এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

বাংলার ডাকাত কালী: জনশ্রুতি এবং ইতিহাস (পর্ব দুই)

নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রাচীন কাল থেকেই অবিভক্ত বাংলাদেশে ডাকাতির সঙ্গে কালীপুজো ও তন্ত্রসাধনার এক সুনিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। সেই আদিকাল থেকেই ডাকাতদল ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে কালীপুজো করতেন। তাঁদের পুজোর ধরণ ছিল যেমন আলাদা, তেমনই রীতিনীতি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। যা আজও কিছুটা ইতিহাসের পাতায় এবং অধিকাংশই জনশ্রুতিতে রয়ে গিয়েছে। এমনকি বাংলার বুকে বহু পীঠস্থান নির্মানের নেপথ্যেও রয়েছেন এককালের দুর্ধর্ষ কোনও ডাকাত। ইতিহাস ঘাঁটলেই দেখা যায় এককালে বাংলার কালীপুজোর সূচনাও ঘটেছিল এই ডাকাতদের হাত ধরে। বর্তমানে, বাংলার আনাচে আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে বহু কালীক্ষেত্র। যা ডাকাত কালী মন্দির নামেই পরিচিত। আমরা সেরকমই কয়েকটি ডাকাত কালী মন্দিরের অজানা ইতিহাস এবং পুজোর রীতি ধারাবাহিকভাবে জানাবো।

সিঙ্গুরের ডাকাত কালী

প্রায় ৫০০ থেকে ৫৫০ বছরের প্রাচীন সিঙ্গুরের ডাকাত কালী মন্দির ঘিরে রয়েছে নানা ইতিহাস ও জনশ্রুতি। সিঙ্গুরের পুরুষোত্তমপুরে অবস্থিত ডাকাত কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা নিয়ে দুটি মত রয়েছে। একটি মতে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিল রঘু ডাকাত আর অন্যমতে এ কালীর প্রতিষ্ঠা করেন গগন ডাকাত বা ডাকাত সর্দার বিশু। তবে ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় নীলকর সাহেবদের আমলেই সিঙ্গুরের ডাকাত কালী মন্দিরের উপস্থিতি ছিল। জানা যায়, বহু নীলকর সাহেবদের খুন করে জ্বালিয়ে দিয়েছিল এই বিশু ডাকাত। তিনি এই মন্দিরে পুজো দিয়েই ডাকাতি করতেন। এখানে একসময় নরবলি হত বলেও শোনা যায়। জনশ্রুতি রঘু অথবা গগন ডাকাত ঘট প্রতিস্থাপন করে এই পুজো শুরু করেছিলেন।

সিঙ্গুরের ডাকাত কালীর মন্দির ঘিরেও মা সারদা এবং রামকৃষ্ণ দেবের গল্প রয়েছে। অসুস্থ রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবকে দেখতে যাওয়ার পথে মা সারদা দেবীকে এই স্থানে দুই ডাকাত আটকে রেখেছিলেন। এবং স্বয়ং মা কালী দেখা দিয়ে ওই দুই ডাকাতকে নিবারণ করেন। এই অলৌকিক ঘটনায় ভয় পেয়ে গগন ডাকাত ও রঘু ডাকাত কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে বর্ধমানের মহারাজ মা কালীর স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পরে প্রতিমা ও মন্দির নির্মিত হয়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল আজও সিঙ্গুরের মল্লিকপুর, জামিনবেড়িয়া ও পুরসোত্তমপুর এই তিন গ্রামে কোনো বাড়িতে বা বাড়োয়ারীতে হয় না কোন কালীপুজো। এমনকি কোনও বাড়িতে দেওয়ালে টাঙানো থাকেনা ক্যালেন্ডারে আঁকা কালী মূর্তি। সিঙ্গুরের ডাকাত কালী মন্দিরের মা এতটাই জাগ্রত যে এই প্রতিমার পুজো ছাড়া অন্য কালী প্রতিমার পুজো করতে সাহস পায় না এলাকার মানুষজন।

সিঙ্গুরের কাছে তেলো-ভেলোর মাঠের ডাকাত কালী

সিঙ্গুরের কাছে তেলুয়া ও ভালিয়া নামে পাশাপাশি দুটি যাদের সংক্ষেপে নাম হল তেলো এবং ভেলো। মাঝখানে এক বিশাল মাঠ ছিল। এখন সেখানেই রয়েছে কালী মন্দির। প্রায় একশো বছর আগের ঘটনা, মা সারদা কয়েকজনের সঙ্গে কামারপুকুর থেকে পায়ে হেঁটে দক্ষিণেশ্বরের দিকে যাচ্ছেন। দুুপুরের মধ্যেই আরামবাগ পৌঁছে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেখানেই ছিল তেলো-ভেলোর মাঠ। সেসময় ওই মাঠটি ছিল ডাকাতদের আড্ডা। ফলে সকলেই ওই মাঠ দ্রুত পেরিয়ে যেতে মরিয়া। কিন্তু ক্লান্ত অবসন্ন মা সারদা অনেকটা পিছিয়ে পড়লেন। এমন সময় হাড় হিম করা চিৎকার। দৈত্যের মতো কালো চেহারার এক প্রকাণ্ড মানুষ লাঠি ঠুকে এসে মায়ের মুখোমুখি দাঁড়ায়। তার মাথায় ঝাঁকড়া চুলের গোছা, হাতে পায়ে লোহার বালা, কপালে রক্ততিলক। মা বুঝলেন তিনি ডাকাতের খপ্পড়ে পড়েছেন। তাঁর সামনে দাঁড়িয়েছে ভীম ডাকাত। সে মা সারদাকে শুধোয় কে তুই? কোথায় চলেছিস?

মা বললেন, আমি তোমার মেয়ে গো বাবা, সারদা। কথিত আছে, সে সময় ডাকাত সর্দার দেখেন মায়ের পিছনে খড়্গ হাতে দাঁড়িয়ে স্বয়ং মা কালী। ফলে হঠাত্‍ই তার ভয়ে গা হাত ঠান্ডা হয়ে যায়। ভীম ডাকাত বুঝতে পারে ইনি সাধারণ কোনও মহিলা নয়। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সারদা মাকে নিজের বাড়ি নিয়ে যান। এবং মাকে খাইয়ে পরম আদরে বিছানা পেতে দিয়েছিল মাটির দাওয়াতে। পরদিন ভোর হতেই ভীম নিজে মাকে পৌঁছে দেন দক্ষিণেশ্বর। এরপর বাড়ি ফিরে ওই তেলো-ভেলোর মাঠেই প্রতিষ্ঠা করলেন মাতৃমন্দির। এখনও মেয়ে রূপে এখানে কালীপুজো হয়। মায়ের নিত্য ভোগের সঙ্গে দেওয়া হয় মুড়ি, মুড়কি, চালভাজা। কারণ সে রাতে মা সারদাকে এই খাবারগুলোই মাকে খেতে দিয়েছিলেন ডাকাত সর্দার ভীম।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

গন ভাইফোঁটার পরিকল্পনা নিয়েছে বসিরহাটের ‘নবোদয় সংঘ’

বনগাঁ থানার এবারের কালীপুজোর থিম ‘ কৈলাস পর্বতে মহাদেব’

বাঁকুড়ার সাঁতরা বাড়ির “বড় বৌমা” পূজিত হলেন মা কালীর রূপে

নৈহাটির বড়মার পুজোয় ভক্তদের ভিড়

তারাপীঠে সারারাত খোলা থাকছে গর্ভ গৃহের দরজা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন উপবাস, নিজের হাতে রান্না করলেন ভোগ

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর