এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

বাংলায় প্রচলিত কালীমূর্তির অবতারণা এবং কৃষ্ণনন্দ আগমবাগীশ

নিজস্ব প্রতিনিধি: আমরা যে কালীমূর্তি প্রত্যেকে ঘরে বা বারোয়ারি মণ্ডপে পুজো করি সেটি আদি কালীর মূর্তি বা শাস্ত্র কল্পিত নয়। এক সময় অখণ্ড বঙ্গদেশে কালীপুজোর প্রচলন ছিল না। একমাত্র তান্ত্রিক ও কাপালিকরা মাতৃ আরাধনা করতেন। তাও কালীযন্ত্র এবং ঘটেই হল মাতৃ আরাধনা। কাপালিক ও তান্ত্রিকেরা শ্মশানে, বন-জঙ্গলে কিংবা নদীর চরে নির্জনে তন্ত্রমতে কালীপুজো করতেন এবং সাধনায় মগ্ন হতেন। তখন কালীযন্ত্রম তামার পাত্রে খোদাই করে কিংবা মরার খুলিতে রক্ত দিয়ে এঁকে তার ওপর কালী পূজা করা হতো। কিন্তু সেটা নিরাকার সাধনা।

কিন্তু এক মহান সাধক মনে মনে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন যে বাংলার ঘরে ঘরে কালীর আরাধনা হোক। তবে সাধারণ মানুষ তো আর নিকারার সাধনার মর্ম বোঝে না। তার জন্য দরকার কোনও মূর্তি। কিন্তু মা কালীর মঙ্গলময়ী মূর্তি কেমন হবে? ভাবনায় অস্থির হয়ে উঠলেন ওই কালী সাধক। তাঁর নাম কৃষ্ণনন্দ আগমবাগীশ। তাঁকে নিয়ে দুটি মত রয়েছে, একটি তিনি শ্রীচৈতণ্য সমসাময়িক অপরটি তিনি চৈতণ্য়ের মৃত্যুর ৭০ বছর পরে জন্মেছিলেন। কিন্তু সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেন তিনিই বঙ্গদেশে বর্তমান কালীমূর্তির অবতারণা করেছেন। এর পিছনে একটি মজার ঘটনা রয়েছে।

কৃষ্ণনন্দ আগমবাগীশ ছিলেন সপ্তদশ শতকের একজন উচ্চস্তরের তন্ত্রসাধক। তাঁর জন্ম নদিয়ার নবদ্বীপে সম্ভবত ১৬০০-১৬১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। তাঁর আসল নাম ছিল কৃষ্ণনন্দ ভট্টাচার্য্য, তবে তন্ত্র সাধনায় আগম পদ্ধতিতে সিদ্ধিলাভ করায় তিনি আগমবাগীশ উপাধী পান। বাংলায় শক্তিচর্চাও তখন বিক্ষিপ্ত ও অধোগামী। হাল ধরলেন তিনিই। আনুমানিক ১৭০টি তন্ত্রশাস্ত্র ও পুঁথি ঘেঁটে তিনি রচনা করলেন ‘তন্ত্রসার’। যা আজও বিভিন্ন পুজোর আধার হিসেবে গণ্য হয়। যাইহোক এবার আসল কথায় আসা যাক। আগেই বলেছি, এই মহা সাধক বাংলায় ঘরে ঘরে কালীপুজোর প্রচলনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

এরজন্য প্রয়োজন কালীর মৃণ্ময়ী মূর্তি। কিন্তু কালীর এই ভয়াবহ রূপের পুজো কী করবেন সাধারণ গৃহীরা? এই ভাবনায় বিভোর তিনি। এমন সময় তিনি মায়ের স্বপ্নাদেশ পান। পরের দিন সকালে উঠে যেই নারীকে প্রথম দর্শন করবেন তিনি, সেটি হবে তার ইষ্ট দেবীর মূর্তি। অর্থাৎ তাঁর আদলেই নির্মিত হবে কালীর মূর্তি। ব্যাস, সেই রাতে ঘুম উড়ে গেল কৃষ্ণনন্দের। পরদিন ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ছুটলেন গঙ্গাস্নানে। গায়ের আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে চলেছেন কৃষ্ণনন্দ আগমবাগীশ। কিন্তু কোথাও কারও দেখা নেই। অস্থির তাঁর মন, এমন সময় আচমকাই দেখলেন এক আদিবাসী গোপবধূকে।

কৃষ্ণবর্ণ ওই গ্রাম্যবধূ তখন তাঁর ঘরের বেড়ায় ঘুঁটে দিচ্ছেন। ওই বধূ তাঁর বাঁ হাতে গোবরের দলা, ডান পা দেওয়ালের গায়ে দিয়ে ডান হাত দিয়ে ঘুটে দিচ্ছে দেওয়ালের গায়ে। গায়ের রং কালো, শরীরে আলুথালু একটি ছোটো কাপড়, কপালভর্তি সিঁদুর, মাথায় ঘন কালো চুল হাঁটুঅব্দি ঝুলছে। কাজের খেয়ালে তাঁর গায়ের কাপড় কিছুটা সরে এসেছে বক্ষস্থান থেকে। ফলে শরীরের উপরিস্থল কার্যত বিবস্ত্র। ওই বধূকে দেখে কৃষ্ণানন্দ দাঁড়িয়ে পড়েন। তাঁর মনে পড়ে যায় রাতের স্বপ্নের কথা। তখন হঠাৎ সেই গায়ের বধূ পিছনে তাকিয়ে কৃষ্ণানন্দকে দেখে হতচকিত হয়ে যায়। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে স্বয়ং মহাপণ্ডিত কৃষ্ণনন্দ আগমবাগীশ। ফলে লজ্জায় সেই বধূ দাঁত দিয়ে জিভ কাটেন। সেই সময় কৃষ্ণনন্দ লক্ষ্য করেন ওই কৃষ্ণবর্ণ বধূর চোখদুটি ভীষণ উজ্জ্বল, মুখে চোখে বিন্দু বিন্দু ঘাম এবং কপাল সিঁদুরে মাখামাখি হয়ে গেছে।

কৃষ্ণনন্দ আগমবাগীশ সমস্ত কিছু ভুলে ওই বধূর মধ্যেই জগজ্জননী মাতৃরূপে দেখতে পেলেন মঙ্গলময়ী কালীকে। প্রথম ভাবনাতেই নির্মিত হল প্রথম কালীমূর্তি। পরে তাতে আরও কল্পনা মিশিয়ে আগমবাগীশ প্রথমবার কালীমূর্তির রূপ দান করলেন। ওই গ্রাম্য বধূর মতোই কালী কৃষ্ণবর্ণা, লম্বা কেশরাশি। গোবরের তাল ধরা বাম হাত যেন বরাভয় মুদ্রা এবং ডান হাতে গোবরের ছড়া দিয়ে ঘুটে দেওয়ার ভঙ্গিতেই বসিয়ে দিলেন খড়গ। এরপর তাঁর প্রচেষ্টা এবং আন্তরিকতায় সেই করালবদনা ভয়ংকরী রক্তলিপ্ত শ্মশানচারিণী দেবীকে মঙ্গলময়ী শান্ত দক্ষিণা কালী রূপে প্রতিষ্ঠা করলেন বাংলার ঘরে ঘরে।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

গন ভাইফোঁটার পরিকল্পনা নিয়েছে বসিরহাটের ‘নবোদয় সংঘ’

বনগাঁ থানার এবারের কালীপুজোর থিম ‘ কৈলাস পর্বতে মহাদেব’

বাঁকুড়ার সাঁতরা বাড়ির “বড় বৌমা” পূজিত হলেন মা কালীর রূপে

নৈহাটির বড়মার পুজোয় ভক্তদের ভিড়

তারাপীঠে সারারাত খোলা থাকছে গর্ভ গৃহের দরজা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন উপবাস, নিজের হাতে রান্না করলেন ভোগ

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর