নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: কেউ পাঁচ বছর। কেউ দশ বছর, আবার কেউ টানা এক যুগ। কেউ বাড়ি থেকে বেরিয়ে আচমকাই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। কেউ আবার সাত বছর আগে ঘুরতে-ঘুরতে সীমান্ত টপকে পৌঁছে গিয়েছিলেন ওপারে। অনেক কষ্টে ওঁদের খোঁজ মিলেছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনের জন্য এতদিন আর দেশে ফিরিয়ে আনা যায়নি। অবশেষে শুক্রবার দুপুরে আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে প্রিয়জনের কাছে ফিরলেন পাঁচ মানসিক ভারসাম্যহীন। আর প্রিয়জনকে কাছে পেয়ে কার্যত অনেকের চোখেই আনন্দাশ্রু চিকচিক করে উঠছিল।
ভারত থেকে এদিন যাঁরা ফিরলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার সন্তোষ দেব। তাঁর ছেলে অন্তু দেব সাংবাদিকদের জানান, ‘প্রায় ৭ বছর আগে হঠাৎ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন সন্তোষবাবু। প্রথমে পরিবারের সদস্যরা ভেবেছিলেন হয়তো কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছেন। কিন্তু বাড়ি না ফেরায় বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নেওয়া শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত পুলিশে বিষয়টি জানানো হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাবা ভারতের আগরতলায় রয়েছেন। তার পর থেকে অপেক্ষার প্রহর গোনা শুরু হয়েছিল। এতদিন বাদে কাছে পেয়ে খুব আনন্দ হচ্ছে।’
সন্তোষবাবুর পাশাপাশি এদিন সীমান্ত পেরিয়ে প্রিয়জনের কাছে ফিরে এসেছেন কুমিল্লার চান্দিনার বাসিন্দা কুলসুম বেগম। ২০১৪ সালে আচমকাই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অনেক খোঁজার পরে জানা যায়, আগরতলায় রয়েছেন কুলসুম বেগম। কিভাবে পৌঁছে গেলেন সেখানে, আজও ভেবে পান না তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর বাসিন্দা রোজিনা বেগমও এদিন ফিরেছেন প্রিয়জনের কাছে। আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে কোনও খবর না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ধরেই নিয়েছিলেন তিনি হয়তো বেঁচে নেই। গত এক বছর আগে আচমকাই খবর পান, আগরতলায় রয়েছেন রোজিনা বেগম।
ত্রিপুরায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মদ সাংবাদিকদের বলেন, পাঁচ বাংলাদেশিই মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ত্রিপুরায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হতে আটক হন। পরে আদালতের নির্দেশে আগরতলার মডার্ন সাইক্রিয়াটিক হাসপাতালে তারা চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে তারা কিভাবে ভারতে এসেছেন সে ব্যাপারে কিছুই বলতে পারেনি। এদের অনেকেই এই হাসপাতালে চার থেকে পাঁচ বছর বা আরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ার পর তাদেরকে দেশে ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই হাসপাতালে আরও বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি চিকিৎসাধীন আছেন। পর্যায়ক্রমে তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।