নিজস্ব প্রতিনিধি: ঝালদার (Jhalda) কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনে বড়সড় তথ্য এল সিবিআইয়ের (CBI) হাতে। জানা গিয়েছে, ঝাড়খণ্ড থেকে আমদানি করা হয়েছিল বেআইনি অস্ত্র। আর বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল শার্প শুটার। তপন খুনে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছিল কলেবর সিং-কে। প্রসঙ্গত, তাকে দেখা গিয়েছিল অকুস্থলের রাস্তার ধারে সিসিটিভি ফুটেজে। খুনের আগে এলাকা পরিদর্শনে প্রথমে আসে কলেবর। এমনকি খুনের পর বাইকে করে শুটারকে ঝাড়খণ্ড ছেড়ে দিয়ে আসে ।
জানা গিয়েছে, শার্প শুটারকে ভাড়া করেছিল কলেবর সিং। আর শুটার প্রায় ১ লক্ষ টাকার অস্ত্র ভাড়া করেছিল ঝাড়খণ্ড থেকে। তারপর ঘটনার দিন কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুকে লক্ষ্য করে ৩ রাউন্ড গুলি চালায় শুটার। চতুর্থ গুলি চালানোর সময় তা বন্দুকের নলে আটকে গেলে আর রিস্ক নেয়নি শুটার। পালিয়ে যায় এলাকা থেকে। এরপর তাকে ঝাড়খণ্ডে বাইকে করে পৌঁছে দেয় কলেবর। ধৃত কলেবরকে জিজ্ঞসাবাদ করে এই তথ্য পেয়েছে সিবিআই। শুটারের খোঁজে চালানো হচ্ছে তল্লাশি।
প্রসঙ্গত, তপন কান্দু খুনে সিট (SIT)- এর হাতে ধরা পড়েছিল আশিক খান। পুলিশ গ্রেফতার করেছিল মৃত কংগ্রেস কাউন্সিলরের দাদা নরেন কান্দুকেও। একই কাণ্ডে পুলিশের (police) জালে ধরা পড়ে কলেবর সিং। সম্প্রতি ঝালদা কাণ্ডের তদন্তভার হাতে পায় সিবিআই। তারপর দায়ের করে এফআইআর। এদিকে, ঝালদা কাণ্ডে ক্লোজ হওয়া পাঁচ পুলিশকর্মীকে আগেই জেরা করে সিবিআই। তাদের বয়ান রেকর্ড করা হয়। তপন কান্দু যেখানে খুন হয়েছিলেন, সেখানেও নিয়ে আসা হয় তাঁদের। এঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল আগেও। জেরা করা হয়েছিল এসডিপিও-কেও। ঝালদায় কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন সেফাল বৈষ্ণব ওরফে নিরঞ্জন। গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন তিনি। উদ্ধার হয়েছিল সুইসাইড নোট। নিরঞ্জনের আত্মহত্যার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে। গত বৃহস্পতিবার নিরঞ্জনের বাড়িতে যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। মৃতের বৌদি পবিতা বৈষ্ণবের সঙ্গে কথা বলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার প্রতিনিধি দল।
জানা গিয়েছে, এদিন সিবিআই প্রতিনিধি দলের ৫ প্রতিনিধি দল নিরঞ্জনের বাড়িতে যান। যেখানে আত্মহত্যা করেছিলেন সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। যেই বাঁশে ঝুলেছিল মৃতের দেহ, সেই বাঁশ থেকে মেঝের দূরত্বের মাপ নেয় প্রতিনিধি দল। সূত্রের খবর, এলাকাবাসীর সঙ্গেও কথা বলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা।
প্রসঙ্গত, ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনের প্রত্যক্ষদর্শীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল ৬ এপ্রিল সকালে। পরিবারের অভিযোগের তির ছিল পুলিশের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার পরের দিন মৃতের দাদা ঝালদা থানায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনের জন্য সিবিআই তদন্তের দাবি জানানো হয়েছিল। এই মামলায় ঝালদা কাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শীর আত্মহত্যার তদন্তভার হাতে নিল সিবিআই। নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থা।
পুলিশের বিরুদ্ধে নিরঞ্জনের পরিবারের অভিযোগ ছিল, কংগ্রেস কাউন্সিলর খুনের তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের নাম করে দিনের পর দিন নিরঞ্জনের ওপর আসলে অত্যাচার করা হয়েছে। ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে ও সাদা কাগজে লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে বয়ান। মানসিক চাপ দেওয়ার অভিযোগও তোলা হয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। ৬ এপ্রিল আত্মহত্যার দিন সকাল থেকে আত্মহত্যাকারীর মোবাইল ভ্যানিশ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ ছিল। সেই কথাও লেখা রয়েছে অভিযোগপত্রে। ঘটনার সত্যতা উদঘাটনের জন্য কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে নিরঞ্জনের পরিবার। উল্লেখ্য, সিবিআই তদন্ত শুরু হওয়ার দিনই এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছিল। প্রসঙ্গত, খুন হওয়া কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর স্ত্রী পূর্ণিমা বলেছিলেন, নিরঞ্জন ছিলেন তপন খুনের প্রত্যক্ষদর্শী। তপনের মৃত্যুর পরেও তাঁর বাড়িতে যাতায়াত ছিল নিরঞ্জনের। এমনকি আত্মহত্যা করার আগেরদিনও এসেছিলেন নিরঞ্জন, বলে দাবি করেন পূর্ণিমা। তপনের স্ত্রীর দাবি, নিশ্চয়ই পুলিশ চাপ দিচ্ছিল নিরঞ্জনকে। তা সহ্য করতে না পেরেই আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন নিরঞ্জন। পূর্ণিমা এই ঘটনাতেও দাবি জানিয়েছিল সিবিআই তদন্তের। প্রসঙ্গত, তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ বলেছিলেন, মৃত্যুর খবর অত্যন্ত শোকের কিন্তু যে কোনও তদন্তেই জেরা করতে হয়। এটা পুলিশের কাজ। তিনি এও বলেন, পুলিশ কখনও প্রভাবিত করেনি নিরঞ্জনকে। প্রসঙ্গত, ঝালদার কংগ্রেস নেতা নেপাল মাহাতো বলেন, পুরানো ঝালদা থানায় আগুন লাগার ঘটনারও তদন্তভার যাতে সিবিআই হাতে নেয়।