এই মুহূর্তে




সরকারি জমিতে থাকা সব মন্দির গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ জারি মোল্লা ইউনূসের




নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: রাজধানীর খিলক্ষেতের দুর্গামন্দির বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে দেশজুড়ে। যদিও তাতে সমালোচনাকে আমলই দিচ্ছে না রাজাকার মোল্লা মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার। উল্টে দেশজুড়ে সরকারি জমিতে থাকা সমস্ত মন্দির বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ফরমান জারি করা হয়েছে। শুক্রবার (২৭ জুন) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব তথা মৌলবাদী সংগঠন ‘আল্লাহর দল’ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সিরাজউদ্দিন মিয়া বিভিন্ন মন্ত্রকের সচিবদের চিঠি দিয়ে ওই নির্দেশ দিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, তিন দিনের মধ্যে সরকারি জমিতে নির্মিত বিভিন্ন মন্দিরের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। মন্দিরের পরিচালন সমিতিকে ওই মন্দির সরিয়ে নেওয়ার জন্য ৭২ ঘন্টার সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে। ৭২ ঘন্টার মধ্যে মন্দির না সরালে বুলডোজার চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিতে হবে। মন্দির ভাঙার সময় পুলিশ-সেনাবাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় জামায়াত ইসলামী ও এনসিপির নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাজধানী ঢাকার খিলক্ষেতের এক দুর্গামন্দির বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল রেল মন্ত্রক। মন্দির উচ্ছেদের সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের আপত্তি অগ্রাহ্য করে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রতিমা। ওই ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল। হিন্দুরা যাতে নির্বিঘ্নে তাঁদের ধর্মীয় আচরণ পালন করতে পারেন তা নিশ্চিত করার জন্য মোল্লা মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। সেই অনুরোধের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই দুর্গামন্দির গুঁড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে আখ্যা দিয়েছেন রেল উপদেষ্টা ফাওজুল কবীর খান। শুধু তাই নয়, সরকারি জমিতে থাকা সব হিন্দু মন্দির গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুঙ্কার ছেড়েছেন। তবে সরকারি জমিতে গড়ে ওঠা হিন্দু মন্দির গুঁড়িয়ে দেওয়া হলেও মসজিদ থাকবে বলে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, বদলে যাওয়া বাংলাদেশ ইসলামিক রাষ্ট্র। ফলে মুসলিম ধর্মানুসারীরা যা খুশি করতে পারবেন। দ্বিতীয় শ্রেণির হিন্দু নাগরিকদের সেই অধিকার নেই।

স্বাধীনতার পরেই খিলক্ষেতের স্থানীয় হিন্দুরা করোগেটেড টিন দিয়ে একটি দুর্গামন্দির গড়েছিলেন। মন্দিরটিতে নিয়মিত পুজো-অর্চনা হতো। কালীমাতার স্থায়ী প্রতিমাও ছিল। প্রতিবছর জাঁকজমক করে পালিত হতো দুর্গাপুজো। শেখ হাসিনা জমানার অবসানের পরেই খিলখেতের দুর্গামন্দিরটির উপরে নজর পড়ে মুসলিম মৌলবাদীদের। গত ২৩ জুন রাতে মন্দির ভাঙচুর করে একদল উগ্র মুসলিম। ওই ভাঙচুরের নেতৃত্বে ছিলেন ইসলামিয়া সুইট অ্যান্ড লাইভ বেকারির মালিক মুফতি মাহমুদুল হাসান ও জামায়াত ইসলামী নিয়ন্ত্রিত শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের খিলক্ষেত শাখার সভাপতি আবদুল কুদ্দুস। ২৪ ঘন্টার মধ্যে মন্দির অপসারণের সময়সীমা বেঁধে দেয়। মন্দিরে ভাঙচুরের সময় উপস্থিত হিন্দুদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার পাশাপাশি প্রাণনাশেরও হুমকি দেয়।

