দোল থেকে থেকে শুরু, তারপর দূর্গাপুজো, কালীপুজো। নতুন সংযোজন টিপকাণ্ড। একের পর এক হিন্দু নির্যাতনের ঘটনার সাক্ষী বাংলাদেশ। সাক্ষী বললে বিষয়টা অনেকটাই লঘু হয়ে যাবে। তাণ্ডব বলাই বাঞ্ছনীয়। যে বাংলাদেশ এক সময় গর্ব করে বলত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা, হিন্দু নির্যাতন-নিপীড়ন সেই ভাবমূর্তিতে কালি ছিটিয়েছে। যেটা আরও বেশি পীড়াদায়ক, তা হল সরকার নিশ্চিত করে বলতে পারছে না যে আগামীদিনে এই ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না।
এই তাণ্ডবলীলার সঙ্গে যারা জড়িত, পুলিশ ও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করেছে ঠিকই। কিন্তু বাতাসে অনেকদিন ধরেই বিষ বইতে শুরু করেছে। বিষয়টা এমন নয়, যে সরকার সেটা বুঝতে পারেনি। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলী বুঝিয়ে দিচ্ছে, কোথাও যেন প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে। লিখতে গিয়ে মনে পড়ছে মুক্তমনা ব্লগার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা। একুশের বইমেলায় মৌলবাদীরা তাঁকে কুপিয়ে খুন করে। ঘটনায় দেশবাসী বিস্মিত হয়ে গিয়েছিল।
এই পাশবিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ঘটনার অভিঘাত এতটাই গভীর ছিল, যা বাঙালি তো বটেই, বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী মহল সেই হাড়হিম করা ঘটনা ভুলতে পারেনি। কোনওভাবেই ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলে পেয়েছে সর্বোচ্চ শাস্তি। কিন্তু সেই ঘটনার পরেও কি বাঙালি-হিন্দুদের লক্ষ্য করে তাণ্ডব বন্ধ হয়েছে? বঙ্গবন্ধু কী এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন, যে দেশে বাঙালি-হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ আজ চূড়ান্ত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে? যে দেশ রবীন্দ্রনাথের লেখা গানকে তাদের জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দিয়েছে, সেই দেশে আজ বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ পদে পদে হেনস্থার শিকার। কবে থামবে এই নির্যাতন?