আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ, ঢাকার সোহরাওয়ার্দি ময়দানে (সে সময় নাম ছিল রেসকোর্স ময়দান) হাজার হাজার মানুষের জমায়েত হয়েছিল। সামনে মুক্তিযুদ্ধের কাণ্ডারী তথা বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। তিনি ডাক দিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের তথা মুক্তিযুদ্ধের। ওই দিন হাজার হাজার মানুষ মুজিবর রহমানের সভায় দাঁড়িয়ে ছিলেন আর পিছনে ছিলেন আরও কয়েক হাজার মানুষ। যে ময়দানে তাঁরা দাঁড়িয়ে সকলে মুজিবর রহমানের বক্তৃতা শুনছিলেন তাঁর ঠিক পিছনেই ছিল একটি মন্দিরের চুড়ো। সেদিনের আলোকচিত্রে স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল ১২০ ফুট উঁচু ওই মন্দিরের চুড়োটি। সেটিই হল রমনা কালী মন্দির। কিন্তু সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকবাহিনী গণহত্যা চালানোর পাশাপাশি ডিনাইমাইট দিয়ে মন্দিরটিও কার্যত ধ্বংস করে দেয়। যেটুকু আছে তা আজও দাঁড়িয়ে আছে গণহত্য়ার সাক্ষী হয়ে।
ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম এই রমনা কালী মন্দির, যা আজ কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইতিহাস বলে একসময় ঢাকার সোহরাওয়ার্দি ময়দানের দক্ষিণ দিকে ২.২২ একর জমিতে ছিল এই রমনা কালী মন্দির এবং আনন্দময়ী আশ্রম। পাশেই এক বড় দিঘি। মন্দিরটি প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো বলে দাবি করেন ইতিহাসবিদরা। অপরদিকে ঐতিহাসিক মুনকাসির মামুনের মতে এটি পাঁচশো বছরের প্রাচীন। তাঁর দাবি, প্রায় ৫০০ বছর আগে ভারতের বদ্রীনাথ মন্দিরের সন্নসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনা এলাকায় একটি আখড়া প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যার নাম ছিল কাঠঘর। পরবর্তী সময় (সম্ভবত ১৭ শতকে) ওই আখড়ার প্রধান হরিচরণ গিরির উদ্যোগে বিক্রমপুর ও শ্রীপুরের জমিদাররা মূল মন্দিরটি নির্মান করেন। মূল মন্দিরটির দ্বিতল ছাদের উপর পিরামিড আকৃতির ১২০ ফুট উঁচু চুড়ো ছিল। চতুষ্কোনাকার এই মন্দিরটি চৌচালা রীতিতে নির্মিত, অর্থাৎ হিন্দু মন্দির হলেও স্থাপত্যশৈলীতে মুসলিম রীতি বিদ্যমান ছিল। প্রাচীন এই মন্দিরে কাঠের সুদৃশ্য সিংহাসনে ভদ্রকালীর মূর্তি স্থাপিত ছিল।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ গভীর রাতে পাক হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে এই রমনা কালীবাড়ি ডিনামাইট ও বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়। প্রবল ক্ষতিগ্রস্থ হয় মন্দিরটি। সেসময় মন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রমে উপস্থিত ছিলেন শতাধিক সন্নাসী এবং আরও কিছু নারী-পুরুষ। পাকিস্তানি সেনা তাঁদের প্রত্যেককে হত্যা করেছিল। এমনকি ওই ধ্বংসস্তুপে আগুন লাগিয়ে দেয় পাক হানাদার বাহিনী। তবে পরবর্তী সময় বাংলাদেশ সরকার ওই মন্দির সংস্কার করে তাঁর হৃত গৌরব ফিরিয়ে দেয় কিছুটা। বর্তমানে এখানে প্রতিষ্ঠিত ভদ্রকালীর একটি সুউচ্চ প্রতিমা। দেবী এখানে চতুর্ভুজা এবং শবরূপী মহাদেবের উপর দণ্ডায়মান। তাঁর দুপাশে ডাকিনী ও যোগিনী মূর্তি। মন্দির চত্বরেই আছে একটি দুর্গামন্দির এবং রাধামাধব মন্দির।