হামলার পরের দিন গত মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের তরফে খিলক্ষেত দুর্গামন্দির চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি নেওয়া হয়। মন্দিরে হামলাকারীদের গ্রেফতারেরও দাবি জানান। কিন্তু ওই দাবি মানা তো দূরে থাক উল্টে আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) মন্দির গুঁড়িয়ে দিতে বুলডোজার নিয়ে হাজির হন রেলওয়ের ডেপুটি কমিশনার ও বিভাগীয় এস্টেট অফিসার নাসিরউদ্দিন মাহমুদ। সঙ্গে করে পুলিশ সেনা ও জামায়াত ইসলামী সমর্থকদেরও নিয়ে আসেন। মন্দির ভাঙা রুখতে পাল্টা অবস্থান নেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মহিলা-পুরুষরা। অনেকেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে মন্দিরটি না ভাঙার জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু সেই অনুরোধে কর্ণপাত করেনি পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। উল্টে মন্দির রক্ষার জন্য কাতর অনুরোধ জানানো হিন্দু পুরুষ-মহিলাদের উপরে লাঠিও চালায়। অনেকেই বুলডোজার দিয়ে মন্দির গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। তাদের মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। মন্দিরে থাকা প্রতিমা সরিয়ে নেওয়ার জন্য সময় দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন মন্দির কমিটির সম্পাদক শ্যামল দাস। কিন্তু সেই সময় দেওয়া হয়নি। বুলডোজার দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে ফেলা হয় মূর্তি। একাধিক মানবাধিকার সংগঠনের তরফে খিলক্ষেতের হিন্দু মন্দির বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে ফেলার নিন্দা করা হয়েছে। তাদের মতে এই ঘটনা বাংলাদেশের ধর্মীয় সহনশীলতা ও সংখ্যালঘু অধিকার প্রশ্নে একটি কালো দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

শুক্রবার (২৭ জুন) খিলক্ষেতের দুর্গামন্দির বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সঠিক আখ্যা দিয়ে রেল মন্ত্রকের উপদেষ্টা ফাওজুল কবীর খান বলেছেন, ‘রেলের জমিতে অবৈধভাবে ওই মন্দির গড়ে তোলা হয়েছিল। সরকারি জমি দখলমুক্ত করতেই মন্দির গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। খিলক্ষেত কেন, দেশের যে প্রান্তে সরকারি জমি দখল করে মন্দির গড়া হয়েছে, তা সব মাটিতে মিশিয়ে দেব।’ রেল সহ বহু সরকারি জায়গায় যে মসজিদ নির্মিত হয়েছে তার ক্ষেত্রে একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মুসলিমদের ধর্মীয় স্থানের সঙ্গে হিন্দু মন্দিরের তুলনা করবেন না। মনে রাখবেন এ দেশটা মুসলিমদের।’ সকালে রেল উপদেষ্টার উস্কানিমূলক মন্তব্যের পর আতে বিদেশ মন্ত্রকের তরফেও খিলক্ষেতের দুর্গামন্দির গুঁড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে যথোপযুক্ত আখ্যা দেওয়া হয়। মুসলিম প্রধান দেশ বাংলাদেশে সরকারি জমিতে হিন্দুদের মন্দির নির্মাণের কোনও অধিকার নেই বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বিবৃতি দেওয়ার আগেই সরকাই জমিতে গড়ে ওঠা সমস্ত হিন্দু মন্দির ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ জারি করে মোল্লা মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়।

 




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

 মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে শেখ মুজিবের নাম মুছে ফেলার নির্দেশ মোল্লা ইউনূসের

ক্ষমতায় বিএনপিকে চান বাংলাদেশের ৩৯ শতাংশ তরুণ, বলছে জনমত সমীক্ষা

আইসিইউতে জনপ্রিয় গায়িকা ফরিদা পারভীন, ইউনূস সরকারের সাহায্য নিতে অস্বীকার

বদলের বাংলাদেশে দেড় বছরের শিশুর গলায় ছুরি ধরে মাকে গণধর্ষণ

থানায় ঢুকে কনস্টেবলকে ‘স্যার’ বলে পাকড়াও ভুয়ো এসআই, ঠাঁই শ্রীঘরে

বেনজির কাণ্ড, উর্দি পরেই জামায়াতের হয়ে ভোট চাইলেন পুলিশ কর্তা

Advertisement




এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