এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

বাংলার ডাকাত কালী: জনশ্রুতি এবং ইতিহাস (পর্ব চার)

নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রাচীন কাল থেকেই অবিভক্ত বাংলাদেশে ডাকাতির সঙ্গে কালীপুজো ও তন্ত্রসাধনার এক সুনিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। সেই আদিকাল থেকেই ডাকাতদল ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে কালীপুজো করতেন। তাঁদের পুজোর ধরণ ছিল যেমন আলাদা, তেমনই রীতিনীতি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। যা আজও কিছুটা ইতিহাসের পাতায় এবং অধিকাংশই জনশ্রুতিতে রয়ে গিয়েছে। এমনকি বাংলার বুকে বহু পীঠস্থান নির্মানের নেপথ্যেও রয়েছেন এককালের দুর্ধর্ষ কোনও ডাকাত। ইতিহাস ঘাঁটলেই দেখা যায় এককালে বাংলার কালীপুজোর সূচনাও ঘটেছিল এই ডাকাতদের হাত ধরে। বর্তমানে, বাংলার আনাচে আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে বহু কালীক্ষেত্র। যা ডাকাত কালী মন্দির নামেই পরিচিত। আমরা সেরকমই কয়েকটি ডাকাত কালী মন্দিরের অজানা ইতিহাস এবং পুজোর রীতি ধারাবাহিকভাবে জানাবো।

মনোহর ডাকাতের ছানা কালী

বর্তমানে শহর কলকাতার অভিযাত এলাকা পূর্ণদাস রোড। এখানেই অবস্থিত মনোহর ডাকাতের কালী মন্দির। এই মনোহর ডাকাতের নামেই এই রাস্তার নাম ছিল মনোহরপুকুর রোড। দক্ষিণ কলকাতার ঝাঁ চকচকে এই অভিজাত এলাকাই একসময় ছিল জঙ্গলে পরিপূর্ণ। সেই পলাশীর যুদ্ধের সময়কার ঘটনা। এই জঙ্গলে ছিল বাঘ ও সাপের নিত্য আনাগোনা। আর এই জঙ্গলের এক পারে আদিগঙ্গার তীরে কালীঘাট মন্দির। ফলে পূণ্যার্থীদের ওই জঙ্গল পায়ে হেঁটে পেরিয়েই কালীঘাটে পুজো দিতে যেতে হতো। আর ফিরতি পথে বেশিরভাগই পড়তেন মনোহর ডাকাত। ভালো নাম মনোহর বাগদি, একসয়ম ছিল ওই এলাকার ত্রাস। তবে তিনি ধনী ও মহাজনদেরই টাকা পয়সা লুঠ করতেন বলে জনশ্রুতি। এই মনোহর ডাকাত ছিল অকৃতদার। তবে সে ছিল গরিবের মসীহা। শোনা যায় যে সমস্ত ধনী ব্যক্তিরা গরিবদের শোষণ করতেন মনোহর তাঁদের ধরে নিয়ে এসে বলি দিতেন।

একটি ক্ষুদ্র কষ্টিপাথরের কালী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো করতেন মনোহর ডাকাত। তবে কোনও মন্দির ছিল না। ফলে ডাকাতি করতে যাওয়ার সময় সে মূর্তিটি দড়ি দিয়ে বেঁধে একটি কুয়োয় ফেলে যেতেন। এবং ফিরে এসে তুলে নিতেন। কিন্তু একদিন ডাকাতি করতে গিয়ে মারা গেলেন মনোহর। তাঁর ডাকাত দলও ভেঙে যায়। ফলে মায়ের মূর্তি ওই কুয়োয় রয়ে গেল। বহু বছর পর কালীঘাটের এক সাধক মায়ের স্বপ্নাদেশ পান। এবং খুঁজে একটি পরিত্যাক্ত কুয়ো থেকে কষ্টিপাথরের ক্ষুদ্র ওই কালীমূর্তিটি পান। কামাক্ষাচরণ মুখোপাধ্যায় নামে ওই সাধক সেটি তুলে নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু মুর্তিটি আকারে অতি ক্ষুদ্র তাই এর নাম ছানা কালী। তবে লোকমুখে এটি মনোহর ডাকাতের ছানা কালী নামেই পরিচিত। আবার একটি মতে মনোহর ডাকাত মাকে ছানার ভোগ দিতেন। তাই এর নাম ছানা কালী। অনেকের মতে এটিই এশিয়ার সবচেয়ে ক্ষুদ্র আকৃতির কালী মূর্তি।

