নিজস্ব প্রতিনিধি: রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার পিছু ১০০০ টাকা ছুঁতে আর বেশি দেরি নেই। পেট্রোল লিটার প্রতি দাম ১০০ টাকা পেরিয়ে গেল। ভোজ্য তেল তো অনেক দিন ধরেই ২০০ টাকার আশেপাশে। এর মধ্যেই কিছু দিন আগে ৫ রাজ্যের বিধানসভার মিটতেই ইপিএফও- তে সুদের হার কমানো হয়েছে। যা গত কয়েক দশকে বেনজির। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম লাগামছাড়া। পেট্রোল, ডিজেলের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে জিনিসের দাম আরও বাড়বে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ইতিমধ্যেই প্রায় শতাধিক জরুরি ওষুধের দাম বাড়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এই এপ্রিলেই আবার ডাকঘরের স্বল্পসঞ্চয় প্রকল্পগুলির সুদের হার ঘোষণা হবে। সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ থেকে অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ মানুষদের ভয়ে এখন থেকেই বুক কাঁপতে শুরু করেছে।
কারণ বাজারে জোর গুজব, মোদি সরকার সুদের হার কমানোর মতো ভাতে মারার পথেই হাঁটতে চলেছে। আর সেটাই যদি সত্যি হয়, বহু পরিবারেই চাল, তেল, ডাল, নুন সামনের মাস থেকে আরও কিছুটা করে কম কিনতে হবে। কম না খেলে, সংসারের হেঁসেল টানা যাবে না যে। সরকারি, বেসরকারি সব ব্যাঙ্কেই এখন সুদের হার কম। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারি চাকরি থেকে যাঁরা অবসর নিয়েছেন, তাঁদের কম-বেশি মাস গেলে পেনশন আছে। ফলে তাঁদের চিন্তা অনেকটাই কম। কিন্তু এই দেশের লক্ষ-লক্ষ অবসরপ্রাপ্ত মানুষ আছেন, যাঁরা কোনও বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেছেন। যাঁদের কোনও পেনশন নেই। সংসার সামলিয়ে ছেলে, মেয়েকে মানুষ করে, প্রতিষ্ঠিত করে যেটুকু সঞ্চয় করতে পেরেছেন, তার সুদেই তাঁদের জীবন চলে। তাঁদের ভাগ্য প্রতি তিন মাস অন্তর ঠিক করে দেয় মোদি সরকার।
বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ডাক ঘরের বিভিন্ন প্রকল্পের সুদ ঘোষণা করা হয়। যা আবার এপ্রিলে ঘোষণা হবে। আর তাতেই শঙ্কিত হয়ে দিন গুনছেন দেশের মানুষ। অর্থনীতিবিদদের একাংশ বলছেন, দেশে বেকারত্বের হার বেড়েছে। করোনার কারণে চাকরি গিয়েছে বহু মানুষের। অর্থনীতির অবস্থাও টলমল। এই অবস্থায় মানুষের হাতে নগদ টাকার জোগান থাকা খুব দরকার। কিন্তু সেই পথগুলো নানাভাবে কঠিন হয়ে উঠছে।
কিন্তু মোদি সরকারের সেই দিকে নজর নেই বলেই বিভিন্ন মহলের অভিযোগ। রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি মমতা সরকারের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পগুলি নিয়ে সমালোচনা করলেও, সাধারণ মানুষ কিন্তু রাজ্যের এই উদ্যোগে খুশি। লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা লক্ষ-লক্ষ মহিলার মুখে হাসি ফুটিয়েছে। তার সঙ্গে বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য সাথী ব্যবস্থা, গ্রামীণ শিল্পীদের মাসিক ভাতা, সমাজের আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের জন্য ভাতা, অন্তত কয়েক লক্ষ পরিবারের কাছে কিছুটা সাহস জুগিয়েছে।
সাধারণ মানুষের সাফ বক্তব্য, এই টুকুই বা কোন সরকার দেয়। কম হলেও, একটু অনিয়মিত হলেও, কিছু অভাব অভিযোগ থাকলেও এই রাজ্য সরকার তো প্রকল্পগুলি নিয়ে ভেবেছে। আর তার সুবিধা তো বহু মানুষ পাচ্ছেনও। তাই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সমালোচনা করলেও রাজ্যের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ সেই সব কথায় বিশেষ কান দিচ্ছে না। উল্টে অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থার এক প্রবীণ কর্মচারী হরিপদ ঘোষের দাবি, সাধারণ মানুষকে বেঁচে থাকার ভরসা কেন্দ্রীয় সরকার দিতে পারছে না। পিএফের পেনশন তহবিলে হাজার হাজার কোটি টাকা থাকলেও এতোগুলো বছরেও নূন্যতম পেনশন মোদি সরকার বাড়াতে পারলো না। শুধু লোক দেখানো কমিটি গড়ে যায়। সামান্য এইটুকু থেকেই কেন্দ্রের মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।
চারিদিকে যখন মোদি সরকারকে নিয়ে এই রকম সমালোচনার ঝড় তখন স্বল্প সঞ্চয়ের সুদের হার ঘোষণা হবে আর কিছু দিন পরেই। এখন দেখা যাক কেন্দ্র কী সিদ্ধান্ত নেয়। তবে যেহেতু সামনে আর কোনও নির্বাচন নেই এবং উত্তরপ্রদেশ জয়ের পর মোদি এবং অমিত শাহ ভীষণভাবে খুশি, তাই আমজনতা একটু বেশি করে ভয় পেয়েই দিন গুনছেন।