নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: কথায় বলে, ‘কুপুত্র যদিও বা হয়, কুমাতা কদাপি নয়।’ অথচ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আশুগঞ্জে যা ঘটেছে, তাতে একরাশ লজ্জায় পড়েছে মাতৃজাতি। নিজের পরকীয়ায় পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল দুই দুধের শিশু। সেই কাঁটা উপড়ে ফেলতে নৃশংসভাবে বিষ মেশানো মিষ্টি খাইয়ে নিজের গর্ভজাত দুই শিশুপুত্রকে হত্যা করলেন কুমাতা লিমা বেগম। শিশুমৃত্যুর দায় ঝেড়ে ফেলতে ওষুধের উপরেই দোষ চাপিয়েছিলেন। তবে শেষ রক্ষা হলো না। খুনি মাকে গ্রেফতার করেছে আশুগঞ্জ থানার পুলিশ।
গত ১০ মার্চ আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা ইসমাঈল হোসেনের দুই ছেলে ইয়াছিন ও মোরসালিনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। ঘটনার পরেই দুই শিশুর মা লিমা বেগম অভিযোগ করেন, জ্বর-কাশির ওষুধ নাপা সিরাপ খাওয়ার পরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে দুই সন্তান। ওইঘটনা নিয়ে গোটা দেশেই তোলপাড় পড়ে যায়। যদিও ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, নাপা সিরাপ খেয়ে মারা যাওয়ার অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই।
দুই শিশুর রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। আচমকাই তদন্তে নাটকীয় মোড় নেয়। বুধবার রাতে লিমা বেগম ও তার প্রেমিক সফিউল্লার বিরুদ্ধে দুই শিশু সন্তানকে হত্যার অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেন ঈসমাইল হোসেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে লিমা বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের জেরায় শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়ে বিষ মেশানো মিষ্টি খাইয়ে দুই সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করে নেন লিমা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান, ‘আশুগঞ্জের একটি চালকলে শ্রমিকের কাজ করেন লিমা। আর তার স্বামী ঈসমাইল কাজ করেন ইটভাটায়। চালকলে কাজ করার সুবাদে আর এক শ্রমিক সফিউল্লার সঙ্গে লিমার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তারা বিয়ে করারও সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সেই বিয়ের ক্ষেত্রে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় দুই শিশুসন্তান। সেই পথের কাঁটা দূর করতে বিষ মেশানো মিষ্টি খাইয়ে ইয়াছিন ও মোরসালিনকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন লিমা ও তার প্রেমিক ঈসমাইল। পরিকল্পনামাফিক দুই শিশুকে খুন করে ঘটনা ধামাচাপা দিতে নাপা সিরাপের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়েছে বলে প্রচার করা হয়।