আলিপুর চেতলা ডাকাত কালী

দুর্গাপুর ব্রিজ পেরিয়ে আলিপুরের চেতলা বাজারে ঢুকতেই চেতলা রোডে দেখা মেলে ডাকাত কালীর মন্দির। এখানে কালী মূর্তিটি একেবারেই ভিন্ন। মায়ের হাত বাঁধা থাকে ভারী শেকল দিয়ে। এই মন্দিরটি সিঙ্গুরের বিখ্যাত ডাকাত কালী মন্দিরের প্রতিরূপ হিসাবে নির্মিত হয়েছিল। এখানে মা কালীর মূর্তিটি উচ্চতায় অনেক। অসুরমুণ্ডের উপর মহাদেব শিব-সহ আসীন। দেবীর হাত এত ভারী যে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়। যদিও এর আরেকটি মত রয়েছে। যেহেতু মন্দিরটি সিঙ্গুরের ডাকাত কালী মন্দিরের অনুকরণে গড়া হয়েছিল তাই এই রীতি। কথিত আছে কুখ্যাত রঘু ডাকাত ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে মায়ের মূর্তি শেকল দিয়ে বেঁধে যেতেন। যাতে মা তাঁকে ছেড়ে না পালিয়ে যায়। এখানেও সেই রীতি মেনে মায়ের হাত শেকল দিয়ে বাঁধা।

ডাকাত সর্দার বিহারি বাগদির কালী

পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের নিরল গ্রামে রয়েছে প্রাচীন ডাকাত কালী মন্দির। সতীপীঠ অট্টহাসতলা যেতে পথে পড়ে ‘গর্দানমারির মাঠ’। এই অদ্ভুত নামের কারণ হল একসময় এই মাঠেই আস্তানা ছিল এক ডাকাত দলের। যার সর্দার ছিল বিহারি বাগদি। তাঁরা সতীপীঠ অট্টহাসতলায় আগত পুণ্যার্থীদের ধরে লুটপাট করে দেহ পুঁতে ফেলত জঙ্গলে। সেই থেকেই এই মাঠের নাম হয়ে যায় ‘গর্দানমারির মাঠ’। তা সেই ডাকাত সর্দার বিহারির বাজখাঁই গলার হাড় হিম করা চিৎকার, হা রে রে…. শুনলেই অনেকের বুকের রক্ত শুকিয়ে জল হয়ে যেত। তাঁর এক সাগরেদ ছিল কালী। সে দেখতে যেমন কুৎসিত তেমনই অত্যন্ত নৃশংস। কথিত আছে ডাকাত সর্দার বিহারির নির্দেশেই সে মানুষ ধরে এনে বলি দিত মা কালীর কাছে। অজয়ের শাখা নদী ঈশানীর তীরে একটি বটগাছের নীচে করাল বদনী কালীর মন্দির স্থাপন করেছিলেন। আজও এখানে পুজো হয় মহা ধুমধামের সঙ্গে।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

গন ভাইফোঁটার পরিকল্পনা নিয়েছে বসিরহাটের ‘নবোদয় সংঘ’

বনগাঁ থানার এবারের কালীপুজোর থিম ‘ কৈলাস পর্বতে মহাদেব’

বাঁকুড়ার সাঁতরা বাড়ির “বড় বৌমা” পূজিত হলেন মা কালীর রূপে

নৈহাটির বড়মার পুজোয় ভক্তদের ভিড়

তারাপীঠে সারারাত খোলা থাকছে গর্ভ গৃহের দরজা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন উপবাস, নিজের হাতে রান্না করলেন ভোগ

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর