এই মুহূর্তে




হারাতে বসেছে কলকাতার দ্বিতীয় বারোয়ারি পুজোর ঐতিহ্য, নেতাজি এসেছিলেন এই মণ্ডপে

নিজস্ব প্রতিনিধি: হারাতে বসেছে কলকাতার দ্বিতীয় ঐতিহ্যবাহী বারোয়ারি পুজো। টিমটিম করে জ্বলছে ঐতিহ্যের আলো। ১৯১০ সালে শুরু হয়ে কলকাতায় বারোয়ারি পুজো। জানা যায়, ভবানীপুরে ‘সনাতন ধর্মোৎসাহিনী সভা’-র আয়োজনে শুরু হয় কলকাতার প্রথম বারোয়ারি পুজোর। এরপর ১৯১সালে কলকাতার দ্বিতীয় বারোয়ারি পুজো হয় উত্তর কলকাতায়। যার বর্তমান নাম ‘শ্যামপুকুর আদি সার্ব্বজনীন দুর্গোৎসব’। আজ ১১৫ বছরে আগের এই ঐতিহ্যবাহী পুজোর ইতিহাস আপনাদের জানাবো। সালটা তখন ১৯১১, ইংরেজ দের বিরুদ্ধে চলছে বাঙালিদের অদম্য লড়াই। তবে এই লড়াইয়ের অন্য মাত্রা যোগ করেছে মোহনবাগান। ইংরেজদের হারিয়ে আইএফএ শিল্ড জিতেছেন ভাদুড়ি ভাইয়েরা। স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাক্কালে নতুন হাওয়া জুগিয়েছিল মোহনবাগানের সে জিত। তখন কলকাতায় বড় জমিদার বাড়ির মতোই ছিল মধ্যবিত্তদের একতলা-দোতলা বাড়ি। পাশাপাশি মাটির বাড়িও ছিল। জলাশয় ছিল। ফাঁকা জমি, জঙ্গল ছিল। আর কাঁচা রাস্তা ছিল। শ্যামপুকুর ছিল পল্লিঅঞ্চল।

কলকাতার বাসীরা নিজেদের তখন পল্লিবাসিনী বলে পরিচয় দিত। এদিকে ইংরেজদের অত্যাচারে ফুঁসছে গোটা দেশ। জায়গায় জায়গায় ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। জাঁকজমকভাবে দুর্গাপুজো হচ্ছে কেবল জমিদারদের বাড়িগুলিতে। সেখানে ইংরেজরাও আমন্ত্রণ পাচ্ছেন। খোলমকুচির মতো উড়ছে টাকা। সাধারণ মানুষরা তখন জমিদার বাড়ির পুজোয় অংশ নিলেও মর্যাদা পাচ্ছে না। সেই দিকে নজর তাকিয়েই জনসাধারণ ভবানীপুরে প্রথম বারোয়ারি পুজো শুরু করল। যেখানে সবার প্রবেশ থাকবে অবাধ। যদিও সে সময়ে বারোয়ারি পুজোর উদ্যোগ নেওয়াও এক বৈপ্লবিক পদক্ষেপ। কেননা চলছে ইংরেজদের রাজ। পাশাপাশি জমিদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলনও বটে। সবাই চাইছেন রাজবাড়ির অঙ্গন থেকে বেরিয়ে দুর্গা হোক সবার। সে পথে হেঁটে শ্যামপুকুরে আয়োজিত হল প্রথম বারোয়ারি দুর্গা পুজো। তার কয়েক বছরের মধ্যে স্বদেশি আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা নেবে বাঙালির দুর্গাপুজো। ঠাকুরের আশীর্বাদে সুভাষচন্দ্র বসু এবং অন্যান্য বিপ্লবীরা বিপ্লবে সংগঠিত হবে। সে কাজ ততদিনে শুরু করে দিয়েছে। আর তখন থেকে ঘটনা বারোয়ারি পুজোর শুরু। ফড়িয়াপুকুর থেকে শ্যামপুকুর স্ট্রিটের দিকে এগিয়ে গেলে ডানহাতেই দু একটি সরু গলি। রামধন মিত্র লেন।

সেখানে আজও কলকাতার দ্বিতীয় ঐতিহ্যবাহী বারোয়ারি পুজো আয়োজিত হয়। শ্যামপুকুর আদি সর্বজনীন। তবে বর্তমানে দাঁড়িয়েও পুজোর আড়ে বহরে খুব একটি বাড়েনি। জাঁকজমক প্রায় নেই। গুটি কয়েক উদ্যোক্তা পুজোর কৌলিন্য বজায় রাখতে চাঁদা তুলে প্যান্ডেল করেন। আচারনিষ্ঠ হয়ে পুজোর কাজকর্ম সারেন। অথচ যে পুজো কলকাতার বারোয়ারি পুজোর ঐতিহ্য বহন করছে এখনও, সেই শ্যামপুকুরের দিকে কর্পোরেট জগতের কোনও নজর নেই। ফলে টিমটিম করে জ্বলে কলকাতার দ্বিতীয় বারোয়ারি পুজোর আলো। সত্যচরণ দাস, সুবোধ মিত্র (গোবিন্দ), নিবারণচরণ দাস, দেবেন মিত্র, ফণীবাবু, মণিবাবুদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই বারোয়ারি পুজো। ইতিহাস তাঁদের একেবারে ভুলেই গিয়েছে। তাই এ বছর কলকাতার থিম পুজোর পাশাপাশি এক সুযোগে ঘুরে আসুন কলকাতার দ্বিতীয় ঐতিহ্যবাহী বারোয়ারি পুজোর মণ্ডপ থেকে।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

নিরঞ্জনের সময় ঘটে অদ্ভুত ঘটনা, এই বাড়িতে ৯০ বছর ধরে একই মূর্তিতে পূজিত হন উমা

মুসলিমদের নিবেদন করা ফলেই হয় শ্রীরামপুরে রাজা রামমোহন রায়ের মামাবাড়ির পুজো

কনৌজ থেকে বাংলায় এসেছিলেন বংশের আদিপুরুষ, একই পরিবারের তিন পুজোতে তাই মেতে ওঠে মাকড়দহ

নিম্নচাপের ফলে ঝাড়খণ্ডে একটানা বৃষ্টি, ফের ডিভিসি’র জল ছাড়া শুরু, প্লাবনের আশঙ্কা

রাত পোহালেই মহালয়া, গঙ্গার ঘাটগুলিকে ঘিরে পুলিশের কড়া নজরদারি

রিলস বানাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ যুবক, হইচই ইংরেজবাজারে

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