নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: আশঙ্কাই সত্যি হলো। বন্দর নগরী নারায়ণগঞ্জের ‘গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমানের বুথে হারলেন শাসকদল আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। নারায়ণগঞ্জের আদর্শ স্কুলের ভোটকেন্দ্রে রবিবার শেষ বেলায় ভোট দিতে হাজির হয়েছিলেন স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমান। ভোটগণনা শেষ হতেই দেখা গেল, ওই বুথে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী পেয়েছেন ৫২৭ ভোট। আর তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার পেয়েছেন ৯৮২ ভোট। প্রায় সাড়ে তিনশো ভোটে হেরেছেন শাসকদলের প্রার্থী। আর ফলাফল পরকাশ হতেই নারায়ণগঞ্জের গডফাদার ও কুখ্যাত সন্ত্রাসী শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে সাবোতাজের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। শামীম ওসমানকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। নিজের বুথে দলীয় প্রার্থীর হারা নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি স্থানীয় সাংসদ।
বিদায়ী মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমানের ‘অহি-নকুলের’ সম্পর্কের কথা গোটা নারায়ণগঞ্জবাসীর জানা। কয়েক বছর আগে পুর ভোটে দু’জনেই লড়াইয়ে নেমেছিলেন। সেই নির্বাচনে কুখ্যাত সন্ত্রাসী শামীম ওসমানকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন নির্দল প্রার্থী আইভী। তার পর থেকে আওয়ামী লীগ করলেও দু’জনের মুখ দেখাদেখি বন্ধ। এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী আইভীকে হারাতে প্রথম থেকেই বিএনপি নেতা তথা নির্দল প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারকে মদত জোগানোর অভিযোগ উঠেছে শামীমের বিরুদ্ধে। প্রচার পর্বে একদিনও দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচারে দেখা যায়নি তাঁকে। বরং বন্দর নগরীতে শামীমের কুকর্মের হোতাদের প্রকাশ্যেই বিএনপি নেতা তৈমূরের পাশে দেখা দিয়েছে।
দলের স্থানীয় সাংসদের ‘রহস্যজনক’ ভূমিকার কথা আওয়ামী লীগ শীর্ষ নেতৃত্বের কাছেও পৌঁছয়। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে শামীমকে দল থেকে বহিষ্কারের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। চাপে পড়ে শেষ মুহুর্তে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রচারে নামার কথা ঘোষণা করেন নারায়ণগঞ্জের সাংসদ তথা গডফাদার। কিন্তু সেই ঘোষণার পরেও সক্রিয় হতে দেখা যায়নি শামীমকে। যদিও আওয়ামী লীগ প্রার্থী তথা বিদায়ী মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী স্পষ্টই জানিয়েছেন, ‘সাধারণ মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়া, বন্দরে সন্ত্রাসমূলক কাজকর্মের গডফাদার তাঁর হয়ে প্রচারে না নামায় শাপে বর হয়েছে। সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।’ সূত্রের খবর, নিজের বুথে দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে না পারায় আওয়ামী লীগ শীর্ষ নেতৃত্ব এবার নারায়ণগঞ্জের গডফাদারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের পথে হাঁটতে চলেছে।’