সার্ভিস কমিশন(SSC) বা এসএসসি’র দুর্নীতিকাণ্ডে তদন্তে নেমে ইডি(ED) আধিকারিকদের এটাই ভাবাচ্ছিল। ভাবতে ভাবতে আর খবর জোগাড় করতে করতে সূত্রও পেয়ে গেলেন তাঁরা। তারপর তা ধরে তদন্তে নেমে যা জানতে পারলেন তাও কিছু চমকে দেওয়ার মতোই তথ্য। ঘুষের টাকা গিয়েছে ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি’র আধিকারিকেরা জানতে পেরেছেন, শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতির টাকা খাটছে দেশের বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এই টাকা লগ্নি করা হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের(Partha Chattopadhay) আত্মীয়স্বজন ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের(Arpita Mukhopadhay) নামে। আর এখানেই প্রচন্ড রকমের প্রাসঙ্গিকতা পেয়ে গিয়েছে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Baishakhi Banerjee) দাবি।
ইডির আধিকারিকেরা তদন্তে নেমে জানতে পেরেছেন, এখনও পর্যন্ত যে অর্থ ও সম্পত্তি তাঁরা উদ্ধার করতে পেরেছেন তার পরেও একটা বড় অংশ রয়েছে গিয়েছে ওন্য কোথাও যা তাঁরা এখনও উদ্ধার করে উঠতে পারেননি। প্রায় ২০-২৫ কোটি টাকা এখনও তাঁদের হাতের নাগালের বাইরে রয়েছে। ইডি’র আধিকারিকেরা জানতে পেরেছেন, পার্থবাবু রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিরা আসতেন তাঁর কাছে। গুটিকয়েকের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। তদন্তকারীদের দাবি, তাঁদের সঙ্গে অর্পিতার পরিচয় করিয়ে দেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। এই তথ্য জেরাতে অর্পিতা স্বীকারও করেছে। তারপরে অর্পিতার নামে থাকা একাধিক কোম্পানির মাধ্যমে ওই সব বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা ঢালা হয়। সব টাকাই বিনিয়োগ করা হয়েছে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে। সেই সঙ্গে কেনা হয় ওই সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শেয়ারও যা পার্থ’র আত্মীয়স্বজনদে নামে কেনা হয়েছে বলে ইডি জানতে পেরেছে। ওই সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছু এ রাজ্যের আর কিছু উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, গুজরাতের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যের। আর এখানেই বিজেপি যোগের প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। প্রাসঙ্গিকতা পেয়ে গিয়েছে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি।
কী সেই দাবি? পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইডি’র হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে বৈশাখী এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, তিনি নাকি ফোনে পার্থ’র সঙ্গে কথা বলেছিলেন এসএসসি-তে শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতির ঘটনায় সিবিআই তদন্ত নিয়ে। সেই সময় পার্থ নাকি দাবি করেন, বিজেপির সঙ্গে তাঁর খুব ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। নিত্যদিন নাকি তাঁদের সঙ্গে কথা হয়। তাই তাঁর কোনও ভয় নেই। তাঁর নাকি কিছু হবে না। এখন বৈশাখীর এই দাবি ঘিরে একটাই প্রশ্ন উঠছে এসএসসি’র দুর্নীতির টাকা যদি বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ হয়ে থাকে তাহলে কী এই কাণ্ডে বিজেপির নেতারাও জড়িত? যদি সেটা হয় সেই সত্যি কী আদৌ সামনে আনবেন ইডি’র আধিকারিকেরা? ওই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আদৌ কী ইডিকে এই ঘটনার তদন্ত সাহায্য করবে নাকি সবই কোনও অদৃশ্য অঙ্গুলিহেলনে ধামাচাপা পড়ে যাবে, আপাতর সেদিকেই তাকিয়ে থাকবেন বাংলার আমজনতা।